বিক্ষিপ্ত হিংসায় হত তিন
শাহবাগ প্রাঙ্গণের চেতনায় চুরমার জামাতের হরতাল
শাহবাগ স্কোয়ারের আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলবাদী জামাতে ইসলামির ডাকা হরতাল কার্যত ব্যর্থ করে দিলেন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ। হরতালকারীদের ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর হুমকি উপেক্ষা করে রাস্তায় বাস ও অন্য যানবাহন চলেছে। ব্যাঙ্ক ও অফিস-আদালতে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শেয়ারবাজারে লেনদেনও হয়েছে আর পাঁচ দিনের মতোই। বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজ, এমনকী সমস্ত প্রাথমিক স্কুলও এ দিন খোলা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শান্তিতে পরীক্ষা দিয়ে শাহবাগ স্কোয়ারে এসে জড়ো হন।
এর মধ্যেই কাল সংসদে পাশ হওয়া ‘যুদ্ধাপরাধ আইন সংশোধনী বিল’টিতে এ দিন সই করেছেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। গেজেট নোটিফিকেশনের পরেই আইনটি কার্যকর হবে। জনজোয়ারের দাবি মেনে সরকার এই সংশোধনী আনায় কোনও ব্যক্তির পাশাপাশি জামাতে ইসলামির মতো দল এবং তাদের বিভিন্ন সংগঠনকেও মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার জন্য কাঠগড়ায় তোলা যাবে। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেছেন, “এর পর জামাতকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি শুধু ঘোষণার অপেক্ষা।”
শাহবাগের ‘স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বর’ থেকে কাল জামাতের হরতাল ব্যর্থ করার ডাক দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘পাড়ায় পাড়ায় ব্রিগেড গড়ুন, জামাত-দুষ্কৃতীদের প্রতিরোধ করুন’।
নতুন প্রজন্ম
শাহবাগের স্বাধীনতা প্রজন্ম চত্বরে গণবিক্ষোভে সামিল এই খুদেও।
ঢাকায় সোমবার ছবিটি তুলেছেন উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী।
অন্যান্য হরতালে জামাত এবং তার ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের কর্মীরা সকাল থেকেই দোকানপাটে হামলা চালিয়ে, বাস-গাড়ি ভাঙচুর করে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। এ দিনও সকালে তারা বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঝটিকা হামলা শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশ ও মানুষের প্রতিরোধে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়ে যায়। সে সময়েই জামাতের কর্মীরা আগুন লাগানোর জন্য একটি বাসকে তাড়া করলে সেটি উল্টে যায়। তার নীচে চাপা পড়ে এক জন মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাও মানুষের জেদকে ভাঙতে পারেনি।
রাস্তায় লোকজন কিছুটা কম থাকলেও জনজীবন প্রায় স্বাভাবিকই ছিল। এই প্রথম হরতাল অমান্য করে সমস্ত স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। অন্যান্য ব্যাঙ্কের পাশাপাশি জামাতে ইসলামির ‘নিজস্ব ব্যাঙ্ক’ হিসেবে পরিচিত ইসলামি ব্যাঙ্কেও একেবারে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তা থেকে জামাত কর্মীরাও উধাও হয়ে যান। হরতাল ভাঙার ডাক দিয়ে বড় বড় মিছিল বার হয় ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায়।
অন্যান্য শহরগুলির ছবিও মোটামুটি একই ছিল। সকালে জামাত কর্মীরা হামলা চালিয়ে সুবিধা করতে না পেরে দমে যায়। কোথাও কোথাও যানবাহনে আগুন লাগালেও দুপুরের পর থেকে বেপাত্তা হয়ে যায় তারা। দূরপাল্লার বাসও চলতে শুরু করে। কুমিল্লায় জামাত কর্মীরা হামলা চালালে পুলিশও গুলি চালায়। এক জামাত কর্মী নিহত হন। কক্সবাজারে জামাত কর্মীরা একটি অ্যাম্বুল্যান্সে ভাঙচুর করলে এক রোগী মারা যান। চট্টগ্রাম শহরেও মানুষ রাস্তায় নেমে হরতাল ব্যর্থ করেছেন। একেবারে স্বাভাবিক ছিল বন্দরের কাজকর্ম।
শাহবাগের চত্বরে এ দিন সকালে জাতীয় পতাকা তুলে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। অন্য দিনের চেয়ে আজ ভিড় ছিল অনেকটাই বেশি। হরতালের ঘোষণা হওয়ায় রাত থেকেই বহু মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন প্রজন্ম চত্বরে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরও বাড়ে। দুপুরে একটি অনুষ্ঠানে সম্মান জানানো হয় কবীর সুমনকে। প্রজন্ম চত্বরের যুববিক্ষোভ নিয়ে এ পর্যন্ত তিনটি গান বেঁধে পাঠিয়েছেন তিনি। সুমনের অন্য গানও লাউডস্পিকারে বাজানো হয়।
সন্ধ্যায় এ দিন জামাতের আক্রমণে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। যুদ্ধাপরাধ আইনে সংশোধনী আনার জন্য ধন্যবাদও জানানো হয় সরকারকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.