তিস্তা জট ছাড়াতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে খুব শীঘ্রই আলোচনায় বসতে চলেছেন বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ। তিনি বলেন, “খুব শীঘ্রই আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। শুধু মাত্র তিস্তা বা সীমান্ত চুক্তি নয়, সামগ্রিক ভাবে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও কথা বলব। আলোচনা হবে অন্যান্য সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়েও। মুখ্যমন্ত্রী যে বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবেন, সে সব ব্যাপারেও আমি কথা বলতে প্রস্তুত।”
সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লিতে আসছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে কথা মনে করিয়ে সলমনকে প্রশ্ন করা হয়, তা হলে কি সেপ্টেম্বরেই তিস্তা চুক্তি সই হবে? ঢাকা থেকে বিশেষ বিমানে দিল্লি ফেরার পথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সলমন এই প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আগাম একটি সময়সীমা বেঁধে দেওয়া আমাদের লক্ষ্য নয়। দু’দেশই চাইছে দ্রুত এই চুক্তিকে বাস্তবায়িত করতে।” তা হলে কি মমতার সম্মতি ছাড়াই তিস্তা চুক্তি করে ফেলা হবে? এই প্রশ্নে সলমনের জবাব, “সম্মতি একটা ছোট শব্দ। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়। মমতার উদ্বেগকে আমরা সম্মান দিই। এবং আমরা তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি নিয়ে যা করেছি, তার সবটাই তাঁকে জানিয়ে করেছি। তাঁর উদ্বেগের জায়গাগুলিকে আমরা মর্যাদা দিয়ে আলোচনা করে সেগুলির নিষ্পত্তি করতেও আগ্রহী।” সীমান্ত চুক্তি নিয়েও মমতার আপত্তি রয়েছে। এ ব্যাপারে সলমনের জবাব, “কাগজে-কলমে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সব দিক খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে সম্মতি জানিয়ে আগেই চিঠি দিয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আমি যখন সর্বদলীয় বৈঠক করি, তখন মমতা সেই বৈঠকে তাঁর দলের সাংসদদের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা যে ভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন, তাতে আমি সন্তুষ্ট। তৃণমূলের মনোনীত একজন সাংসদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।” তাঁর মন্তব্য, “প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর স্বপ্ন ছিল বিষয়টি নিয়ে বিবাদের নিষ্পত্তি হোক। মমতা নিজেও ইন্দিরার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশ ভাগের পর থেকে সীমান্ত নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, তার নিরসন হলে উনি খুশিই হবেন।”
সীমান্ত চুক্তি নিয়ে অবশ্য ঘোর আপত্তি জানিয়েছে অসম রাজ্য বিজেপিও। এই অবস্থায় বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিলটিকে কী ভাবে সমর্থন জানাবেন? বিদেশমন্ত্রীর জবাব, “বিজেপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন সীমান্ত বিতর্ক নিরসনের প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। সে সময়ে এই সংক্রান্ত একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী গঠন করা হয়। তার সুপারিশের ভিত্তিতে সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ইন্দিরা গাঁধীর স্বপ্ন অটলবিহারী বাজপেয়ীর সরকার বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় হয়। তখন বিজেপির সেই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেস। আশা করি, এখন বিজেপি কংগ্রেসের উদ্যোগকে সমর্থন জানাবে।” একই সঙ্গে অসম রাজ্য বিজেপির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অস্বস্তিতে ফেলতে নারাজ সলমন। তাঁর কথায়, “বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁদের রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি বোঝাতে সক্ষম হবেন। এ ব্যাপারে লোকসানের চেয়ে কূটনৈতিক লাভ অনেক বেশি।”
মমতা ও তাঁর দল কেন্দ্র কথা কংগ্রেস-বিরোধিতার সুর চড়ালেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাই করেছেন বিদেশমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “মমতা অত্যন্ত জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ওঁকে দীর্ঘ দিন ধরে চিনি। সিপিএমের মতো সংগঠিত একটি দলকে সরিয়ে বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া সাধারণ ব্যাপার নয়।” তিস্তা-সহ নানা বিষয়ে মমতার যে ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে, তা উড়িয়ে সলমন বলেন, “মমতার সম্বন্ধে একটি ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে তিনি বাংলাদেশ বিরোধী। কিন্তু উনি আসলে বাংলাদেশের অত্যন্ত ভাল বন্ধু। তিনি তাঁর রাজ্যের, বিশেষত উত্তরবঙ্গের জল সঙ্কটের আশঙ্কায় কিছু বক্তব্য পেশ করেছিলেন। আমি মমতার সমর্থন চাই। আশা করি, আলোচনার মাধ্যমে তাঁকে বোঝাতে পারব যে পশ্চিমবঙ্গের এক চুলও ক্ষতি না করে ওই চুক্তিকে বাস্তবে রূপ দেওয়া যেতে পারে। মমতার সম্মতি একটি ছোট বিষয়। কিন্তু তার সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে সঙ্গে নিয়েই আমরা এগোতে চাই। তাঁকে বাদ দিয়ে নয়।”
এই প্রসঙ্গেই উঠেছে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গও। সলমন বলেন, “নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা চাই না, উগ্রপন্থী শক্তি বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহার করে ভারতের নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করুক। পশ্চিমবঙ্গ এমন একটি রাজ্য, যার বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সবথেকে বেশি। আমি জানি, মমতা বোঝেন যে, বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের জন্যই আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্য বাংলাদেশের সাহায্য প্রয়োজন।” প্রয়োজনে মমতার সঙ্গে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে কলকাতাতেও যাবেন বলে জানিয়েছেন খুরশিদ। |