পিজিতে স্কিন ব্যাঙ্ক
নির্দেশিকা মিলতেই দেড় বছর পার
স্বাস্থ্য ভবন থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের দূরত্বটুকু মেটাতে সময় লেগেছিল ৭ বছর। আর এসএসকেএমের প্রশাসনিক ভবন থেকে বিভিন্ন দফতরের বিভাগীয় প্রধানদের কাছে সেই বার্তা পৌঁছতে লাগল দেড় বছর। আঠারো মাসে বছরের প্রবাদকে আক্ষরিক অর্থে সত্যি প্রমাণ করেই সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালে চালু হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের প্রথম স্কিন ব্যাঙ্ক, পুড়ে যাওয়া রোগীদের নতুন জীবন দেওয়ার ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বেই যে ব্যাঙ্কের গুরুত্ব অপরিসীম। এ রাজ্যে সরকারি তরফে ছাড়পত্র পাওয়ার পরেও এই বিলম্ব কেন, তার কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য মেলেনি।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা জানান, এত বড় পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বহু নিয়মকানুনের বেড়া পেরোতে হয়। তাই দেরি হয়েছে। আর এসএসকেএমের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেছেন, “এত দেরি কোনও ভাবেই হওয়ার কথা নয়। পরিকাঠামোর ব্যবস্থা তো রয়েছে। কেন দেরি হল, তা অনুসন্ধান করে দেখা হবে।”
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, বহু বছরের আন্দোলনের পরে চক্ষু দান বা সামগ্রিক ভাবে দেহদানের বিষয়টিকে খানিকটা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু দেহ থেকে ত্বক সংগ্রহের ব্যাপারে এখনও বেশির ভাগ মানুষই ওয়াকিবহাল নন। তাই মৃতের পরিজনদের কাউন্সেলিংয়ের পর্বটি এ ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসএসকেএমের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসকের কথায়, “অনেকটা পথ পেরোলে তবে খানিকটা সাফল্যের মুখ দেখা সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শুরুটাই এত দেরিতে হচ্ছে যে সুফল পেতে রোগীদের অনেকটা সময় লেগে যাবে। বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের আগে এর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে, যাতে তাঁরা মৃতের পরিবারকে বোঝাতে পারেন।” পিজি সূত্রের খবর, প্রশাসনিক ভবন থেকে বিষয়টি জানিয়ে নির্দেশিকা জারি হলেও বহু বিভাগের প্রধান এখনও তা ভাল ভাবে পড়েও দেখেননি। ফলে স্কিন ব্যাঙ্কের প্রথম দাতার সন্ধান কবে মিলবে, সে নিয়ে সকলেই ধন্দে রয়েছেন।
আপাতত এই ব্যাঙ্কে শুধু পিজি-তে মৃত্যু হওয়া রোগীদের চামড়াই নেওয়া হবে। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক বিজয় মজুমদার বলেন, “দিনে গড়ে এই হাসপাতালে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে কয়েক জনের পরিবারও যদি মৃতের ত্বক দানে আগ্রহী হয়, তা হলে আমাদের চাহিদা খানিকটা মিটবে। আমরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে সব বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলব। এই ব্যাঙ্ক চালু হলে বহু রোগীকে আমরা বাঁচাতে পারব বলে আশাবাদী। অল্পবয়সী রোগীদের চেহারার বিকৃতির হাত থেকেও বাঁচানো সম্ভব হবে।”
গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত স্কিন ব্যাঙ্ক মাত্র পাঁচটি। সেগুলি মুম্বই, পুণে এবং চেন্নাইয়ে। চিকিৎসকেরা জানান, যে ভাবে মরণোত্তর চক্ষু দান হয়, ঠিক সে ভাবেই ত্বক দানের ব্যবস্থা থাকে এই ব্যাঙ্কে। মৃত্যুর পরে দেহ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে তা রাখার ব্যবস্থা হয়। পরবর্তী সময়ে ওই সংরক্ষিত চামড়া রোগীদের দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।
২০০৪-এর এপ্রিলে পিজি-র প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ থেকে প্রস্তাব জমা পড়েছিল স্বাস্থ্য ভবনে। ২০১১ সালে তা অনুমোদন করে চিঠি দেন স্বাস্থ্যকর্তারা। ৭ বছরে একটা জট কাটলেও পরবর্তী জট কাটতে সময় লাগে আরও দেড় বছর। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের চৌহদ্দি পেরিয়ে গত সপ্তাহে ওই স্কিন ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত নির্দেশিকা বিভিন্ন বিভাগে পৌঁছেছে।
এখন কী ভাবে চিকিৎসা হয়? প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, পোড়ার পরিমাণ ৪০ শতাংশের বেশি হলে তবেই চামড়া প্রতিস্থাপনের কথা ভাবা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মায়ের শরীর থেকে চামড়া কেটে লাগানো হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দেহের স্বাভাবিক অংশ থেকে চামড়া সংগ্রহ করে পোড়া জায়গায় বসানোও হয় আকছার। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। সেই কারণেই স্কিন ব্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে আসে।
তবে বিভাগীয় চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবন থেকে একটা নির্দেশ জারি হতে যদি দেড় বছর লেগে যায়, তা হলে সেই প্রকল্পের সাফল্য নিয়েও যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.