টানা ১৭ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করে ৫৩ বছরের এক মহিলার ছ’টি অঙ্গের সফল প্রতিস্থাপন করলেন চার চিকিৎসক।
১৯ বছর বয়স থেকেই ‘ক্রন্স ডিজিসে’ আক্রান্ত ছিলেন ডন কার্টার। লিভারের এই রোগের জন্য ২৯ বছর বয়সে এক বার অস্ত্রোপচারও হয়েছিল তাঁর। তাতে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি তিনি। তাই তার পরেও বেশ কয়েক বার অস্ত্রোপচার হয় পেশায় নার্স ডনের। তাঁর অন্ত্রের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাদ যায়। এর পরে শুধুমাত্র তরল খাবার খেয়েই থাকতে হতো তাঁকে।
পরের ২১ বছর এ ভাবেই কাটিয়েছিলেন ডন কার্টার। চাকরি করেছেন নর্থ ইয়র্কশায়ারের একটি হাসপাতালে। গাড়ির রেস দেখতে ভালবাসেন। তাই স্বামী মার্টিনের সঙ্গে আমেরিকার নানা জায়গায় ঘুরে ফর্মুলা ওয়ানের রেস দেখেছেন। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল বেশ। কিন্তু ফের অসুস্থ হয়ে পড়লেন ২০১১ সালে।
এ বার চিকিৎসক জানালেন, টানা ২১ বছর ধরে শুধু তরল খাবার সহ্য করতে পারছে না শরীর। এর জন্য ফের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ডনের লিভার। এতটাই যে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পষ্ট জানান চিকিৎসক, আর মাত্র ছ’মাস আয়ু রয়েছে ডনের। বাঁচার একমাত্র রাস্তা অঙ্গ প্রতিস্থাপন। তবে শুধু লিভার নয়, আরও বেশ কয়েকটি অঙ্গ প্রতিস্থাপন না করলে বাঁচানো অসম্ভব হবে ডনকে।
মার্টিন এখনও বিশ্বাস করেন, ইচ্ছাশক্তিই বাঁচিয়ে তুলেছে তাঁর স্ত্রীকে। বললেন, “মাত্র ছ’মাস বাঁচবে শোনার পরেও ভেঙে পড়েনি ডন। বরং সব সময় বলত, অঙ্গগুলির দাতা পাওয়া যাবেই।”
ইচ্ছাশক্তির কাছেই হার মানতে বাধ্য হয়েছিল মৃত্যু। কয়েক দিনের মধ্যেই চিকিৎসক জানান, ২০ বছরের এক তরুণী মরণাপন্ন। মৃত্যুর পর লিভার, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র, বৃহদন্ত্র, পাকস্থলী, কিডনি দান করতে চায় সে।
মৃতের শরীর থেকে বের করে আনার ছ’ঘণ্টার মধ্যে প্রতিস্থাপন না করলে সেগুলি আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। তাই যে দিন সকালে ওই দাতার মৃত্যু হয়, সে দিনই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয় ডনের। টানা ১৭ ঘণ্টা অস্ত্রোপচার করেন চার জন চিকিৎসক। প্রথমে ডনের দেহ থেকে কেটে বের করে নেওয়া হয় তাঁর লিভার, ক্ষুদ্রান্ত্র, অগ্ন্যাশয়, বৃহদন্ত্র, পাকস্থলী এবং কিডনি। তার পরে দাতার অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপন করা হয় তাঁর দেহে। এই নিয়ে তৃতীয় বার একই সঙ্গে ছ’টি অঙ্গের সফল প্রতিস্থাপন করলেন ব্রিটেনের চিকিৎসকেরা।
এর পর ন’সপ্তাহ কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রে রাখা হয়েছিল তাঁকে। এই সময়ে আরও ১২ বার অস্ত্রোপচার করা হয় তাঁর শরীরে। ন’সপ্তাহ পর যখন ডনের জ্ঞান ফেরে তখন পাকস্থলীতে টিউব ঢুকিয়ে খাওয়ানো হতো তাঁকে।
সেই সময় নিজের অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে ডন বললেন, “হাত-পায়ের আঙুলগুলো ফুলে কলাগাছের মতো হয়ে গিয়েছিল। এত যন্ত্রণা হত যে হাত-পা নাড়াতেই পারতাম না।” এর কয়েক মাস পরে হাঁটতে শুরু করেন ডন। অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হতে এত সময় লাগবে তা ভাবেনি তাঁর পরিবার। মা ডরোথি কান্নাকাটি করতেন। ডন বললেন, “সব চুল-নখ পড়ে গিয়েছিল। তাই পরচুল পড়তাম।”
পাশাপাশি কিছু খেলেই শুরু হতো অস্বস্তি। এই সব জটিলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পাঁচ মাস সময় লেগেছিল ডনের। এখনও সব মিলিয়ে দিনে ১৮টা ওষুধ খান তিনি।
এখন সুস্থ ডন। ফের হাসপাতালের কাজে যোগ দিয়েছেন। বাড়িতে রয়েছে তিনটি স্প্যানিয়েল। বনি, স্কাই এবং জেক। রোজ সকালে তাদের নিয়ে হাঁটতেও যান। এদের দেখাশোনা করার জন্যেই বেঁচে রয়েছেন, এই কথা মন থেকে বিশ্বাস করেন ডন। আর ধন্যবাদ দেন সেই তরুণীকে, যার অঙ্গগুলি তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছে। |