আগের বনধে রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্মী ভোর ৪টেয় উঠে ট্রেন ধরে মহাকরণে হাজির হয়ে দায়বদ্ধতার প্রমাণ রেখেছিলেন। এটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরে ২০ ফেব্রুয়ারি, বুধবার বামপন্থীদের ডাকা বনধে দায়বদ্ধতার প্রমাণ দিতে দোকানপাট খোলা রাখার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে আহ্বান জানালেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। রবিবার ব্যবসায়ীদের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, “বনধে দোকানপাট খোলা রাখুন। দোকানপাট খোলা দেখলে সাধারণ মানুষও বন্ধের বিরোধিতা করতে সাহস পাবেন।”
ক্ষমতায় এসেই বনধ-ধর্মঘটের বিরোধিতায় তাঁর সরকারের দায়বদ্ধতার কথা ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অর্থমন্ত্রী অমিতবাবু এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, বনধে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে নতুন সরকার রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি পরিবর্তনে উদ্যোগী হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও সেই উদ্যোগে সামিল না-হলে এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব না-দিলে বনধের দিনটা রাজ্যের পক্ষে বেদনাদায়ক দিন হিসেবেই চিহ্নিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর কথায়, “গত ৩৪ বছরে রাজ্যে কর্মসংস্কৃতি খতম হয়ে গিয়েছিল। আপনারাই (ব্যবসায়ীরাই) ঘেরাও হয়ে থাকতেন। আমরা কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে চাই। তাতে আপনাদেরই সুবিধা হবে।”
আগের বনধের প্রসঙ্গ টেনে অর্থমন্ত্রী জানান, এমনিতে অর্থ দফতরে কর্র্মী-অফিসারদের হাজিরার হার থাকে ৮০-৮৫%। গত বন্ধের দিন ওই দফতরে প্রায় ৯৪% কর্মী-অফিসার উপস্থিত ছিলেন। এটাকে দায়বদ্ধতার প্রমাণ বলে উল্লেখ করে অমিতবাবু বলেন, ব্যবসায়ীরাও দায়বদ্ধ হোন। বনধ হলে ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতিই যে সব থেকে বেশি, পরিসংখ্যান দিয়ে তা বোঝানোর চেষ্টা করেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বনধে এক দিনে রাজ্যে ১৫০৭ কোটি টাকা ক্ষতি হয়। দু’দিন বনধে হলে ক্ষতি বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সর্বশক্তি দিয়ে বনধের বিরোধিতা করব। আপনারা আমাদের সাহায্য করুন।” ২০১০ সালে এ রাজ্যে পাঁচ লক্ষ ৬৯ হাজার ৮৯২টি দোকান ছিল। এখন সেই সংখ্যা আরও বেড়েছে। তার মধ্যে যদি ৭০% দোকানও খোলা থাকে, তা হলে এ রাজ্যে কোনও বন্ধই হবে না বলে মন্তব্য করেন অমিতবাবু।
সম্প্রতি বনধ সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট মন্তব্য করেছে, হাইকোর্টের নির্দেশে কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা যায় না। বিষয়টা অন্তর থেকে আসতে হয়। সেই সূত্র ধরে অর্থমন্ত্রী এ দিন ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, “যতটা সহজে একটা যন্ত্র বসানো যায় বা বাড়ি বানানো যায়, মানসিকতার পরিবর্তন ততটা সহজে করা যায় না।” তাঁর মতে, নিজেদের কাজ অব্যাহত রেখে (ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে দোকানপাট খোলা রেখে) বন্ধের মোকাবিলা করা যায়।
বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন অর্থমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়েছে। কনফেডারেশন অফ ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজ আলি সম্মেলনের পরে জানান, তাঁরাও বনধের বিরোধী। কারণ বনধে সার্বিক ভাবে আর্থিক ক্ষতি হয়।
অর্থমন্ত্রীর আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানান, ওই দিন ব্যবসা চালু রাখার ব্যাপারে তাঁরা শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবেন। বনধে যোগ না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফোরাম অফ ট্রেড অর্গানাইজেশন নামে ব্যবসায়ীদের অন্য একটি সংগঠন। শুধু তা-ই নয়, বনধের বিরোধিতায় ওই সংগঠন আজ, সোমবার কলকাতায় মিছিলও করবে বলে জানিয়েছে। |