মাঘের শেষে বর্ষণ হলে রাজা ভাগ্যবান আর তাঁর দেশের প্রজারা পুণ্যবান। কিন্তু ফাল্গুনের শুরুতে বর্ষণ হলে কী হয়সে কথা বলেননি খনা। তবে এ বারের অকাল বর্ষণে চাষিরা নিজেদের মোটেই ভাগ্যবান বলে মনে করছেন না। বরং আলু, সরষে, পেঁয়াজ, মুসুরি নিয়ে রীতিমত চিন্তায় চাষিরা।
কৃষি বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, দেড় দিন ধরে চলা অকাল বর্ষণে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাঠের শাকসব্জি-সহ বিভিন্ন ফসল। কেবল মাত্র আম ছাড়া প্রায় সব চাষেই প্রভাব পড়তে পারে। চাষি থেকে কৃষি বিজ্ঞানী, সরকারি আধিকারিক সকলেরই নজর রয়েছে আবহাওয়ার দিকে।
নদিয়া-বর্ধমানের চাষিরা জানাচ্ছেন, এই সময়ে মুসুরি এবং সরষে উঠছে। যদি ফসলে জল পড়ে, তা হলে তার রং নষ্ট হয়ে যাবে। তখন বাজারে দাম পাওয়া যাবে না। বর্ধমানের সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “আম আর ধানের জন্য বৃষ্টি ভাল। এ ছাড়া আর কোনও ফসলের বিশেষ সুবিধা হবে না এতে। উল্টে যে সব খেতে সরষে বা মুসুরি উঠছে তাদের পক্ষে খারাপ।” প্রাক্তন কৃষি আধিকারিক নিশীথ দে বলেন, “পেঁয়াজ এবং আলু চাষিরা একেবারেই ঠিক দাম পাবেন না। জলদি জাতের পেঁয়াজ-আলুর গাছ তৈরি। কিন্তু বৃষ্টিতে তা পচে যাবে এবং দাম কমবে হু-হু করে।”
মাঠে ছড়ানো মরসুমি সব্জিতেও বৃষ্টিতে পচন ধরবে। তাতে বাজারে সব্জির দর চড়লেও চাষিদের আখেরে লাভ হয় না। বিরূপ আবহাওয়ায় বাড়বে রোগের আক্রমণ। পার্থবাবু বলেন, “আলুতে ধসা রোগ আগেই দেখা দিয়েছিল। সেই রোগ আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও আলু গাছে পচা রোগেরও সম্ভাবনা রয়েছে। স্যাঁতসেতে আবহাওয়ায় জীবাণুর সংক্রমণ বাড়বে। রোদ না ওঠা পর্যন্ত সে ভাবে কোনও ওষুধও প্রয়োগ করা যাবে না।” বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শস্যবিজ্ঞানের অধ্যাপক তপনকুমার মাইতি বলেন, “অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। তা চাষের পক্ষে যথেষ্ট উদ্বেগজনক। মাঠে ফসল থাকলে যদি বৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রে ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব নয়। বৃষ্টি থামলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
এদিকে বৃষ্টিতে পর্যটন ব্যবসাও লাটে উঠেছে। হোটেল ব্যবসায়ীদের কথায়, সরস্বতী পুজোর জন্য শুক্রবার এমনিতেই নবদ্বীপ-মায়াপুরে পর্যটকদের দেখা মেলেনি। আশা ছিল শনি ও রবিবারের ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। কিন্তু অকাল বর্ষণ সেই আশাতেই জল ঢেলে দিল। |