প্রণয়ী-সহ ধৃত তরুণী
মেয়ের দুই হাত ভেঙে বালি চাপা দিল মা
বাবা তাকে রাখতে চায় না। আর মায়ের প্রেমিক তাকে মেনে নিতে রাজি নয়। দেড় বছরের মেয়েকে তাই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মা। গ্রামবাসীদের তৎপরতায় শিশুকন্যাটি প্রাণে বেঁচেছে।
কিন্তু, কতটা নৃশংস হতে পারে সেই সরিয়ে দেওয়ার পদ্ধতিতরুণী বধূ লছমি মুন্ডার কাণ্ড দেখে আপাতত সেই আলোচনাতেই ব্যস্ত ঝাড়গ্রামের বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি এলাকার বাসিন্দারা। দেড় বছরের মেয়ে শর্মিলির হাত ভেঙে, মাথায় আঘাত করেও ক্ষান্ত হয়নি লছমি। সংজ্ঞাহীন মেয়েকে নদীর চরে ফেলে কোমর পর্যন্ত বালিচাপা দিয়ে দেয় ওই তরুণী। চারপাশে ছড়িয়ে দেয় বিস্কুট। যাতে, বিস্কুটের টানে এসে বাচ্চাটিকে ছিঁড়ে খাবে কুকুরের দল!
লছমির পরিকল্পনা আংশিক সফল। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পর রবিবার দুপুরে শর্মিলিকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যায় তাকে পাঠানো হয় কলকাতায়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ভারী কোনও জিনিস দিয়ে মাথায় আঘাতের কারণে শিশুটির মস্তিষ্কে আভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়েছে। তার কচি দু’টো হাতের একাধিক হাড় স্রেফ মুচড়ে ভেঙে দিয়েছে তার মা।
দিল্লির সেই দু’বছরের শিশু ফলকের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে? যার সারা শরীর পিটিয়ে টুকরো টুকরো করে দেওয়া হয়েছিল! আঁচড়ে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল তার শরীরের নরম চামড়া। এইমসে অনেক দিন মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করার পরে বাঁচেনি ‘বেবি ফলক’। গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া গত বছর মার্চের সেই ঘটনায় অবশ্য মূল অভিযুক্ত ছিল বছর পনেরোর যে কিশোরী, সে নিজেকে শিশুটির মা বলেই দাবি করেছিল। যদিও পরে জানা যায়, বাচ্চাটির মা অন্য কেউ। প্রেমিকের হাতে অত্যাচারিত হয়ে ওই কিশোরী এমন সাংঘাতিক কাণ্ড ঘটিয়েছিল। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল ইন্দৌরেও। সেখানে প্রেমিকার সন্তান, দেড় বছরের শিরিনের সারা গা সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল প্রেমিক ওয়াহিদ। শিশুটির দু’হাতও ভেঙে দেয় ওই যুবক।
ঝাড়গ্রাম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শর্মিলি। —নিজস্ব চিত্র
লছমির অপরাধ কোনও অংশে কম নয়। যা দেখে শিউরে উঠছেন পুলিশকর্তারাও। লছমি ও তার প্রেমিক রফিকুল শেখকে গ্রেফতার করার পরে রবিবার সন্ধ্যায় ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে বলেই ফেললেন, “জঘন্য অপরাধ। ভাবতে পারছি না!” তাঁর দাবি, “রীতিমতো পরিকল্পনা করে ঠান্ডা মাথায় ছোট্ট শর্মিলিকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল লছমি। ঘটনাস্থলে না থাকলেও লছমির এই কাজে তার প্রেমিক রফিকুলের মদত ছিল।” পুলিশের দাবি, জেরার মুখে লছমি তাদের কাছে সমস্ত ঘটনা স্বীকার করেছে।
এমন ঘটনা ঘটানোর পরেও অনুতাপের লেশপাত্র নেই লছমির মনে। সংবাদমাধ্যমের সামনে লছমি বলে, “শর্মিলির বাবা ওকে নিতে চায়নি। আর রফিকুল আমার মেয়েকে মেনে নিচ্ছিল না। এ ছাড়া উপায় ছিল না।” পাশে তখন নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে রফিকুল।
কোন মানসিক অবস্থায় এক জন মা এমন করতে পারেন? মনস্তাত্ত্বিক মোহিত রণদীপের ব্যাখ্যা, “এ ক্ষেত্রে প্রেম আর শুধু সম্পর্ক ছিল না, ‘অবসেশন’-এর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মহিলার জীবনে মানসিক চাপ বাড়ানোর মতো অনেক ঘটনা ঘটেছে। ওই পরিস্থিতি থেকে সে মরিয়া ভাবে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। সেখান থেকেই হয়তো এই হিংস্রতা। যা থেকে মনে হয়, ওর মানসিক ভারসাম্যহীনতা ছিল।”
বছর তেইশের লছমির বাপের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের নোয়ামুণ্ডিতে। বিয়ে হয়েছিল ওড়িশার বড়াবিলের দিনমজুর গুড়া মুন্ডার সঙ্গে। কাজের সূত্রে কয়েক মাস আগে বড়বিলে গিয়েছিলেন পেশায় রাজমিস্ত্রি বছর একুশের রফিকুল। রফিকুলের বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালগোলায় নতুনদিহা গ্রামে। লছমি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করত। কাজের সূত্রে দু’জনের পরিচয় ও প্রেম। মাস দেড়েক আগে স্বামীর ঘর ছেড়ে আসে লছমি। বড় মেয়ে চার বছরের পুনমকে মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। আর ছোট্ট শর্মিলিকে নিয়ে আসে নিজের সঙ্গে। বেলিয়াবেড়ার পেটবিন্ধি গ্রামে মাস দেড়েক হল বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে রফিকুল, লছমি ও শর্মিলি। পুলিশ জেনেছে, প্রথম থেকেই শর্মিলিকে মেনে নিতে পারেনি রফিকুল।
রবিবার শর্মিলিকে কোলে নিয়ে লছমিকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখেন গ্রামবাসীরা। কিছুক্ষণ পরে লছমি একা ফিরে আসে। এর পরেই সুবর্ণরেখা নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কিছু গ্রামবাসী অর্ধেক বালিচাপা অবস্থায় শর্মিলিকে দেখতে পেয়ে বেলিয়াবেড়া থানায় খবর দেন। বেলিয়াবেড়া থানার ওসি জয়ন্ত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশ গিয়ে শর্মিলিকে উদ্ধার করে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.