‘সিআরসেভেনে’র তিনশো হয়েছিল আগে। এ বার ‘এলএমটেন’-এরও হল।
এবং আবার ফিরে এল সেই চেনা বিতর্ক কে সেরা? লিওনেল মেসি, নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো?
রোনাল্ডোর মতো ক্লাব ফুটবলে মেসিরও রবিবার তিনশো গোল হয়ে গেল। তবে শুধুই বার্সেলোনার হয়ে। গ্রানাডার বিরুদ্ধে ২-১ জেতার পর ক্লাব ফুটবলে আর্জেন্তিনীয় মহাতারকার গোলসংখ্যা ৩০১। সঙ্গে আরও একটা রেকর্ড গড়ে ফেললেন। বার্সার হয়ে পরপর চোদ্দোটা ম্যাচে গোল করার নজির সৃষ্টি করে ফেললেন তিনি।
কিন্তু তাতেও সর্বসম্মত ভাবে সেরার মুকুট উঠছে কোথায়? |
বরং ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে রোনাল্ডোর গোল দেখে জ্লাটান ইব্রোহিমোভিচ এতটাই মুগ্ধ যে বলে ফেলেছেন, “রোনাল্ডোর মতো হেডে গোল করতে হলে মেসিকে মই নিয়ে আসতে হবে!”
শুধু ইব্রাহিমোভিচ নন, ফুটবল-দুনিয়া ইতিমধ্যেই যাঁকে ‘নতুন রোনাল্ডো’ বলতে শুরু করেছে টটেনহ্যামের সেই গ্যারেথ বেলও বলে দিচ্ছেন, “ব্যক্তিগত ভাবে রোনাল্ডোকেই আমার বেশি পছন্দ। প্যাকেজ বলতে যা বোঝায় রোনাল্ডো তাই।” সঙ্গে বেল আরও যোগ করেছেন, “রোনাল্ডো প্রচণ্ড শক্তিশালী, দুর্দান্ত গতিও আছে। তা ছাড়া ওর হেড যেমন ভাল, শটও তেমন। মেসির খুঁত বার করা যাবে না ঠিক কথা। মেসিও দুর্দান্ত। কিন্তু কমপ্লিট ফুটবলার বলতে যা বোঝায় রোনাল্ডো তাই।” |
তবে এই তর্কের মধ্যে উঠে পড়েছে নতুন জল্পনা। লিওনেল মেসি কোথায় খেলা শেষ করবেন? বার্সাতেই? নাকি আর্জেন্তিনার কোনও ক্লাবে?
বার্সেলোনার হয়ে নতুন সই করার সময় মেসি বলে দিয়েছেন, “ইউরোপে আর কোনও ক্লাবের হয়ে খেলার ইচ্ছে আমার নেই। সেটা আমি আগেও বলেছি। বার্সেলোনার হয়েই শুধু খেলব।” তবে একই সঙ্গে বলে দিয়েছেন, “আর্জেন্তিনার কোথাও খেলে যে কেরিয়ার শেষ করব না, এমনটাও এখনও বলতে পারছি না।” যার পরই চালু হয়েছে জল্পনা। আপাতত ২০১৮ পর্যন্ত মেসির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বার্সার। ক্লাবের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, “মেসি আমাদের ক্লাবে যোগ দিয়েছিল তেরো বছর বয়সে। আর ওর যখন চুক্তি শেষ হবে তখন মেসির বয়স হবে একত্রিশ।” |
চুনী গোস্বামী |
মেসি প্রথমত বল প্লেয়ার। ওর দুর্দান্ত পাসিং, রিসিভিং, চোরা গতি সমসাময়িক ফুটবলারদের থেকে ওকে এগিয়ে রেখেছে আলোকবর্ষ দূরত্বে। এখন ফিফা বল প্লেয়ারদের রক্ষা করতে খুব তৎপর। বড় চোট-আঘাত না পেলে কোথায় গিয়ে যে থামবে বলা মুশকিল। বিশ্ব ফুটবলে মেসিকে পেলে-মারাদোনা-ডি’স্টেফানোর সঙ্গে এক আসনে রাখতে হবে। তবে ওকে সবার সেরা হতে গেলে বিশ্বকাপটা জেতা চাই-ই। বার্সেলোনায় জাভি-ইনিয়েস্তারা ওকে ম্যাচে প্রচুর সহযোগিতা করে। ২০১৪ বিশ্বকাপে যদি আর্জেন্তিনার মাঝমাঠ ওই ভাবেই মেসির পাশে থাকে, তা হলে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ উঠতেই পারে মেসির হাতে। |
প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় |
যে কোনও ফুটবলারেরই ধারাবাহিক ভাবে টানা গোল করতে পারা একটা অসাধারণ ক্ষমতা। এটাই অন্যদের থেকে আলাদা করেছে মেসিকে। ও যেন গোলের গন্ধ অন্যদের চেয়ে অনেক আগেই পেয়ে যায়। ফুটবল-মস্তিষ্কটাই মেসির অস্ত্র। এটাই ওর ‘এক্স ফ্যাক্টর’। আত্মবিশ্বাস কখনই টাল খায় না। যে ভাবে খেলছে তাতে ও কোথায় গিয়ে থামবে এখনই বলা যাবে না। তবে সব মিলিয়ে বিশ্ব ফুটবলে মেসির স্থান পেলে-মারাদোনার সামান্য পিছনে। আসলে তফাত এটাই যে, পেলে-মারাদোনার নামের পাশে বিশ্বকাপ রয়েছে। মেসির সেটা এখনও নেই। সামনের বছর ব্রাজিল থেকে বিশ্বকাপটা মেসি নিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব না। তবে মেসি বিশ্বকাপও জিতলে ওকেই সর্বকালের সেরা ফুটবলার বলতে হবে। |
সুভাষ ভৌমিক |
অন্যরা প্রতিভাবান। মেসি ‘জিনিয়াস’। প্রতিভাবানরা নিজেদের ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করে। আর ‘জিনিয়াস’-রা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে অসাধ্যসাধন করে। মেসি দ্বিতীয়দের দলে বলেই আলাদা। ফুটবলে ওর বড় অস্ত্র ধারাবাহিকতা, দায়বদ্ধতা এবং আবেগ। গুয়ার্দিওলা যখন ওকে কোনও ম্যাচে বিশ্রাম দিত, তখন মাঠে নামতে না পারায় কেঁদে ভাসিয়ে দিত। এই ফুটবলারকে আটকাবে কে? আজ থেকে একশ বছর পরেও ওর নাম জ্বলজ্বল করবে ফুটবল ইতিহাসে। এখনই ওকে পেলে-মারাদোনা-ডি’স্টেফানোদের থেকে এগিয়ে রাখছি। মেসিই এক নম্বর। কে বলল, বিশ্বকাপ পেলেই তবে এক নম্বর হয়! |
ভাইচুং ভুটিয়া |
মেসির মত প্রতিভা এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলে আর কেউ আছে বলে মনে হয় না। ওর আসল অস্ত্র বাঁ পা। মারাদোনার চেয়েও ভাল। ওর সাফল্য কোথায় গিয়ে থামবে তা বলতে পারব না। সর্বকালের বিচারে মেসি অন্যতম সেরা। মারাদোনা এবং পেলের পরেই ওর স্থান। তবে ২০১৪-র বিশ্বকাপ মেসির আর্জেন্তিনা পাবে কি না তা বলার সময় এখনও আসেনি। এখনও বিশ্বকাপ এক বছর দেরি। |
|