‘রাউন্ড ওয়ান’-এ কান ঘেঁষে গুলি বেরোল, দেখতে না দেখতে ‘রাউন্ড টু’-র বাদ্যি শুরু। পূর্বাঞ্চলের ‘রিং’-এ পেশিশক্তি দেখানোর যাবতীয় ক্ষমতা ঝাড়খণ্ডের আছে, আছে মাঠে নেমে সেটা প্রয়োগ করার ক্ষমতাও। ধারে-ভারে গ্রুপে বাংলার সবচেয়ে কড়া প্রতিপক্ষ ধোনির রাজ্য। সৌরভ তিওয়ারি, ইশাঙ্ক জাগ্গি, শাহবাজ নাদিম (যাঁর আবার টাউনের জার্সিতে সিএবি লিগ কাঁপানোর অতীত রেকর্ড আছে), রাহুল শুক্লকে নেই?
বছর দু’য়েক আগে এই বিজয় হাজারে ট্রফিটাও ছিল সৌরভ তিওয়ারিদের সম্পত্তি। পরে লক্ষ্মীর দর্পে সেটার হাতবদল ঘটেছে, এবং তাই সম্মুখসমরের আগে দু’পক্ষের বাগযুদ্ধ থাকবে, স্বাভাবিক। আছেও। রবিবাসরীয় ইডেনে সৌরভ তিওয়ারি যদি ‘দেখে নেব’ বলে তর্জন তোলেন, তা হলে সন্ধেয় সব শুনে লক্ষ্মীরতনের ‘বিকেল সাড়ে চারটেয় দেখা যাবে’ মার্কা গর্জনও থাকছে। কিন্তু...এবং ‘কিন্তু’টাই অমোঘ প্রশ্ন।
ম্যাচটা হবে তো শেষ পর্যন্ত? বৃষ্টি পাঁচিল হয়ে দাঁড়াবে না তো?
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, রবিবারের মতো বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে সোমবারও। ইডেনের পিচ কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলছেন, “আর বৃষ্টি না হলে ম্যাচ করিয়ে দেব। কিন্তু এ রকম চললে পারব না।” |
শেষ পর্যন্ত কী হবে, পরের প্রশ্ন। কিন্তু এ দিন দু’টো টিমের কেউই প্র্যাকটিস করতে পারল না। ইডেনে ঢুকতে না ঢুকতে বৃষ্টির এমন তোড় যে, তল্পিতল্পা গুটিয়ে কিছুক্ষণ পরই ফিরতে হল শুক্ল-বাহিনীকে। এবং আবহাওয়ার মেজাজ দেখে বাংলা অধিনায়কের মেজাজে বিরক্তির ছোঁয়া। “কী যে হল। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটা জেতা দরকার ছিল আমাদের। গ্রুপের যা অবস্থা, তাতে সব ক’টা ম্যাচই জিতে রাখা ভাল। নইলে...,” লক্ষ্মীর গলায় আশঙ্কা। ওড়িশার বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতানো দুর্ধর্ষ পাঁচ উইকেটের পরও যেটা থাকছে।
কারণও আছে। গ্রুপে এখন ঠাসাঠাসি অবস্থা। অসম সবার উপরে। ঠিক পরে ঝাড়খণ্ড, তার পর বাংলা। শেষোক্ত দুই টিমের পয়েন্ট এক, ফারাক শুধু রান রেটে। তা ছাড়া এই ম্যাচে নেই বাংলার সেরা ব্যাট মনোজ তিওয়ারি, নেই সেরা বোলিং-মন্ত্র অশোক দিন্দা। তা হলে?
“ঠিক আছে, কিন্তু সেই কারণে ঘাবড়ানোর কোনও মানে নেই। মনোজ-দিন্দার মতো ক্রিকেটার না থাকলে ভারতের যে কোনও টিমই অসুবিধায় পড়ে যাবে। তবে আমাদের দেখাতে হবে যে, মনোজ-দিন্দা ছাড়াও আমরা জিততে পারি।”
যুদ্ধের স্ট্র্যাটেজির প্রিন্টআউট মোটামুটি তৈরি। বৃষ্টি হয়ে ওভার কাটছাঁট হলে এক রকম। নইলে আর এক। মনোজের জায়গায় টিমে আসছেন শুভময় দাস। দিন্দার বদলি সৌরভ সরকার। পুরো ম্যাচ হলে দুই পেসার, সঙ্গে দুই স্পিনার সৌরাশিস লাহিড়ি এবং ইরেশ সাক্সেনা। নইলে তিন পেসার। সামি আহমেদ, সৌরভের সঙ্গে বীরপ্রতাপ সিংহ। শুধু তাই নয়, লক্ষ্মী নিজেও ব্যাটিং অর্ডারে যে কোনও জায়গায় আসতে পারেন। টপ অর্ডারেও।
কেন? “টিমের ব্যালেন্সটা ঠিক রাখতে হবে। তাই,” বলে দিলেন বাংলা অধিনায়ক। যিনি জানেন, শক্তির বিচারে তাঁর টিম সামান্য হলেও পিছিয়ে। তবু তো চোয়ালচাপা ঔদ্ধত্যের খোঁজ আছে। বলে ফেলছেন, “এর চেয়েও দুর্বল টিম নিয়ে খেলেছি। বাংলার জার্সিটাই আমার কাছে যথেষ্ট। যা তাতানোর ওটাই তাতাবে।”
আর ‘বাংলায় বসতে লক্ষ্মী’ যখন, আশাবাদে ক্ষতি কী? |