নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ক’মাস আগে কলকাতার হস্তশিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “শুধু কি কাঠের শিল্প, সিমেন্টের শিল্প, লোহার শিল্পই শিল্প?” সেই সঙ্গে দূর করেছিলেন, শিল্প-বাণিজ্য আর কলাশিল্পের ভেদাভেদ। স্পষ্ট বার্তা ছিল, ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নয়নে জোর দেবে সরকার। তার প্রতিধ্বনিই শোনা গেল ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দফতরের প্রতিমন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কথায়। মেদিনীপুরে এসে তিনি জানালেন, “ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্রাম-বাংলায় প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে রাজ্যে এক কোটি বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উন্নয়নেও জোর দেওয়া হচ্ছে।” |
শনিবার থেকে মেদিনীপুরে শুরু হয়েছে শিল্পমেলা। চলবে আজ, সোমবার পর্যন্ত। মেদিনীপুর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট এন্টারপ্রেনারস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোশিয়নের (খাস জঙ্গল) উদ্যোগে শহরের বিদ্যাসাগর হলের মাঠে এই মেলা আয়োজিত হয়েছে। প্রায় ন’বছর আগে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন খাস জঙ্গল এলাকায় গড়ে ওঠে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টার। খাস জঙ্গলে বেশ কিছু খাস জমি পড়ে রয়েছে। তার মধ্যে থেকে প্রথম পর্যায়ে প্রায় সাড়ে ১৩.৫৯ একর জমি শিল্প স্থাপনের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়। রাস্তা, সীমানা প্রাচীর তৈরি হয়। পরে সেই জমি বিভিন্ন সংস্থাকে লিজে দেওয়া হয়। এখন সেখানে ২৬টি ছোট ও মাঝারি কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে মশারি তৈরির কারখানা চারটি, আটা তৈরির কারখানা একটি, ফাইবারের দরজা-সহ অন্য সরঞ্জাম তৈরির কারখানা আছে একটি। এছাড়া রয়েছে অন্যান্য কিছু কারখানাও। এখানে প্রায় দু’হাজার মানুষ কাজ করেন।
খাস জঙ্গলে যাঁদের কারখানা রয়েছে, শুরুতে তাঁরাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এমন মেলা করার পরিকল্পনা করে যোগাযোগ করেন প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে। প্রশাসন সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এখন অনেকেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। আমরাও নানা ভাবে এঁদের সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। এমন মেলা এই প্রথম। এর ফলে অনেকে যেমন ক্ষুদ্র শিল্পে উৎসাহ পাবেন, তেমন বিপণনেরও সুযোগ তৈরি হবে।” শনিবার বিকেলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) সুমন ঘোষ, বিধায়ক মৃগেন মাইতি প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে খাসজঙ্গল এলাকা ঘুরে দেখেন স্বপনবাবু। তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা ঋণ নিতে গেলে নানা অজুহাতে ব্যাঙ্ক ফিরিয়ে দেয়। এঁদের ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য জেলা ও মহকুমাস্তরে বিপণন কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময় ব্লকস্তরেও কেন্দ্র খোলা হবে।” বিডিওদের গ্রামে ঘুরে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। বড় শিল্পের তুলনায় ক্ষুদ্রশিল্পের উন্নয়নেই বেশি জোর দেন বিধায়ক মৃগেন মাইতি। তাঁর বক্তব্য, “জেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করতে অনেকে উৎসাহ দেখাচ্ছেন। একটি মশারি বা আইসক্রিম তৈরির কারখানা করেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প করতে যাঁরা এগিয়ে আসবেন, সরকার তাঁদের সব রকম সহযোগিতা করবে।”
|