সভা পণ্ডের চেষ্টা, অভিযুক্ত প্রশাসন
সভায় নেতার বেশে শ্রোতাদের মাঝে অনিল
বামফ্রন্টের জনসভায় ফের অনিল বসু। মঞ্চে নয়, শ্রোতাদের সারিতে।
দলবিরোধী কাজের দায়ে গত বছরের মাঝামাঝি সিপিএম বহিষ্কার করে এক সময়ে আরামবাগের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ অনিলবাবুকে। এই ক’মাসে দলের সভায় তাঁকে দেখা যায়নি। সেই অনিলবাবুকেই রবিবার দেখা গেল চুঁচুড়া রবীন্দ্রভবন লাগোয়া ময়দানে, হুগলি জেলা বামফ্রন্টের সভায় কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। তাঁর কথায়, “আসতেই পারি। আমি তো এখন জনতা।” তাঁর গলায় শোনা গিয়েছে এই সুরও, “যে দূরে থাকে, সে কাছেও থাকে।” যা ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন জেলা সিপিএমের একাংশ। সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে থাকার কথা ছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। অসুস্থতার কারণে তিনি আসেননি। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের নেতৃত্বে সভা শুরু হতে ৩টে বেজে যায়। তার এক ঘণ্টা আগে বৃষ্টির মধ্যে অনিলবাবু আসেন নেতার বেশেই। সেই দুধসাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, ধূসর জওহর কোট। মাথায় ছাতা ধরে অনুগামী। কয়েক জন তাঁকে ঘিরে ধরেন। তাঁদের সঙ্গে কথার ফাঁকেই পিছনে থাকা অনুগামীরা এগোনোর রাস্তা করে দেন। মঞ্চে তিনি ওঠেননি। সূর্যবাবু সভা করেন একটি ম্যাটাডরে। তার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন অনিলবাবু। কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জল্পনা, পঞ্চায়েত ভোটের মুখে অনিলবাবু কি দলে ফিরতে চাইছেন?
চুঁচুড়ায় বামফ্রন্টের জনসভায় সূর্যকান্ত মিশ্র। (ডান দিকে) ওই সভাতেই শ্রোতাদের সঙ্গে অনিল বসু।—নিজস্ব চিত্র।
পরে ওই প্রশ্ন অনিলবাবুকে করা হলে তিনি বলেন, “দলে ফেরার জন্য আবেদন করব না। দল আমাকে বহিষ্কার করেছে। ফেরানো হবে কি না, সেটা দলের ব্যাপার। আমি এখন জনতা। অনেকের সঙ্গে কথা হল।” দল কি অনিলবাবুকে ফেরাবে? উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুদর্শন রায়চৌধুরী। সভায় অনিলবাবুর উপস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, “সকলকেই আসতে বলছি। অতীতে যাঁরা আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এখন ছেড়ে চলে গিয়েছেন, তাঁরা আসতেই পারেন। এতে আশ্চর্যের কী আছে?” একই কথা সভা থেকে শোনা গিয়েছে সূর্যবাবুর মুখেও। তিনিও জনতার কাছে আবেদনে বলেন, “আমরা চাই, যাঁরা আমাদের দলের নন, শাসক দলের, তাঁরাও আমাদের সঙ্গে আসুন।” এ দিন ওই সভাকে ঘিরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতা এবং তা বানচালের চেষ্টার অভিযোগ তোলেন বিরোধী দলনেতা। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ প্রশাসনের তরফে মাদ্রাসা পরীক্ষার জন্য মাইক বাজানো যাবে না, এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি সভামঞ্চে লটকে দেওয়া হয়। শেষমেশ মঞ্চের সামনে একটি ম্যাটাডরে বক্স লাগিয়ে বক্তব্য রাখেন নেতারা।
বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, প্রশাসনের কাছে ৩১ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে সভার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ৪ ফেব্রুয়ারি অনুমতি মেলে। তা সত্ত্বেও নির্দিষ্ট মঞ্চে সভা করতে দেওয়া হল না। রাজ্য সরকারকে কার্যত হুঁশিয়ারির সুরে সূর্যবাবু বলেন, “আমাদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করবেন না। সেটা প্রতিবাদের ঝড় হয়ে আপনাদের কাছেই ফেরত আসবে।” একই সময়ে রবীন্দ্রভবনে একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন ব্রাত্য বসু। সেই প্রসঙ্গ তুলে সুদর্শনবাবু বলেন, “আমার কাছে প্রশাসনের লোক এসে মাইক বন্ধ করতে বলে। আমি বলি রবীন্দ্রভবনে ব্রাত্য বসুর অনুষ্ঠানে মাইক চলছে, সেটা বন্ধ করুন।” অমিত পাল নামে যে নেতার নামে প্রশাসনের তরফে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়, তেমন কোনও নেতা দলে নেই দাবি করেন সুর্দশনবাবু।
এ বিষয়ে জেলাশাসক মনমীত নন্দা বলেন, “মাত্র তিন দিন আগে পরীক্ষার কথা জানতে পারি। সভা তো হয়েছে। কেবল মাইক বাজানো যায়নি। আর রবীন্দ্রভবনে ব্রাত্য বসুর অনুষ্ঠানে বাইরে যে মাইক লাগানো হয়েছিল, পুলিশ গিয়ে খুলে দিয়েছে।”

অসুস্থ বুদ্ধ গরহাজির

শারীরিক অসুস্থতার কারণে রবিবার চুঁচুড়ায় বামফ্রন্টের সভায় যেতে পারলেন না প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। সাধারণত তিনি প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএমের রাজ্য দফতরে যান। এ দিন সেখানেও যাননি। সারা দিন বাড়িতেই বিশ্রাম নেন। সিপিএম সূত্রের খবর, শুক্রবার থেকে বুদ্ধবাবুর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়েছে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া বদলের জন্যই বুদ্ধবাবুর শরীর খারাপ হয়েছে। চিন্তার কারণ নেই। দু’-এক দিনের মধ্যেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.