|
|
|
|
বৃষ্টি ভিন্ রাজ্যেও |
অকালবর্ষণের পিছুটানে যেতে যেতে থমকাল শীত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও রাঁচি |
বসন্তের শুরুতেই বর্ষার মেজাজ। শুধু বাংলায় নয়, দেশের বিস্তীর্ণ অংশে। কোথাও চলছে মুষলধারে বৃষ্টি, কোথাও বা ঝঞ্ঝা ও তুষারপাত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের আকাশ মেঘলা। সঙ্গে চলছে বৃষ্টিও। যার ফলে অধিকাংশ এলাকাতেই দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে। ‘যেতে পারি, কিন্তু কেন যাবো’র ধাঁচেই শীত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আরও এক বার।
আলিপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শনিবার বিকেল থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৯.৯ মিলিমিটার। আবহবিদেরা বলছেন, সাধারণ ভাবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকেই দক্ষিণবঙ্গে শীতের বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়। এ বারেও তেমনটা হবে বলেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সৌজন্যে বিদায় নিতে গিয়েও থমকে যায় শীত।
কী এই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা?
বিজ্ঞানীরা জানান, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা বায়ুপ্রবাহই পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে ওই বায়ুস্রোত ঢোকে কাশ্মীরে। তার প্রভাবে সেখানে তুষারপাত ও বৃষ্টি হয়। তার পরে ওই বায়ুপ্রবাহ নেমে আসে দেশের সমতলের দিকে। তার প্রভাবেই শীতকালে তুষারপাত হয়, হতে থাকে বৃষ্টিও। এ বার সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই গতিপথ বদল করেছে। তার ফলেই মাঝ-ফেব্রুয়ারিতে অকালবর্ষার মেজাজ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
কী রকম সেই পথ-বদল? |
|
হাওয়ার দাপট সামলানোর চেষ্টায়। রবিবার শহরে। —নিজস্ব চিত্র |
আবহবিদেরা জানান, শীতের বিদায়বেলায় পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সাধারণত উত্তর ভারত থেকে নেপালের দিকে ঘুরে যায়। কিন্তু এ বার সে বিহার-ঝাড়খণ্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে আসছে। ফলে পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে বায়ুপ্রবাহে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের এক আবহবিদ জানান, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার পরোক্ষ প্রভাবে উত্তরপ্রদেশ থেকে উত্তর-পূর্বাঞ্চল পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার জেরেই গোটা রাজ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। কমছে তাপমাত্রাও। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, পূর্ব ভারতের সর্বত্রই দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে ন’ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে গিয়েছে। এ বার রাতের তাপমাত্রাও কিছুটা কমবে বলে তাদের পূর্বাভাস।
উপগ্রহ-চিত্রে দেখা যাচ্ছে, রবিবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের উপরে মেঘ রয়েছে। ঝড়বৃষ্টি হয়েছে বিহার, ঝাড়খণ্ড আর উত্তরপ্রদেশে। দিল্লির মৌসম ভবনের বিজ্ঞানীরা বলছেন, আকাশে মেঘ থাকার ফলে রোদ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারেনি। সেই কারণেই দিনের তাপমাত্রার এই পতন। ডিসেম্বরের শেষে বাংলাদেশের উপরে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্তের জেরে ঠিক এমনই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। কলকাতায় দিনের তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ১১ ডিগ্রি নীচে।
ঘূর্ণাবর্ত ও পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সৌজন্যে চলতি মরসুমে বারে বারেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে শীত। শেষ বেলাতেও তার পিছুটান হয়ে দাঁড়াল সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝাই। শুধু পূর্ব ভারত নয়, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপটে কাবু কাশ্মীর, হিমাচল-সহ উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলি। মৌসম ভবন জানিয়েছে, কাশ্মীরের উপরে একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা রয়েছে। তাই সেখানে তুষারপাত হচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডেও। আবহবিদেরা জানান, পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে রাজস্থান এবং সংলগ্ন এলাকায় একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। তার জেরে পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানায় বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসম ভবনের খবর, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের একাংশেও ভাল বৃষ্টি হয়েছে।
মহানগরে এ দিন সকাল থেকেই বৃষ্টির জন্য ফের শীতের আমেজ ফিরে এসেছে। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় টুপি-সোয়েটার তুলে রাখছিলেন অনেকেই। সোমবার আবার তা গায়ে তুলতে হয়েছে। একই অবস্থা প্রতিবেশী রাজ্যগুলিতেও। রাঁচিতে বৃহস্পতিবার জোর বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। তা চলেছে এ দিন দুপুর পর্যন্ত। বিকেলে বৃষ্টি কিছুটা কমে এলেও আকাশ এখনও মেঘলা। রয়েছে স্যাঁতসেঁতে ভাবও।
ক’দিন চলবে এমন আবহাওয়া?
আবহবিদেরা জানান, ঝাড়খণ্ডে এ দিন থেকেই বৃষ্টির দাপট কমেছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে আজ, সোমবারেও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কাল, মঙ্গলবার থেকে তা কমতে পারে বলে মনে করছে হাওয়া দফতর। আর ওই দিনই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রিতে নামতে পারে বলে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস। সেই সুবাদে শীতের আমেজ থাকবে চলতি সপ্তাহের মাঝামাঝি পর্যন্ত। |
|
|
|
|
|