|
|
|
|
প্রশস্তি জামিয়ত নেতার |
উন্নয়নমুখী মোদী ভোট পাচ্ছেন মুসলিমদের, দাবি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
গোধরার ভূত এখনও পিছু ছাড়েনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর। এর মধ্যেই প্রভাবশালী মুসলিম সংগঠনের প্রশস্তি জুটল নরেন্দ্র মোদীর।
জামিয়ত-উলেমায়ে-হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মৌলানা মেহমুদ মাদানি বলেছেন, মোদী সম্পর্কে গুজরাতের মুসলিমদের মনোভাব বদলাচ্ছে। মুসলিমদের একাংশ মোদীকে ভোটও দিচ্ছেন। তথাকথিত অন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ রাজ্যের তুলনায় গুজরাতে মুসলিমদের আর্থিক অবস্থা ভাল। এই প্রসঙ্গে মাদানি টেনে আনেন পশ্চিমবঙ্গে মুসলিমদের অবস্থাও। তাঁর মতে, গুজরাতে মুসলিমরা ভাল রয়েছেন, সেটা বলার থেকে বলা ভাল, পশ্চিমবঙ্গ বা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে পরিস্থিতি আরও খারাপ।
জামিয়ত-উলেমায়ে-হিন্দ দেওবন্দের দারুল উলুম নিয়ন্ত্রণ করে। এর আগে দেওবন্দ দারুল উলুমের উপাচার্য মৌলানা গুলাম মহমম্দ ভাস্তানভি আরও সোজাসাপ্টা ভাবে মোদীর তারিফ করে মুসলিমদের কোপে পড়েছিলেন। মাদানি অতটা সরাসরি মোদীর প্রশংসার পথে না হাঁটলেও বলেন, “গুজরাতে জামিয়ত কর্মীরা আমাকে জানিয়েছেন, সম্প্রতি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমরা মোদীকে ভোট দিয়েছেন। সেখানে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। সময় যে বদলেছে, তা আমিও স্বীকার করি।” তাঁর মতে, কিছু লোক রাজ্যের উন্নয়নের কথা ভেবে ভোট দিয়েছেন। অনেকে আবার মনে করেন,
মোদীর বদলে অন্য কেউ এলে পরিস্থিতির তেমন বদল হবে না। সে কারণেই উভয়ের মধ্যে মোদীকেই তাঁরা বেছে নিচ্ছেন।
বিজেপি ও সঙ্ঘের নিচু তলার কর্মীদের একটি বড় অংশের মধ্য থেকে যে ভাবে মোদীকে এখনই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার দাবি উঠছে, সেই সময় প্রভাবশালী এই সংখ্যালঘু সংগঠনের থেকে সার্টিফিকেট সেই আওয়াজ আরও জোরালো করবে। গত সপ্তাহেই গুজরাতে ৭৫টি পুরসভায় নির্বাচনের ফল বেরিয়েছে। ৪৭টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে একজনও সংখ্যালঘু প্রার্থী না দেওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মোদী। কিন্তু এই পুরসভা নির্বাচনে মোদী যে ২৪ জন সংখ্যালঘুকে প্রার্থী করেছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকেই বিজেপির টিকিটে জিতে এসেছেন। কংগ্রেসের থেকে দশটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। মোদীও একে ‘বড় জয়’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন।
এই মন্তব্যের পর মাদানির সমালোচনায় সরব হয়েছে মুসলিমদের অন্যান্য সংগঠন। ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের’ কার্যনির্বাহী সদস্য ও লখনউয়ের ইমাম মৌলানা খালিদ রশিদ ফিরাঙ্গি মেহেলির মতে, গুজরাতে গণত্যার কথা উপেক্ষা করা যায় না। লখনউ কেন্দ্র থেকে মোদীর নির্বাচন লড়ার সম্ভাবনার খবরে ক’দিন আগে মুসলিমদের এই সংগঠনই জানিয়েছিল, কোনও অবস্থাতে মুসলিমরা মোদীকে সমর্থন করবে না। কিন্তু মোদী-ঘনিষ্ঠ নেতাদের মতে, মাদানি যা বলেছেন তা তো বাস্তব। নরেন্দ্র মোদী তাঁর রাজ্যে যে উন্নয়নের রথে সওয়ার হয়েছেন, তার সুফল তো সব ধর্ম-সম্প্রদায়-জাতিই ভোগ করেছেন। এমনকী, সঙ্ঘ নেতৃত্ব যখন ফের হিন্দুত্বের রাজনীতি করছেন, সেই সময়ও তো মোদী শুধু উন্নয়নের কথাই বলছেন।
মোদী-ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার মন্তব্য, উন্নয়নই যে এখন একমাত্র পথ, তা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। উন্নয়নের জন্য সংখ্যালঘুরাও এখন মোদীকে ভোট দিচ্ছেন। গুজরাতে সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরাও বিজেপির টিকিটে ভোটে জিতে আসছেন। আবার কুম্ভে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধর্ম সংসদেও সাধুরা মোদীকে প্রধানমন্ত্রী করতে চাইছেন। তাঁরা হিন্দুত্বের পথ নিলেও মোদী কিন্তু দিল্লির শ্রীরাম কলেজে রাহুল গাঁধীর দুর্গে উন্নয়নেরই কথা শুনিয়েছেন। এ বার দিল্লিরই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম দুর্গেও আর একটি সভা আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। গুজরাতে ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে যুবকরা মোদীকে ভোট দিয়েছেন। মোদী এ বারে গোটা দেশের যুব সম্প্রদায়কে তাঁর উন্নয়নের সাফল্যের মডেল তুলে ধরে কাছে টানতে চাইছেন। কোনও দ্বিধা না রেখেই সঙ্ঘ ও বিজেপিকে এখনই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করে দেওয়া উচিত।
বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলেও কি মুসলিমরা সমর্থন করবেন? মাদানির জবাব, “বিজেপি এখনও তাদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ স্থির
করেনি। সময় এলে আমরা আমাদের অবস্থান জানাব।” |
|
|
|
|
|