|
|
|
|
মমতার সহমর্মী বিজেপি, চায় কাটজু-বিদায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নরেন্দ্র মোদী, নীতীশকুমার ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই তিন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মিল কোথায়?
সাম্প্রতিক কালে এঁরা সকলেই প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান মার্কণ্ডেয় কাটজুর আক্রমণের মুখে পড়েছেন। দিল্লির লুটিয়েন বাংলো ‘কব্জা’ করে আধা-বিচারবিভাগীয় পদে বসে বেছে বেছে তিনি অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রীদের নিশানা করছেন বলে অভিযোগ তুললেন অরুণ জেটলি। কাটজুর অপসারণেরও দাবি তুলেছেন বিজেপির এই নেতা। আর তাঁর বক্তব্যে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে সুকৌশলে নীতীশ ও মমতার প্রতিও সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন নরেন্দ্র মোদী।
জেটলি আজ এক দীর্ঘ নিবন্ধ লিখে একহাত নিয়েছেন কাটজুকে। যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করছেন কাটজু, জেটলির মতে কংগ্রেসকে তুষ্ট করতেই তাঁর এই প্রয়াস। কখনও তিনি সমালোচনা করছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের, কখনও বলছেন “বিহারে সংবাদমাধ্যম স্বাধীন নয়”, কখনও মন্তব্য করছেন, গোধরা-পরবর্তী দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর হাত ছিল না, এ কথা তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি এই আবেদনও জানান, দেশের ভবিষ্যতের কথা ভাবার সময়ে দেশবাসী যেন এ সব বিষয় মাথায় রাখেন।
জেটলির বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি কাটজু কংগ্রেসের থেকেও বেশি কংগ্রেসি রাজনীতি করছেন। রাজনৈতিক আবেদন করছেন। সুপ্রিম কোর্টের কোনও বর্তমান বিচারপতি এ ধরনের রাজনৈতিক আবেদন করলে তাঁর বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট হয়। কোনও সরকারি আমলার ক্ষেত্রে বরখাস্ত করা হয়। কিন্তু আধা-বিচারবিভাগীয় পদে বসে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ ধরনের মন্তব্য করতে চাইলে তিনি পদ
ছেড়ে দিন। তা না হলে তাঁকে বরখাস্ত করা হোক। জেটলি লিখছেন, “অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মনে রাখা উচিত, অবসরের পর রাজধানীর বাংলোয় ভাড়া দিয়ে তাঁদের রাখা হয়েছে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য, সক্রিয় রাজনীতি করার জন্য নয়।”
রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার এই তীব্র আক্রমণের পর স্বয়ং কাটজুও একহাত নেন জেটলিকে। বলেন, জেটলিও রাজনীতিতে থাকার যোগ্য নন। তিনিও রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিন। মিথ্যা কথা বলছেন তিনি। শুধু অ-কংগ্রেসি নয়, কাটজু কংগ্রেস শাসিত মহারাষ্ট্র সরকারেরও সমালোচনা করেছেন। কিন্তু দিনভর জেটলি-কাটজুর বাদানুবাদের মধ্যেই রাজনীতি নতুন মোড় নেয় নরেন্দ্র মোদীর টুইটে। মোদী লিখেছেন, “বিচারপতি কাটজু গুজরাতকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখেন না।” এ কথা বলেও মোদী নিজের টুইটে জেটলির পুরো নিবন্ধটিই পোস্ট করে বলেছেন, “জেটলির অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন নিবন্ধটি গুজরাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার গুড়িয়ে দেবে।”
কাটজুকে ঘিরে এই বিতর্কের মধ্যে অন্য খেলার গন্ধও পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। বিজেপি শিবিরের মতে, উপলক্ষ কাটজু হলেও এর মধ্যে দলের একটি কৌশলও রয়েছে। প্রথমত, কাটজুর শিকারের তালিকায় সুকৌশলে এক সারিতে আনা হল মোদী-নীতীশ মায় মমতাকেও। দুই, এর মাধ্যমে অ-কংগ্রেসি রাজ্যগুলির নেতৃত্ব যে বিজেপি করছে, তারও বার্তা দেওয়া হল কংগ্রেসকে আক্রমণ করে। সংসদের অধিবেশনে যখন নানা প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে, সেই সময় বিজেপি অ-কংগ্রেসি দলগুলিকে বার্তা দিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতার রাশ শক্ত করতে চায়। তিন, সংসদের অধিবেশনের বাইরেও লোকসভার আগে এনডিএ প্রসারের ভিতটিও মজবুত করতে চায় বিজেপি। সেখানে মমতার জন্যও বিজেপি যেমন দরজা খোলা রাখতে চায়, তেমনই নীতীশও যাতে সঙ্গে থাকেন, তারও একটি চেষ্টা বিজেপির দিক থেকে রয়েছে। চার, এই সুযোগে জেটলিও মোদীর সঙ্গে নিজের সম্পর্কটি ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন। একাধারে নীতীশ ও মোদীর সঙ্গেও যে তিনি রয়েছেন, নিবন্ধের মাধ্যমে সেই বার্তাও দিলেন জেটলি।
সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাননি মোদীও। টুইটে রীতিমতো শিলমোহর বসিয়ে দিলেন জেটলির গোটা নিবন্ধটিতে, যেখানে তাঁর বিরোধী নীতীশকুমার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও কাটজুর আক্রমণের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বিজেপির এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, “জেটলির নিবন্ধে শিলমোহর বসিয়ে মোদী আসলে বার্তা দিলেন নীতীশ-মমতাকেই। দলের মুখ হওয়ার জন্য মোদী এখন অপ্রতিরোধ্য এক ব্যক্তিত্ব। ঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ করার ব্যাপারে পারদর্শী মোদী। এ বারেও তার প্রমাণ দিলেন তিনি।” |
|
|
|
|
|