শনিবার ছিল সাধারণ বৈঠক। রবিবারে কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার বেছে নিলেন কলকাতা পুলিশের স্পর্শকাতর কয়েকটি থানাকে। সদলবলে গিয়ে কথা বললেন ওসিদের সঙ্গে। পুলিশকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দায়িত্ব নিয়ে শুধু বাহিনীর মনোবল বাড়ানোই নয়, সাম্প্রতিক কালে কলকাতা পুলিশ যে সমস্যাগুলির সামনে পড়েছে, সেগুলির দিকেও নজর দিচ্ছেন সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। কী রকম?
পুলিশের একাংশের মতে, অম্বিকেশ মহাপাত্র, শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনি থেকে শুরু করে আমিনুল ইসলামের মৃত্যু, গত বছর খানেক ধরে বেশ কয়েকটি সমস্যা কলকাতা পুলিশকে নাজেহাল করেছে। সে কথা মাথায় রেখেই এ দিন কড়েয়া, পূর্ব যাদবপুর, তিলজলার মতো থানাগুলিকে বেছে নিয়েছিলেন সুরজিৎবাবু।
রাজ্যে পালাবদলের পর কলকাতা পুলিশকে অন্যতম সমস্যায় ফেলেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতারের ঘটনা। ২০১২-র এপ্রিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ও মুকুল রায়কে নিয়ে একটি ব্যঙ্গচিত্র ই-মেলে ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেই ঘটনাটি ছিল পূর্ব যাদবপুর থানার। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, শাসক দলের একাংশের প্রবল চাপের কারণেই তড়িঘড়ি গ্রেফতার করা হয় ওই অধ্যাপককে। এই নিয়ে পুলিশের ভূমিকা সমালোচিত হয়। |
পরিদর্শন সেরে পূর্ব যাদবপুর থানা থেকে বেরোচ্ছেন
সিপি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ। রবিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
সাম্প্রতিক কালে তিলজলা থানা এলাকায় পরপর শিশুচোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনাতেও নাজেহাল হয়েছিলেন লালবাজারের কর্তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার অভিযোগে তড়িঘড়ি বদলি হন সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের ডিসি চম্পক ভট্টাচার্য। ওই ঘটনায় যেমন পুলিশের একাংশের গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল, তেমনই পরিকাঠামো নিয়েও সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা।
ওই এলাকার আর একটি থানা, কড়েয়া প্রশ্নের মুখে পড়েছিল আমিনুল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে। মৃতের পরিবারের অভিযোগ ছিল, কড়েয়া থানার একাংশ স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সঙ্গে যোগসাজসে আমিনুলকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিল। তার প্রেক্ষিতেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বদলি হতে হয় কয়েক জন পুলিশ অফিসারকেও।
এ দিন সংযোজিত এলাকায় সিপির পরিদর্শন শুরু হয় বেহালা থানা দিয়ে। ঘটনাচক্রে, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের তরফ থেকে এক সময়ে বেহালা থানায় কর্মরত ছিলেন গার্ডেনরিচ কাণ্ডে নিহত অফিসার তাপস চৌধুরী। পুলিশ সূত্রের খবর, তখন তাঁর স্বামীকে হেনস্থার শিকার হওয়ার কথা জানান তাপসবাবুর স্ত্রী মিনতিদেবী। এ ছাড়াও, ওই এলাকায় পুলিশের উপরে রাজনৈতিক চাপ এবং নাগরিক সমস্যার কথাও পুলিশকর্তাদের কানে উঠেছে বলে খবর।
চিৎপুর, জোড়াসাঁকো, নারকেলডাঙা, একবালপুর, ভবানীপুর থানায়ও যান সুরজিৎবাবু। পুলিশের একাংশের মতে, এই থানাগুলি হয় স্পর্শকাতর, নয়তো স্থানীয় রাজনৈতিক চাপের শিকার। ফলে ওই থানাগুলিকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন নতুন সিপি। এক পুলিশকর্তার মতে, “গার্ডেনরিচ কাণ্ডের পর পুলিশের উপরে রাজনৈতিক চাপের যে দিকটি উঠে এসেছে, তা থেকে মুখ ফেরাতে সিপি-র পরিদর্শন জরুরি ছিল।” তবে সুরজিৎবাবু এই পরিদর্শনকে বিশেষ আখ্যা দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, “এটা নিয়মমাফিক পরিদর্শন।”
তবে পুলিশ সূত্রের খবর, থানার এলাকা, অপরাধের ধরন এবং দুষ্কৃতীদের তালিকা নিয়েও খোঁজ করেছেন। লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, শনিবারই বন্দর এলাকার থানাগুলিকে স্থানীয় দুষ্কৃতীদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন। দায়িত্ব নিয়েই নতুন সিপি-র এমন গতিবিধি দেখে পুলিশের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘পরিবর্তনের’ হাওয়া কি এ বার গোটা বাহিনীতেই? |