সিনেমায় বলে, ডনকো পকড়না মুশকিলই নেহি, না-মুমকিন হ্যায়। কিন্তু বাস্তবে ডন কেন, সাধারণ অভিযুক্তদের ধরতেও অনেক সময় ঘাম ছুটে যায় পুলিশের। গার্ডেনরিচের ঘটনার দুই অভিযুক্ত মহমম্দ ইকবাল এবং মোক্তারকে ধরা যে এত কঠিন হবে, তা যেমন ভাবেননি লালবাজারের কর্তারা।
গার্ডেনরিচের ঘটনার দিন দীর্ঘ ক্ষণ পুলিশের চোখের সামনেই ছিলেন ইকবাল-মোক্তার। কিন্তু এখন যখন তাঁদের ধরার সময় এসেছে, বোরখা পরে অভিযান চালিয়েও নাগাল মেলেনি দু’জনের। তবে লালবাজারের প্রবীণ অফিসাররা বলছেন, দিনের পর দিন পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে লুকিয়ে থাকা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সবাই চাইলেই এ ব্যাপারে ‘ডন’ হয়ে উঠতে পারে না। তাঁদের কথায়, “সকলেই ডন নয়, কেউ কেউ ডন!”
যেমন, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের চার-চারটি রাজ্যে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ অমিত চৌধুরি। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পুলিশকে ঘোল খাইয়ে চলেছে সে। দুবাই বা নেপাল কোথায় থাকে, তার ভাসা-ভাসা খবর পৌঁছয় গোয়েন্দাদের কাছে। কিন্তু এশিয়ার বৃহত্তম ছাঁট লোহার বাজার, হাওড়ার বজরঙ্গবলী মার্কেট থেকে এখনও নিয়মিত তোলা পৌঁছয় অমিতের কাছে। তোলা দিতে না পারলে হাওড়া হোক বা বিশাখাপত্তনম শার্প শুটারের গুলি ঝাঁঝরা করে দেয় ব্যবসায়ীদের। এমনও শোনা যায়, অমিত নাকি কলকাতায় তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে ফিরে গিয়েছে। অথচ দুঁদে গোয়েন্দারা তার সাম্প্রতিক কোনও ছবির নাগাল পর্যন্ত পাননি। |
|
|
|
|
নিকল তামাং |
কাদের খান |
ওমর |
অমিত চৌধুরি |
|
অমিত চৌধুরি না হয় লাখে একটা মিলবে। হাল আমলে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত কাদের খান দাগি দুষ্কৃতী নয়। তার খোঁজে দিল্লি, মুম্বই থেকে শুরু করে কোথায় না কোথায় গিয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। কাদের ধরা পড়েনি। গোয়েন্দারা দাবি করছেন, সে এখন বাংলাদেশে। আবার, ধরা পড়েও পালিয়ে গিয়েছে পাহাড়ে মদন তামাং খুনের ঘটনায় ধৃত নিকল তামাং। পিনটেল ভিলেজ নামের এক বাংলোয় তাকে আটকে রেখেছিল পুলিশ। সবার নজর এড়িয়ে সে পালায়। তাকে ধরার জন্য ৫০ হাজার টাকার ইনাম ঘোষণা করা হয়েছে। নেতাই হত্যা মামলায় সিপিএম নেতা অনুজ পাণ্ডে, তাঁর ভাই ডালিম এবং আরও কয়েক জন সিপিএম নেতাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বলে চিহ্নিত করেছে সিবিআই। কিন্তু তাদের কাউকেই ধরা যায়নি।
বউবাজার বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত সাট্টা ডন রশিদ ধরা পড়ে জেলে গিয়েছে। তার ভাগ্নে পারভেজ ওরফে লালা এখনও অধরা। নব্বই দশকের কলকাতা-কাঁপানো আর এক দুষ্কৃতী তাড়িবাবার ক্ষেত্রেও শেষ রক্ষা হয়নি। খুনের মামলায় অভিযুক্ত কিড স্ট্রিটের তাড়িবাবা ও লালা দু’জনেই বিদেশে পালিয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। পালিয়েছে আশির দশকে এ শহরের দুষ্কৃতীদের তালিকায় অগ্রগণ্য মির মহম্মদ ওমরও। আমেরিকান সেন্টারে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত আমির রেজা খান যেন মিলিয়ে গিয়েছে হাওয়ায়। দেবশ্রী রায়চৌধুরীর অন্তর্ধান রহস্যে মূল অভিযুক্ত সত্যনারায়ণ সেনও অধরা। গোয়েন্দারা তার টিকিও ছুঁতে পারেননি।
সকলেই ডন নয়, কেউ কেউ ডন! ইকবাল-মোক্তারও সেই শিরোপা পান কি না, সেটাই এখন দেখার! |