গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে তাঁর এক কালের বিশ্বস্ত সৈনিক ফিরহাদ (ববি) হাকিমের পাশেই দাঁড়ালেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়।
রবিবার কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভার পরে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে ববির জড়িত থাকার অভিযোগ সম্পর্কে সৌগতবাবু বলেন, “এ সব সর্বৈব অসত্য। বিরোধীরা একটা ঘটনা থেকে ফায়দা তুলতে চাইছে। তাদের চেষ্টা সফল হবে না।” গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে ববি যেমন তাঁর অনুগামীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন, সৌগতবাবুও তেমনই অনুগামী পুরমন্ত্রীর সমর্থনে সরব হয়েছেন। কারণ, সৌগতবাবুর
সঙ্গে ববির সম্পর্ক বহু দিনের। সৌগতবাবু এক সময় অধুনা লুপ্ত আলিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হতেন। তখন ববি কাজ করতেন তাঁর সহযোগী হিসাবে।
এ দিন ববি অবশ্য বলেছেন, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল দল তৈরি হওয়ার সময় সৌগতবাবু কংগ্রেসেই ছিলেন। সে সময় তিনি তৃণমূলের বিরোধিতা করতেন। তবে ববির কথায়, “সৌগতদা শিক্ষিত মানুষ। আমাকে খুব ভালবাসেন। তিনি আমার পাশে দাঁড়াবেন এটাই স্বাভাবিক।”
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে, এই সৌগতবাবুই সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের রাশ স্বল্প শিক্ষিত রাজনীতিকদের হাতে দেওয়ার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। সে সময় সৌগতবাবু সবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। আশুতোষ কলেজে এক আলোচনাসভায় আত্মসমালোচনার ঢঙে সৌগতবাবু বলেছিলেন, “ক্লাস এইট পাশ করেই আজকাল কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হওয়া যাচ্ছে!” ওই বক্তব্যে নাম না করে তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছিল বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করেন। |
বাড়িতে পৌঁছল অভিজিৎ শীলের মৃতদেহ। —নিজস্ব চিত্র |
কিন্তু এখন যে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে সৌগতবাবু ববির পাশে দাঁড়াচ্ছেন, তারও সূত্রপাত হরিমোহন ঘোষ কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই। অর্থাৎ, সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরই রাজনীতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্টো সুর শোনা গেল তাঁর গলায়। তিনি ববি হাকিমেরই পাশে দাঁড়ালেন।
এ দিন সৌগতবাবুকে প্রশ্ন করা হয় গার্ডেনরিচের ঘটনার পর ববিকে সরকারের মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হল কেন?
সৌগতবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “আপনাকে এ রকম কেউ লিখে দিয়েছে?” কিন্তু রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও তো ববির সমালোচনা করেছেন। তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাতে বলেছেন। সৌগতবাবুর জবাব, “না, রাজ্যপাল কিছু বলেননি। রাজ্যপাল অত্যন্ত প্রবীণ ও অভিজ্ঞ লোক। উনি জানেন, মন্ত্রিসভায় কে থাকবেন, সেটা রাজ্যপাল ঠিক করেন না, মুখ্যমন্ত্রী করেন। রাজ্যপাল এ রকম কথা বলেননি। আপনারা ওঁর মুখে এই কথা বসাচ্ছেন কেন?” রাজ্যপালের সঙ্গে সরকারের যে কোনও সংঘাত নেই, তা-ও জানিয়েছেন সৌগতবাবু।
রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগের জবাব দিতেও সৌগতবাবু দলের একনিষ্ঠ সদস্যের মতোই কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এই অভিযোগ একেবারেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলা অন্য রাজ্যের চেয়ে ভাল। যদি দু’-একটা ঘটনা ঘটেও থাকে, তার ব্যাপারে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।” বরং, সৌগতবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “আমাদের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে কি নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, নেতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে? আমাদের সরকারের সময় কি মাটির তলা থেকে আমাদের সময়ে খুন হওয়া লোকের কঙ্কাল বেরোচ্ছে?” পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সৌগতবাবুর বক্তব্য, “কোথাও পুলিশের ত্রুটি হতে পারে। কিন্তু আমরা তো বরাবরই বলেছি, দলতন্ত্র নয়, গণতন্ত্র চাই। পুলিশ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। আইন তার নিজের পথেই চলবে।”
সৌগতবাবুর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে দীপা বলেন, “আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা ভাল, এই কথাটা বলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” এ দিন কসবার রাজডাঙা এলাকায় উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ ভবনের শিলান্যাস করেন দীপা। পরে গার্ডেনরিচ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কলেজের বাইরে তৃণমূল নেতা গুন্ডামি করছেন। তৃণমূল কর্মী পুলিশকে খুন করছে। তার পরেও যাঁরা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই এ সব বলছেন।” কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা মোক্তার গার্ডেনরিচের গোলমালে যুক্ত বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে দীপা বলেন, “গোলমালের সময় মোক্তার ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আগেকার ক্লিপিংস দেখালে আর কী করব? আগেকার ঘটনায় তিনি যদি অভিযুক্ত হন, তা হলে শাস্তি পাবেন।”
পুরমন্ত্রীর অপসারণ চেয়ে
বামেরা এ দিনও সরব ছিলেন। বিমান বসু এই দাবি তোলেন। সূর্যকান্ত
মিশ্র অভিযোগ করেন, “নিজের
দলের দুষ্কৃতীকে আড়াল করতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে রঞ্জিত পচনন্দাকে সরিয়েছেন।” |