তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের ছেলে অভিজিতের সৎকারের সময় দলের কেউ থাকেন কি না, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। বিশেষ করে ফিরহাদ (ববি) হাকিমকে নিয়ে প্রশ্ন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফিরহাদ-সহ তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা-মন্ত্রী রবিবার যোগ দিলেন শেষকৃত্যে।
বোমা বানাতে গিয়ে মারা যাওয়া এক যুবকের শেষকৃত্যে যোগ দিয়ে কি তাঁকে শহিদের মর্যাদা দিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীরা? এতে কি কার্যত হিংসার রাজনীতিকেই স্বীকৃতি দেওয়া হল না? প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। এ দিন শ্মশানে আসা তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা অবশ্য জানান, দলের কাউন্সিলরের ছেলে তথা এক জন দলীয় কর্মী মারা গিয়েছেন বলেই শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।
এ দিন বেলা দেড়টা নাগাদ কেওড়াতলা শ্মশানে অভিজিতের দেহে মালা দেন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সুব্রত বক্সী। পরে আসেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও। আসেন গার্ডেনরিচের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত, বরো চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবালের ছোট ছেলে আর মেয়েও। ফিরহাদের সঙ্গে শ্মশানে তাঁরা বেশ কিছুক্ষণ কথাও বলেন। ফিরহাদ বলেন, “আমি এলাকার বিধায়ক। আমার দলেরই ছেলে মারা গিয়েছেন। |
সদলে:
অভিজিতের শেষকৃত্যে শ্মশানে এ ভাবেই ফিরহাদ হাকিমকে ঘিরে
ছিলেন দলীয় অনুগামীরা। পাশে ছিলেন মন্ত্রিসভার সতীর্থ মদন মিত্র, দলীয়
সাংসদ সুব্রত বক্সীরাও। রবিবার কেওড়াতলা শ্মশানে।—নিজস্ব চিত্র |
তাই তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দিয়েছি।” সুব্রতবাবুও বলেন, “অভিজিৎ আমাদের দলের কর্মী ছিল। এলাকার সাংসদ হিসাবে আমার নৈতিক দায়িত্ব, দলীয় কর্মীর মৃত্যুতে তাঁর বাড়ি থেকে শ্মশান পর্যন্ত থাকা।” তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ নেতা বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোন ঘটনা কী হয়েছে, সেটা আইন বিচার করবে। অভিজিৎ দলের এক জন কর্মী ছিলেন। আমি অভিজিতের সহকর্মী ও সমব্যথী হিসাবে মনের তাগিদে শেষযাত্রায় এসেছি।” এ দিন ফিরহাদ শ্মশানের অফিসে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অভিজিতের বাবা রঞ্জিত শীলকে পাশে নিয়ে বসেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন সুব্রত বক্সীও।
শুধু দলের নেতা-মন্ত্রীরা নন, এ দিন অভিজিতের দেহ ঘিরে গার্ডেনরিচ এলাকার তৃণমূল কর্মীদের ভিড় ছিল কাটাপুকুর মর্গ থেকেই। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ কাটাপুকুর মর্গ থেকে অভিজিতের দেহ আনা হয় ফতেপুরে তাঁর পাড়ায়। অভিজিতের দেহ বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে রাখা হয় স্থানীয় ফতেপুর সরস্বতী স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখানে জড়ো হন বুকে কালো ব্যাজ পরা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। যদিও অভিজিতের মৃত্যু সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করার ব্যাপারে তাঁরা যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন। এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “কী ভাবে মৃত্যু হয়েছে, সে সব বলতে পারব না। খবরের কাগজে দেখে নিন। অভিজিৎ আমাদের ক্লাবের এক জন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।” গার্ডেনরিচ থেকে এ দিন ম্যাটাডোরে চেপে শেষকৃত্যে যোগ দিতে আসেন কয়েকশো যুবক।
অভিজিতের শেষকৃত্যে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীদের যাওয়া নিয়ে নানা মহল থেকে প্রশ্ন উঠছেই। কিন্তু বিরোধীরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও বিতর্ক তৈরি করতে নারাজ। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “এক যুবকের মৃত্যুর পরে যদি তাঁর পরিবারের পাশে এসে কেউ দাঁড়ান, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই।” একই সুরে কথা বলেন কংগ্রেসের সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। তিনি বলেন, “যে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই হোক না কেন, মৃত্যুর ঘটনা মাত্রই দুর্ভাগ্যজনক। এ নিয়ে রাজনীতি করা আমার কাছে শোভন বলে মনে হয় না।”
পুলিশ জানিয়েছে, হরিমোহন ঘোষ কলেজে সংঘর্ষের আগের রাতে গুরুতর আহত হন অভিজিৎ (২৫)। শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ঘটনার পরেই অভিজিৎ এবং জখম অন্য দুই যুবক জবানবন্দি দিয়ে বলেন, একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়েই তাঁদের এই অবস্থা হয়েছে। রঞ্জিতবাবু অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর ছেলেকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়েছে। সেই মতো মামলা করার জন্য তৃণমূল নেতারা পুলিশের উপরে চাপ দিচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ। তবে পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “অভিজিৎ জবানবন্দিতে বলেছিলেন, বোমা তৈরি করতে গিয়েই তাঁরা জখম হন। তাই রঞ্জিতবাবুদের কথা মতো কাজ করা আইনত অসম্ভব ছিল।” |