ভরা বর্ষায় শাল নদীর জল ভেঙে যাতায়াত করতে সমস্যা হয়। এলাকাবাসীর এই সমস্যার কথা ভেবে একটি কজওয়ে তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুবরাজপুরের পদুমা পঞ্চায়েত। সেই মতো কয়েক লক্ষ টাকার হিউম পাইপও কেনা হয়েছিল। অথচ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সেগুলি বসহরি-আঁরোয়া ঘাটে পড়ে রয়েছে। কাজ এগোয়নি বলে দাবি বাসিন্দাদের। কবে সেতু, আর সমস্যা মিটবে কেউ জানেন না।
কংগ্রেসের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি তথা স্থানীয় বাসিন্দা অরুণ চক্রবর্তীর দাবি, “বাসিন্দাদের একাংশকে নিয়ে এ ব্যাপারে জানতে পঞ্চায়েতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কবে সেতু হবে বা কী কারণে পাইপগুলি এ ভাবে পড়ে রয়েছে, তার স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যায়নি।” পদুমা পঞ্চায়েত প্রধান শিউলি ডোম অবশ্য কংগ্রেস নেতার দাবি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “মূলত টাকার আভাবে আটকে আছে কাজ। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই এ ধরনের অভিযোগ করা হচ্ছে।” তবে প্রধান যাই বলুন, পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রের খবর, টাকা পয়সার সমস্যার পাশাপাশি গত বিধানসভা ভোটের পর পঞ্চায়েতে ক্ষমতাসীন বোর্ডের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যাওয়াটাও অন্যতম কারণ। কী ভাবে? গত নির্বাচনে পঞায়েত ক্ষমতা দখল করেছিল সিপিএম। ১৩টি আসনের মধ্যে ১১টি পেয়েছিল সিপিএম। একটি করে আসন পেয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক ও কংগ্রেস। ফব-কে সঙ্গে নিয়ে বোর্ড গড়েছিল সিপিএম। সেই সময় পদুমা পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে কয়েশো মিটার দূরে শাল নদীর বসহরি থেকে আঁরোয়া ঘাট পর্যন্ত একটি কজওয়ে তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। উদ্দেশ্য নদীর এ-পাড়ে থাকা বসহরি, কড়কড়ি, গৌরাঙ্গী, বিদায়পুর এবং নদীর ও-পাড়ে থাকা আঁরোয়া, খোসনগর, ন-ডাঙাল, যাত্রা, গুনসীমা প্রভৃতি গ্রামগুলির মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করা। |
বিশেষত বর্ষাকালে। কারণ, বর্ষার জল ভেঙে পঞ্চায়েত আসা-যাওয়া, কিংবা নদীর অন্য দিকে থাকা বেশ কয়েকটি হাটে সব্জি বিক্রির জন্য বা স্কুল পড়ুয়াদের যাতায়াতের সুবিধার কথা ভেবে সর্বদলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ঠিক হয়েছিল পঞ্চায়েতের নিজস্ব তববিল, কিছু বিআরজেএফ ও একশো দিনের কাজ প্রকল্পের টাকা গিয়ে তৈরি হবে কজওয়েটি। সেই মতো প্রায় ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কেনা হয় পাইপ।
কিন্তু তার পর পরিস্থিতি বদলে যায়। এলাকার লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই এলাকায় তৃণমূল শক্তিশালী হতে শুরু করছিল। বিধানসভা নির্বাচন উত্তর আরও জোরালো হয় তৃণমূল। সিপিএমের বেশ কিছু নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যকে নিয়ে প্রধানের বিরুদ্ধে আনাস্থা আনা হয়। আনাস্থা পাশ হয়। ইতিমধ্যেই ১১ জনের মধ্যে সিপিএমের একজন পঞ্চায়েত সদস্য নিখোঁজ হয়েছেন, এক পঞায়েত সদস্য মারা গিয়েছেন ও এক জন পদত্যাগ করেছেন। ফলে সদস্য সংখ্যা ১১ থেকে কমে ৮ এ দাঁড়ায়। ৮জনের মধ্যে ৫ জন সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। সঙ্গী হিসেবে পায় ফব ও সংগ্রেস সদস্যকে। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল।
এর পর থেকেই আগের বোর্ডের ভাবনা কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছে বলে মনে করছেন সিপিএমের দুবরাজপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক বলরাম ঘোষ। তিনি বলেন, “এত দিনে কাজ হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।” পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সেচ দফতরের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় আনুমতি নেওয়ার কাজও বাকি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা চিন্ময় ভাণ্ডারী, গণেশ কোঁড়া বলেন, “পাইপগুলো আসতেই আশা জেগেছিল যে, সেতু হবে। কারণ আষাঢ় থেকে আশ্বিন মাস খুব কষ্ট করেই নদী পারাপার করতে হয়। কিন্তু এখন যা অবস্থা, এই বর্ষার আগেই সেতু হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই।” এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ গিয়াসউদ্দিন এবং প্রধান শিউলি ডোম অবশ্য বলেন, “কাজের নিরিখে গত বছরে কেন্দ্রীয় সরকারের পঞ্চায়েত মন্ত্রক থেকে পুরস্কৃত হয়েছিল এই পঞ্চায়েত। তাই কোনও উন্নয়ণমূলক কাজ ফেলে রাখার অভিপ্রায় আমাদের নেই।” তাঁদের সাফাই, “একটি কজওয়ে তৈরি করতে অনেক টাকা লাগবে। কিন্তু যে খাতের টাকা খরচ করে তা তৈরির কথা ছিল, নতুন বোর্ড গঠন করার পর সেই টাকা পাওয়া যায়নি। ঠিক হয়েছে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তববিল ও কিছুটা ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা দিয়ে ধাপে ধাপে কাজটি করিয়ে দেওয়া হবে এবং সেটা যত শীঘ্র সম্ভব।” দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এক বছরেরও বেশি সময় ধরে হিউম পাইপ পড়ে রয়েছে এই তথ্য আমার জানা নেই। তবে কোনও পঞ্চায়েত যদি মনে করে নিজস্ব তহবিল থেকে কোনও কাজ করাবে, সেটা আমাকে নাও জানাতে পারে।” |