লরি ছিনতাই রুখতে এ বার লরিতে জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, গত জুলাই মাসে দুর্গাপুরের কোকওভেন থানায় টিএমটি বার বোঝাই একটি লরি ছিনতাই করেছিল দুষ্কৃতীরা। লরিতে লাগিয়ে রাখা জিপিএস থেকে তথ্য নিয়ে মাল-সহ সেই লরি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “জিপিএস লাগানো থাকলে ছিনতাই হওয়া লরির অবস্থান সহজেই জানা সম্ভব।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর ১৪ জুলাই রাতে কোকওভেন থানা এলাকার হ্যানিমান সরণির পুরনো টোলট্যাক্সের কাছে ১৫ মেট্রিক টন টিএমটি বার বোঝাই একটি লরি ছিনতাই করে দুষ্কৃতীরা। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, লরিটিতে জিপিএস সিস্টেম চালু করা আছে। কলকাতার যে সংস্থা ওই সিস্টেম লরিতে লাগিয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। সংস্থার কাছ থেকেই ছিনতাইয়ের পরে লরিটি কোথায় কোথায় গিয়েছে, তার অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ জোগাড় করা হয়। এরপর তা গুগল ম্যাপে ফেলে জায়গাগুলি সম্পর্কে নিশ্চিত হয় পুলিশ। জানা যায়, লরিটি অঙ্গদপুর, গ্যামন ব্রিজ, ডিভিসি মোড় হয়ে কাঁকসা থানার আড়রা, গোপালপুরে যায়। পরে আবার ওই রুটেই ফিরে আসে দুর্গাপুর শহরে। ইস্পাত নগরীর সিআর দাস রোডে লরিটি বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে বলেও খোঁজ মেলে। একই জায়গায় লরিটির ঘোরাঘুরি দেখে পুলিশের ধারণা হয়, আশেপাশেই কোথাও ইস্পাতের বারগুলি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তল্লাশিতে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অবৈধ লোহার এক করবারি বারগুলি নিয়ে রানিগঞ্জের এক কাঁটায় পাঠিয়ে দিয়েছে। সেখানে হানা দিয়ে পুলিশ জানতে পারে সেগুলি অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। পরে অন্ডাল ও দুর্গাপুর থানা এলাকার মাঝামাঝি এক জায়গা থেকে বার বোঝাই লরিটিকে আটক করে পুলিশ। ধরা পড়ে ছয় দুষ্কৃতীও।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা বাহিনীতে প্রথম জিপিএস ব্যবহার করা হয়েছিল। কৃত্রিম উপগ্রহ মারফত অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য মেলে এই পদ্ধতিতে। ২০০২ সালে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও এর ব্যবহার শুরু হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় সড়কে লরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে মাঝে মাঝেই।অনেক সময়েই কিনারা করতে বেগ পেতে হয় পুলিশকে। কিন্তু জিপিএস সিস্টেম লাগানো থাকলে লরি খুঁজে পাওয়ার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। এডিসিপি (পূর্ব) বলেন, “লরি মালিকরা যদি সচেতন হয়ে জিপিএস সিস্টেম লাগিয়ে নেন তাহলে বিপাকে পড়বে দুষ্কৃতীরা।”
বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছেন লরি মালিকরা? কাঁকসা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক সদস্য বলেন, “জিপিএসের বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু সেভাবে ব্যাপারটি নিয়ে আমরা এখনও ভাবিনি।” প্রায় একই কথা শুনিয়েছেন কলকাতার যে সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে গাড়িতে জিপিএস সিস্টেম লাগিয়ে আসছে সেই সংস্থার সিইও দেবব্রত দাস। তিনি বলেন, “তেমন আশানুরূপ বাজার নেই। অথচ টেকনোলজি নির্ভর এই যুগে তা হওয়ার কথা নয়।”
কিন্তু এই অনীহা কেন? অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’র দুর্গাপুর শাখার সভাপতি সমীর বসুর ব্যাখ্যা, জিপিএস নিয়ে লরি মালিকদের অজ্ঞতা এর অন্যতম প্রধান কারণ। |