রোগে ভুগে ফের এক বাসিন্দার মৃত্যু হল ডুয়ার্সের বন্ধ দলমোড় চা বাগান এলাকায়। শুক্রবার ভোর নাগাদ মৃত ওই ব্যক্তির নাম কুমার খুলাল (৫৮)। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন থেকে যকৃতের রোগে ভুগছিলেন। স্থানীয় শ্রমিকদের অভিযোগ, জানানোর পরেও প্রশাসনের কর্তারা চিকিৎসার বন্দোবস্ত না করায় ওই ব্যক্তি মারা যান। এ দিনের ঘটনা নিয়ে গত সাত মাসে ওই বাগানে ২৫ জনের মৃত্যু হল।
বন্ধ বাগানে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য কর্তারা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “তিন মাস আগে ওই ব্যক্তির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসা চলাকলীন তাঁকে জোর করে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় পরিবারের লোক।” স্বাস্থ্য কর্তাদের ওই বক্তব্য মেনে নিচ্ছেন না বাগানের শ্রমিকরা। তাঁদের অভিযোগ, ৩ সপ্তাহ আগে স্থানীয় বিডিওকে লিখিত ভাবে জানানো হয় ওই ব্যক্তি সহ পাঁচ জন অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে কেউ বাঁচবে না। মাদারিহাট-বীরপাড়ার বিডিও মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে পাঁচ জনকে ২৪০ টাকা দিয়ে দায় সারেন।
ঘটনার খবর পেয়ে উদ্বিগ্ন জলপাইগুড়ির জেলা শাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ওই ধরণের চিঠি বা অসুস্থদের তালিকার কথা বিডিও আমাকে জানাননি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। এ ছাড়াও ওই বাগানের অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য স্বাস্থ্য কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য কর্তা বলেন, “বিডিও-কে দেওয়া চিঠির কথা জানি না। খোঁজ নিয়ে ওই তালিকা দেখে দ্রুত অসুস্থদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।” মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকের বিডিও পেম্বা শেরপা অবশ্য বলেন, “এলাকায় মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ ওই সময় কেউ ছিলেন না জানতে পারি। পরে দুই ইউনিট করে জিআর দেওয়া হয়।
গত বছর ২৯ জুলাই থেকে দলমোড় চা বাগান বন্ধ। সাত মাস ধরে চরম অভাবের মধ্যে দিন কাটছে এলাকার শ্রমিক ও বাসিন্দাদের। বাধ্য হয়ে তাঁরা জঙ্গলের কচু ও শাক পাতা সেদ্ধ করে খেয়ে খিদে মেটাচ্ছে। এলাকায় রোগ ছেয়ে গেলেও চিকিৎসা পরিষেবা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বন্ধ বাগানে দেড় হাজার টাকা করে যে মাসিক অনুদান দেওয়া হয় ওই বাগানে সেটা চালু না হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। বাগানের আরএসপি দলের শ্রমিক নেতা বিষ্ণু ঘাতানি বলেন, “পাঁচ গুরুতর অসুস্থ। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে যে কোনও সময় মারা যেতে পারে। এটা জানিয়ে বিডিও চিঠি লিখে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জানি না কি হবে।” এক মাস আগে বন্ধ ঢেকলাপাড়া বাগানের ১৫ জন অসুস্থ শ্রমিককে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। দলমোড় বাগানের অসুস্থ বাসিন্দাদের জন্য ওই ব্যবস্থা নয় কেন শুক্রবারের ঘটনার পরে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। |