সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে যে পরীক্ষা হওয়ার কথা, তা করাতে এক এডস আক্রান্তকে বেসরকারি পরীক্ষাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শহরের এডস আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন হাসপাতালের সুপার অসিতবরণ সামন্তের কাছে এই অভিযোগ জানিয়েছে।
ওই সংগঠনের সম্পাদক পরিমল রায় অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার হাসপাতালের রাধারানি ওয়ার্ডে হিরাপুরের বাসিন্দা এক এডস আক্রান্ত ভর্তি হন। রবিবার ওয়ার্ডে কতর্ব্যরত এক চিকিত্সক ও নার্সেরা বাইরে থেকে কয়েকটি পরীক্ষা করিয়ে আনতে বলেন তাঁকে। অভিযোগ, ব্যয়সাপেক্ষ চারটি পরীক্ষা করাতে বলে সাদা কাগজে তা লিখেও দেন সংশ্লিষ্ট চিকিত্সক। তার মধ্যে অন্যতম, রক্তে শ্বেতকণিকার সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ‘সিডিফোর’ পরীক্ষাও। একটি নির্দিষ্ট ‘ডায়াগনস্টিক সেন্টারে’ই ওই পরীক্ষাগুলি করানোর জন্য নার্সেরা রোগীর বাড়ির লোকজনকে পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ। পরীক্ষাগুলি করাতে রোগীর বাড়ির লোকেদের ওই সেন্টারে ২৪০০ টাকা জমা দিতে হয়।
পরিমলবাবু জানান, তাঁদের সংগঠনের সদস্যেরা পরে হাসপাতালের এডস আক্রান্তদের সহায়তা কেন্দ্রে গিয়ে জানতে পারেন, ওই পরীক্ষাগুলির সব ক’টিই হাসপাতালে বিনামূল্যে হওয়ার কথা। তাঁরা তখন ওই বেসরকারি পরীক্ষাগারে গিয়ে টাকা ফেরত চান। ওই পরীক্ষাগার কর্তৃপক্ষও তা ফেরতও দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিত্সক বা নার্সেরা কী ভাবে একটি বেসরকারি কেন্দ্রের নাম লিখে এই পরীক্ষাগুলি করানোর পরামর্শ দিলেন, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিমলবাবু।
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “ঘটনার তদন্ত হবে।” তবে সুপার অসিতবরণ সামন্তের বক্তব্য, “যে সাদা কাগজে চিকিত্সক পরীক্ষাগুলি লিখে দিয়েছিলেন, তা নিয়ে রবিবারই ওই সংগঠনের আমার কাছে আসা উচিত ছিল। ঘটনার দু’দিন পরে অভিযোগ জানানো হয়েছে। বুঝতে পারছি না, চিকিত্সকের নাম ভাঁড়িয়ে কেউ সাদা কাগজে পরীক্ষা করানোর কথা লিখে দিয়েছেন কি না। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা।”
হাসপাতাল সুপারের এই বক্তব্যের জেরে আবার প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের ওয়ার্ডের ভিতর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। হাসপাতালের মধ্যে চিকিত্সকের পরিচয় দিয়ে কী ভাবে অন্য কেউ অবাধে চলাফেরা করতে পারে, সে প্রশ্ন উঠেছে। সুপার অবশ্য এ ব্যাপারে আর কোনও কথা বলতে চাননি। তবে হাসপাতালের কর্মীদের অভিযোগ, প্রায় প্রতি দিনই নানা ওয়ার্ডে অবাধে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন নার্সিংহোম বা বেসরকারি পরীক্ষাগারের এজেন্টরা। এমনকী, হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নানা প্রতিশ্রুতি ও ভাল চিকিত্সার প্রলোভন দেখিয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি করানোর চেষ্টাও হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালেই যে পরীক্ষাগুলি বিনামূল্যে হওয়ার কথা, রোগীদের তা বাইরে থেকে করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। সচেতনতার অভাবে তাঁদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন রোগীরাও।
হাসপাতালে তৃণমূলের কর্মচারী সংগঠনের নেতা সমীর চক্রবর্তীর বক্তব্য, “এখানে দালাল চক্র বেশ সক্রিয়। কর্র্তৃপক্ষ পুলিশের সাহায্যে তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কিছু দিন পরেই ফিরে আসছে তারা। হাসপাতালের অনুসন্ধান কেন্দ্র থেকেও ভর্তি থাকা রোগীর বাড়ির লোকজনদের এ ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু দালালরাজ তাতেও ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।” |