সরস্বতীকে বন্দনায় সাজ ধুতি-শাড়িতে
বৃহস্পতিবার ভ্যালেন্টাইন দিবসে প্রেম গোপন আড়াল খুঁজলেও শুক্রবার স্বয়ং বিদ্যার দেবীই প্রেমের ছাড়পত্র। তাই বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ির শপিং মল, পার্ক, মাল্টিপ্লেক্স সিনেমা হল বা রেঁস্তোরায় জিনস-টপ, টি শার্ট পড়া মুখগুলো সর্তক আড়ালে লুকোলেও শুক্রবার শাড়ি, ধুতি পাঞ্জাবিতে সগর্বে ঘুরে বেড়িয়েছে স্কুল কলেজ থেকে পার্কে। সে কবেই রবীন্দ্রনাথ ফাগুন হাওয়ার রঙে রঙে, গোলাপ জবা পারুল পলাশ মিলিয়ে দিয়েছিলেন। জবা আর পারুল না হলেও দুই হাজার তেরোর বসন্তের শুরুতে তিস্তা-মহানন্দার পাড়ে পরপর দু দিন প্রেমের মেজাজ। গোলাপ আর পলাশ একাকার। বৃহস্পতিবার যদি গোলাপের হয়, পাঁজি মেনে শুক্রবার ছিল পলাশের। ভ্যালেন্টাইন ডে না হয়, ঘোষিত প্রেমের দিন। সেই সঙ্গে বঙ্গ ঐতিহ্যে সরস্বতী পুজোর বসন্ত পঞ্চমী অঘোষিত প্রেম দিবস। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর চিরচরিত প্রেমিকা নীরাকে লিখেছিলেন, তোমায় দেখি আমি সারা বছরে মাত্র দুদিন। দোল ও সরস্বতী পুজোয়-দুটোই খুব রঙের মধ্যে।
ভ্যালেন্টাইন ডের পর দিনই সরস্বতী পুজো। পরপর দুদিনের এই প্রেম সুযোগ হাতছাড়া করেনি জলপাইগুড়ির একটি কলেজের তৃতীয় বর্ষের শ্রেয়সী। বৃহস্পতিবার বন্ধুর সঙ্গে তিস্তা উদ্যান হয়ে শহরের একটি অভিজাত হোটেলের কফিশপে কাটিয়েছে। ভ্যালেন্টাইন ডে’তে কালচে জিনস আর হালকা সবুজ টপ। শুক্রবার শ্রেয়সী পাটভাঙা শাড়িতে কলেজে অঞ্জলি সেরে বন্ধুদের সঙ্গে স্কুল-কলেজে ঠাকুর দেখতে বেরোয়।
শুক্রবার ছবিটি তুলেছেন সন্দীপ পাল।
বিকাল তিনটা নাগাদ পোস্টঅফিস মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রেয়সী বলল, “সন্ধ্যা য়শাড়ি পড়ব। পুজোর সময়ে যে শাড়িগুলো পড়া হয় না, সেগুলি সরস্বতী পুজোর জন্য তুলে রাখি। তাই আজকে শাড়ি ছাড়া কিছু ভাবতেই পারছি না।” পড়ন্ত বিকালে শ্রেয়সী বন্ধুকে এসএমএসে সন্ধ্যায় বার হওয়ার সময় জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
শিলিগুড়ির সেবকরোডের একটি মলে বৃহস্পতিবার দিনভর আড্ডা দিয়েছে পর্ণা, দয়িতা, ঋতম, অভ্ররা। শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুল থেকে ফের ওদের আড্ডার শুরু। ধুতি পাঞ্জাবি পড়ে ঋতমের কথায়, “এই প্রথম ধুতি পড়লাম। সামলে চলতে হচ্ছে। তবে দারুণ উত্তেজনা হচ্ছে। সন্ধ্যায় বাঘাযতীন পার্কে সবাই আসবে, ওখানেও ধুতি পড়ে যাব।” জিনস হোক বা ধুতি, টপ বা শাড়ি পড়া শ্রেয়সী, পর্নাদের মোদ্দা বক্তব্য হল, ভ্যালেন্টাই ডে হোক আর সরস্বতী পুজো। সাজগোজ করে একটু নিশ্চিন্তে প্রেম করা। সদ্য কলেজে ঢোকা জলপাইগুড়ির অভিপ্সার কথায়, “সরস্বতী পুজোর দিন বাড়িতে অনেকটাই ছাড় পাওয়া যায়। রাস্তায় কেউ দেখে ফেললেও বন্ধু বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। তাই এই দিনের সুযোগ কেউ ছাড়ে। ভ্যালেন্টাইন দিনে বেরিয়েছিলাম। একটু লুকিয়ে চুরিয়ে।”
মোবাইল টেক্সটে, ফেসবুক চ্যাটে বা মল বা পার্কগুলিতে প্রেম চলে। তবে এই দুই দিন চোখরাঙানির আশঙ্কা কম। শুক্রবার সে দৃশ্য দেখাও গেল। জলপাইগুড়ির রেসকোর্স পাড়ার একটি স্কুলে ঢোকার কমবয়সী ভিড়ে তিন দিকের রাস্তায় তীব্র যানজট। তারই মধ্যে কোনওমতে পাশ কাটিয়ে ঢুকতে চেষ্টা করছে একটি বাইক। কমবয়সী চালকের পাঞ্জাবি ধরে বসে রয়েছে জমকালো শাড়ির তরুণী। যানজট ছড়াতে পুলিশকর্মীরা তখন রিকশা, গাড়ির চালকদের ধমকে যাচ্ছে। অফিসারের কড়া চোখের সামনে ভয় মুখ লুকোতে ব্যস্ত পাঞ্জাবি পরা তরুণ। মুচকি হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন পুলিশ অফিসারও। কবিও বলেছিলেন না, ফাগুন হাওয়ায় বাঁধন ছাড়া প্রাণ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.