গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাং খুনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার পাঁচ প্রথম সারির নেতাকে গ্রেফতার করল সিবিআই। শুক্রবার সকালে দার্জিলিঙের রেল স্টেশনের কাছে টাক্সি স্ট্যান্ড থেকে তাঁদের ধরা হয়। সিবিআই সূত্রের খবর, ধৃতরা হলেন যুব মোর্চার সভাপতি অলোক কান্তামণি থুলুং, যুব মোর্চার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক পূরণ থামি, বিদ্যার্থী মোর্চার সভাপতি কিসমত ছেত্রী, বিদ্যার্থী মোর্চার সাধারণ সম্পাদক কেশবরাজ পোখরেল এবং দার্জিলিং পুরসভার প্রাক্তন সহকারী চেয়ারম্যান দিনেশ গুরুঙ্গ। সকলেই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের ঘনিষ্ঠ বলে দল সূত্রে জানা গিয়েছে।
মদন তামাংকে ২০১০ সালের ২১ মে সকালে দার্জিলিংয়ের ক্লাব সাইট রোডে গলা কেটে খুন করা হয়। সেই ঘটনা নিয়ে মদন তামাংয়ের স্ত্রী তথা গোর্খা লিগের সভানেত্রী ভারতী তামাং সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা দায়ের করেছেন, তার পরবর্তী শুনানি সামনের ১৮ ফেব্রুয়ারি। সম্প্রতি ভারতীদেবী কলকাতায় এসে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছিলেন।
মদন তামাং খুনে মোট ৩১ জনের নামে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নিকল তামাংকে গ্রেফতার করা হয় ওই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই। তবে গ্রেফতারের কয়েকদিন পরেই তিনি শিলিগুড়ির কাছে পঞ্চনইতে সিআইডি হেফাজত থেকেই পালিয়ে যান বলে অভিযোগ। এ দিন পর্যন্ত তিনি ফেরার। আরও ৯ জনকে আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সকলেই জামিনে মুক্ত হন। আর এক জন মারা গিয়েছেন। |
পলাতক আরও ১৫ জন। ধৃত পাঁচ জনকে দার্জিলিং সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাঁদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ফের তাঁদের আদালতে হাজির করাতে হবে। মোর্চার তরফে এ দিন দু’জন আইনজীবী তরঙ্গ পন্ডিত এবং জ্যোতিকুমার রাই ধৃতদের হয়ে আদালতে সওয়াল করেন। তাঁরা দু’জন মোর্চার শীর্ষস্তরের নেতা এবং গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (জিটিএ) সদস্য। তাঁরা বলেন, “সিবিআই ধৃতদের সকলকেই সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বিচারক তাঁদের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। এটাই আমাদের জয়। এ ছাড়া এটি বিচার বিভাগীয় ব্যপার বলে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”
এত দিন পরে কেন তড়িঘড়ি এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হল? মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতের রোষের ভয়েই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। সুপ্রিম কোর্টে ভারতীদেবীর দায়ের করা মামলাটির আগের শুনানিতে ওই খুনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে কেন্দ্র, রাজ্য ও সিবিআইয়ের তরফে যে হলফনামা দেওয়া হয়, তাতে আদালত সন্তুষ্ট হয়নি বলে গোর্খা লিগের নেতারা দাবি করেছিলেন। তাঁদের দাবি, প্রচুর তথ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই ঘটনার তদন্ত কেন শম্বুক গতিতে চলছে, তা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠেছিল। গোর্খা লিগের তরফে আবেদন করা হয়েছিল, অভিযুক্তেরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাই এই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের কাছ থেকে নিয়ে বিশেষ কোনও তদন্তকারী দল গঠন করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ফের আদালতের রোষের মুখে পড়তে চাইছে না কেউই। মোর্চার এক নেতার কথায়, “এ বারও যদি তদন্তের বিশেষ কোনও অগ্রগতির খবর আদালতকে সিবিআই দিতে না পারে, তা হলে সব পক্ষই সমস্যায় পড়বে। সেই পরিস্থিতি যাতে না হয়, তাই রাজ্য পুলিশকে সঙ্গে নিয়েই তড়িঘড়ি তল্লাশিতে নেমে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হল।” যে কারণে পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে মোর্চার তরফেও এখন আইনের পথে চলার সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের সঙ্গে মোর্চার সম্পর্কের অবনতির পরে মমতা-ভারতী সাক্ষাৎকারকে ভাল চোখে দেখেননি গুরুঙ্গ। বরং মমতা মোর্চা বিরোধী শক্তিগুলিকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন। কয়েক দিনের মধ্যেই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা নিয়ে কিন্তু এ বার গুরুঙ্গ কোনও মন্তব্যই করতে চাননি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও বলেন, “এই বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আইন আইনের পথে চলবে। মুখ্যমন্ত্রী সেটা বার বার স্পষ্ট করে দিয়েছেন।”
তবে ভারতীদেবীর কথায়, ‘‘বহু দিন ধরেই আমি ন্যায়ের জন্য লড়ছি। এ দিন ৫ জনকে গ্রেফতার করায় আমি সন্তুষ্ট। আমি চাই ওই ঘটনায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হোক।” |