|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
উদার শিল্পীমনের পরিচয় |
সংগ্রহশালার ধারণা ব্রিটিশদের সঙ্গেই ভারতে এসেছিল। তবে প্রাচীন যুগেও মঠ-মন্দিরে বিভিন্ন ধরনের দেবমূর্তি, পুজোর উপকরণ, পুথি-পাণ্ডুলিপি সংগৃহীত হত। মুঘল আমলে মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়ের বই সংগ্রহের অনেক নজির আছে। সংগ্রাহক হিসেবে সম্রাট জাহাঙ্গির বোধহয় সবচেয়ে বেশি পরিচিত, আর অনেকটা মুঘল দরবারের প্রভাবে সতেরো শতক থেকে ঔপনিবেশিক আমল পর্যন্ত ছোট ছোট দেশীয় রাজ্য শিল্পের পৃষ্ঠপোষণা এবং সংগ্রহে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। জয়পুর ও যোধপুরের সংগ্রহশালা, রামপুরের নবাবের গ্রন্থাগার এর চমত্কার উদাহরণ। ব্রিটিশ প্রভাবে এই আগ্রহ আরও বাড়ল, তবে মূলত তা সীমাবদ্ধ ছিল পশ্চিমী ধাঁচে প্রাসাদ নির্মাণ করে বিদেশি মূর্তি ছবি আসবাব ঝাড়বাতি দিয়ে সাজানোয়, যেমন হায়দরাবাদের সালার জঙ্গ সংগ্রহ কি কলকাতার মার্বেল প্যালেস। তবে কেউ কেউ, যেমন সয়াজি রাও ভারতীয় শিল্পেও আগ্রহী ছিলেন, যা বডোদরা-য় তাঁর সংগ্রহশালা দেখলে বোঝা যায়।
মুম্বইয়ের বিশিষ্ট পার্সি বণিক জামশেদজি টাটা-র হাতেই আজকের বিশ্বব্যাপী টাটা-সাম্রাজ্যের যাত্রা শুরু। তাঁর মৃত্যুর পর (১৯০৪) ব্যবসার হাল ধরেন দুই ভাই দোরাব (১৮৫৯-১৯৩২) ও রতন টাটা (১৮৭১-১৯১৮)। দু’জনেই ছিলেন সংস্কৃতিমনস্ক ও অসামান্য সংগ্রাহক। ১৯১৩-য় পাটলিপুত্র উত্খননে রতন টাটা-র আর্থিক সহায়তা ভারতের প্রাচীন ইতিহাস উদ্ধারে যেমন দিকচিহ্ন, তেমনই নজিরবিহীন দুই ভাইয়ের বিপুল ব্যক্তিগত সংগ্রহ মুম্বইয়ের প্রিন্স অব ওয়েলস মিউজিয়মে (বর্তমানে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বস্তু সংগ্রহালয়) প্রদান। ১৯২০-তে রতন এবং ১৯৩৩-এ দোরাব টাটার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁদের সংগ্রহ এখানে দান করা হয়—মোট শিল্পসামগ্রীর সংখ্যা ছিল ৫,১৬১। ভারতে কোনও ‘পাবলিক মিউজিয়ম’-এ এত বড় ব্যক্তিগত দানের উদাহরণ নেই। দুটি গ্যালারি এখানে ওঁদের নামে চিহ্নিত রয়েছে।
সেই ‘টাটা সংগ্রহ’-এর বিস্তারিত পরিচিতি পাওয়া গেল প্রতাপাদিত্য পাল সম্পাদিত ইস্ট মিটস ওয়েস্ট/ আ সিলেকশন অব এশিয়ান অ্যান্ড ইয়োরোপিয়ান আর্ট ফ্রম দ্য টাটা কালেকশন ইন দ্য ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ বস্তু সংগ্রহালয় (মার্গ পাবলিকেশনস ও সিএসএমভিএস, ১৯৫০.০০) বইয়ে। প্রতিটি বিষয়ই বিশেষজ্ঞদের কলমে আলোচিত, সঙ্গে অজস্র ছবি। অস্ত্রশস্ত্র, বস্ত্রশিল্প, ভারতীয় চিত্রকলা ও পাণ্ডুলিপিচিত্র, ইয়োরোপীয় শিল্প, তিব্বত-চিন-জাপান-মায়ানমারের শিল্প— দুই সংগ্রাহকের আগ্রহের ব্যাপ্তি ও গভীরতার সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তাঁদের উদার শিল্পীমনের পরিচয়। |
|
|
|
|
|