দক্ষিণ কলকাতা
সেতুবন্ধের প্রতীক্ষায়
পার কর আমারে
রাজীর্ণ কয়েকটি নৌকা দড়ি দিয়ে বাঁধা। আর তার উপর দিয়েই চলেছে আদিগঙ্গা পারাপার। কালীঘাট থেকে চেতলা যেতে এ ভাবেই আদি গঙ্গা পারাপার করেন যাত্রীরা। পেরতে সময় লাগে মাত্র মিনিট দু’য়েক। সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় হাজার লোকের এ ভাবেই যাতায়াত। বহু বছর ধরেই ছবিটা সেই একই রকম। অথচ পরিকাঠামোর কোনও উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি রাজ্য সেচ দফতরের উদ্যোগে একটি সমীক্ষায় যাতায়াতের জন্য এখানে আধুনিকমানের পরিকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এখানে যে ভাবে পারাপার করতে হয় তা বিপজ্জনক। আমি এই জায়গাটি ঘুরে দেখেছি। এখানে সেতু নির্মাণও করা যেতে পারে। সুষ্ঠু ভাবে কী ভাবে পারাপার করা যায় তার জন্য আমার দফতরের আধিকারিকদের একটি পরিকল্পনা করতে বলেছি। তার পরেই এখানে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যাত্রীরা বহু দিন ধরেই এই ভাবে যাতায়াত করেন। এই ধরনের পারাপারে ঝুঁকি থাকেই। একমাত্র সেতু নির্মাণ করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। সেচ দফতরকে সেতু নির্মাণের বিষয়ে জানিয়েছি।” সেচ দফতর সূত্রে খবর, পারাপারের জন্য সেতু নির্মাণের বিষয়টি অনেক আগেই ভাবা হয়েছিল। কিন্তু অর্থাভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
তবে পারাপারের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। ভাটার সময়ে তিনটি নৌকা বাঁধা থাকে ঠিকই। কিন্তু, দু’দিকে ধরার জন্য কোনও বাঁশ বা রেলিং থাকে না। সব চাইতে বেশি সমস্যা হয় ভরা কোটাল এবং বর্ষায়। তখন জল বাড়ার ফলে দু’টি নৌকা খুলে দিতে হয়। সেই সময়ে একটি নৌকা চালিয়ে মাঝি পার করে দেন যাত্রীদের। যাত্রীদের কাছে মাথাপিছু এক টাকা করে নেওয়া হয়। চেতলা ঘাটে একটি টিকিট ঘরও আছে যা খোলা থাকে ভোর ৬টা থকে রাত ১০টা পর্যম্ত।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, সেচ দফতর দরপত্রের মাধ্যমেই একটি ঠিকাদারি সংস্থাকে এক বছরের জন্য যাত্রী পারাপারের পারিকাঠামো এবং সমস্ত পদ্ধতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়োগ করা হয়। তারাই নৌকা রাখা এবং মাঝিদের দিয়ে যাত্রীদের পারাপারের ব্যবস্থা করে।
বর্তমানে যে ঠিকাদারি সংস্থা দায়িত্বপ্রাপ্ত তার এক কর্মী মজফ্ফর মণ্ডল বলেন, “জলের গতিবিধির ওপর নজর রেখেই আমাদের নৌকা ঠিক করতে হয়। আমাদের সঙ্গে সব সময়েই মাঝি থাকেন। ভাটার সময়ে তাঁরাই নৌকা বেঁধে রাখেন। কিন্তু জোয়ার বা ভরা কোটাল থাকলে তাঁরা একটি নৌকা দিয়েই আদিগঙ্গা পারাপার করান। সেই সময়ে নৌকায় যাত্রীও কম নেওয়া হয়, যাতে নৌকা ডুবে না যায়।” রাজু সামন্ত নামে এক যাত্রী বললেন, “কাজের প্রয়োজনে প্রায় রোজই এই ঘাট দিয়ে চেতলা ঘাটে দ্রুত যাতায়াত করি। তবে বর্ষায় যাতায়াত করতে ভয় করে। এখানে পারাপারের জন্য সেতু তৈরি করা জরুরি।”
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, গড়িয়ার দিক থেকে আদিগঙ্গার সংস্কারের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। এর পর এখানেও হবে। পারাপারের জন্য উন্নত প্রকল্প গ্রহণ করা ছাড়াও এখানে আরও আলো লাগাতে হবে। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে এলাকার বর্তমান পরিকাঠামোর সামগ্রিক পরিবর্তন হবে। সেচ দফতর এই বিষয়গুলি নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে ওই আধিকারিক জানান।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.