উত্তর কলকাতা
ত্রস্ত দমদম
রাতের কড়া নাড়া
মাঝেমধ্যেই বোমা-গুলির আওয়াজে মাঝ রাতে ঘুম ভাঙছে দমদমের।
চাষিপাড়া, শেঠবাগান, দমদম স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে দমদম পার্কের শ্যামনগর বা নীলকুঠী অঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বোমা-গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই। সম্প্রতি পর পর দু’টি জোড়া খুনের ঘটনায় চাপা আতঙ্ক ছড়িয়েছে
এলাকায়। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি দমদমে ফিরে এল দুষ্কৃতী-তাণ্ডব?
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, জোড়া খুন ছাড়াও গত কয়েক মাসে দমদমের বেশ কিছু অঞ্চলে বিভিন্ন সময়ে বোমা-গুলির শব্দে এলাকায় যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তার পিছনে রয়েছে প্রোমোটিংয়ের জন্য এলাকা দখল ও দুষ্কৃতীদের একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার লড়াই। এই লড়াইয়ে দমদমের বেশ কিছু পুরনো দাগি দুষ্কৃতীর পাশাপাশি উঠে এসেছে নতুন দুষ্কৃতীদের নামও। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দুষ্কৃতীদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে তাঁদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ, মাস দু’য়েক আগে দমদম পার্কের লালকুঠি এলাকায় মাঝ রাতে বোমা-গুলির আওয়াজ শুনতে পান এলাকার মানুষ। ওই এলাকার একটি বস্তিতে এসে কিছু দুষ্কৃতী বোমা-গুলি ছুড়ে চলে যায় বলেও অভিযোগ। বস্তির বাসিন্দারা পুলিশের কাছে অভিযোগে জানান, দুষ্কৃতীরা তাঁদের শাসিয়ে বলেছে, তারা গেদুকে খুঁজতে এসেছে। এলাকায় গিয়ে পুলিশ গুলির খোল উদ্ধার করে। দমদম পার্কের বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এর পরে ওই রাস্তা দিয়ে কোন সাহসে যাতায়াত করবেন তাঁরা?
শুধু এই ঘটনাটিই নয়, এলাকাবাসীরা জানান, চাষিপাড়ায় বোমা-গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে এমনকী, রাত ১০টাতেও। দিন কয়েক আগে শ্যামনগরে একটি নির্মীয়মাণ ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে বোমা ছুড়তে ছুড়তে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। শ্যামনগরের এক বাসিন্দা বললেন, “আগে ভাবতাম কোথাও বোধহয় গ্যাস সিলিন্ডার বা টিউব লাইট ফাটল।
এখন বুঝতে পারি কোনটা বোমার আওয়াজ, কোনটা গুলির।”
যদিও পুলিশের দাবি, কুখ্যাত দুষ্কৃতীরা এখন এলাকাছাড়া। জনপ্রতিনিধিরাও জানালেন, ওই দুষ্কৃতীদের তাঁরা এলাকায় ঢুকতে দিচ্ছেন না। দমদমের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রবীর পাল বললেন, “গত তিন বছরে এলাকায় গেদু বা রাজেশ নায়েকের মতো দুষ্কৃতীদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।” বিধায়ক সুজিত বসুর কথায়: “দমদমে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব কোনও ভাবেই বরদাস্ত করব না।”
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বার বার কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে?
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, এলাকার দাগি দুষ্কৃতীরা অনেকেই এই মুহূর্তে এলাকাছাড়া হলেও দূর থেকে তাদের নির্দেশেই চলছে প্রোমোটিংয়ের জন্য এলাকা দখলের লড়াই।
প্রোমোটারদের কাছ থেকে তোলা আদায়ে দুষ্কৃতীদের মধ্যে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। এলাকায় সমান সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রও। অভিযোগ, এই দুষ্কৃতীদের যারা মাথা তাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক নেতাদের মদতে পুষ্ট। এক সময়ের দাগি দুষ্কৃতী হাতকাটা দিলীপ, রাজেশ নায়েক বা গেদুরা সকলেই সক্রিয় রয়েছে আড়াল থেকে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজেশ নায়েক এলাকায় না থাকলেও তার দল আজও সমান ভাবে সক্রিয়। গেদুও বর্তমানে এলাকাছাড়া। তা সত্ত্বেও গেদুর বাহিনী তোলা আদায়ে সক্রিয় রয়েছে। কোনও কোনও দুষ্কৃতী আবার পুরনো দল ছেড়ে নতুন দল গড়েছে। যেমন সম্প্রতি দমদমের শেঠবাগানে অভিজিৎ সাহা ও কৌশিক রায়ের খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত বড় পকাই পুরনো দুষ্কৃতীদের এলাকায় অনুপস্থিতির সুযোগে নতুন দল গড়েছিল বলে জেনেছে পুলিশ। শ্যামনগরের যুবক গোরার খুনের পিছনে মূল অভিযুক্ত জগাও নতুন দল তৈরি করছিল বলে মনে করছে পুলিশ। এখান থেকেই শুরু নতুন ও পুরনো দুষ্কৃতীদের দলের মধ্যে লড়াই। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “দমদম এলাকায় প্রোমোটিং বেশি। এখান থেকেই তোলাবাজি-সহ এলাকা দখল নিয়ে নানা ঘটনা ঘটছে। জোড়া খুনের ঘটনায় বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী ধরা পড়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু নতুন তথ্য হাতে এসেছে। আশা করা যায়, কিছু দিনের মধ্যেই বাকি দুষ্কৃতীরা ধরা পড়ে যাবে।”

ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.