|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
দুর্ঘটনার শঙ্কা |
গতিতে ‘কাট’ |
কাজল গুপ্ত |
দু’পক্ষই নিজের দাবিতে অনড়। এক পক্ষের দাবি ‘কাট’ থাকুক, আর এক পক্ষের দাবি ‘কাট’-এর সংখ্যা কমুক।
রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম নয় সল্টলেকে। তবুও ডিভাইডারের মাঝে রাস্তা পারাপারের জন্য রয়েছে অসংখ্য ‘কাট।’ দুর্ঘটনার আশঙ্কা রোধে এবং গাড়ির গতি বাড়াতে এই ‘কাট’ই কমাতে চাইছে প্রশাসন। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, ‘কাট’ কমানো যাবে না। বস্তুত, বাসিন্দাদের একাংশের বাধায় প্রশাসনিক পরিকল্পনাই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়তে চলেছে। এমনকী, বাসিন্দাদের একাংশের দাবি মেনে কয়েকটি জায়গায় ‘কাট’ বাড়ানোও হয়েছে।
|
|
কলকাতায় এমন পরিকল্পনা কার্যকরী হলেও বিধাননগরে রাস্তা পারাপারে ‘কাট’-এর বৃদ্ধি, না কি দুর্ঘটনা রোধে ‘কাট’ কমানো, কোনটি শ্রেয় সে প্রশ্নেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। বাসিন্দাদের দাবি, সল্টলেকে প্রতিটি ব্লকের রাস্তাগুলি মেন রোডের সঙ্গে যুক্ত। কেননা প্রতিটি ব্লকের চার দিকেই রাস্তা। ফলে রাস্তা পারাপারের জন্য ‘কাট’ও বেশি। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা এ ভাবে চলাচল করছেন।
সল্টলেকের প্রশাসনিক চরিত্র বদলেছে। স্রেফ আবাসিকস্থল নয়, পাঁচ নম্বর সেক্টর, অফিসপাড়া, অন্য দিকে বিভিন্ন ব্লকে বেসরকারি সংস্থার দৌলতে লক্ষাধিক মানুষ এই উপনগরীতে যাতায়াত করেন। ফলে গাড়ির সংখ্যার সঙ্গে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশের দাবি, দুর্ঘটনার আশঙ্কার অন্যতম কারণ রাস্তার মাঝে অসংখ্য কাট।
কলকাতার মতো এই সমস্যা সমাধানে বুলেভার্ড সৌন্দর্যায়নের সময় পুলিশ প্রশাসনের পরামর্শমতো রাস্তার ‘কাট’ কমানোর কাজ শুরু করে বিধাননগর পুরপ্রশাসন। কিন্তু ৪ নম্বর ট্যাঙ্ক থেকে কোয়ালিটি মোড় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার পাশের আবাসিকদের একাংশ এর প্রতিবাদ করেন। এমনকী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির তরফে পুরপ্রশাসনের কাছে পর্যাপ্ত সংখ্যক ‘কাট’ রাখার দাবিও করা হয়। এর জেরে কিছু দিন কাজ বন্ধ থাকে। শেষে দাবি মেনে ‘কাট’ রাখা হয় ওই রাস্তায়।
|
|
স্থানীয় ৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির পক্ষে সুপ্রিয় চক্রবর্তী বলেন, “ব্লকগুলির রাস্তার সঙ্গে মেন রোড যুক্ত। সে অনুযায়ী কাট ছিল। তা কমে যাওয়াতে প্রবীণ নাগরিকদের অনেকটা ঘুরে রাস্তা পারাপার করতে হচ্ছিল। এতে বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। তাই কাট বাড়ানোর দাবি করেছি।” স্থানীয় কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাসিন্দাদের দাবির কথা পুরপ্রশাসনকে জানিয়েছি।” শুধু একটি জায়গাতেই নয়, প্রতিবাদ অন্যত্রও হয়েছে।
যত্রতত্র রাস্তা পারাপার না করে একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে পারাপারের ব্যবস্থা থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমে বলে মত প্রশাসনের। কিন্তু বাসিন্দাদের দাবি, শুধু কাট কমালেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবে না। রাস্তার উপরে যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা, সিগন্যাল ব্যবস্থা, ট্রাফিককর্মী মোতায়েন কিংবা জেব্রা ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা করা আশু প্রয়োজন।এই জটিলতাতেই কাট কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বেগ পেতে হচ্ছে পুরপ্রশাসনকে। বিধাননগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ দেবাশিস জানা বলেন, “জনস্বার্থে কাজ করে পুরসভা। জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করা হবে না। দু’টি সমস্যাই গুরুতর। বাসিন্দাদের একাংশ কাট বাড়ানোর পক্ষপাতী। কিন্তু দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমাতে কাট কমানো জরুরি। সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা হবে।”
বাসিন্দাদের একটি সংগঠন বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু প্রশাসনের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “বৃহত্তর স্বার্থেই প্রশাসনকে প্রয়োজনে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে এই পদক্ষেপ করলে সমস্যা হয় না।” |
|
কিন্তু বাসিন্দাদের বোঝাতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন প্রশাসন কিংবা সংগঠনগুলি? জবাবে সদুত্তর মেলেনি কোনও তরফেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি মহলেরই দাবি, তারা বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানের পথ বার করবে। অভিযোগ প্রসঙ্গে বিধাননগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) রণেন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জেব্রা ক্রসিং, সিগন্যাল ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর করা হবে। কাট নিয়ে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রতিটি রাস্তার ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ ভিন্ন। সে ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের দাবি কিংবা পুরপ্রশাসনের পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|