পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
সুরাহা দুরাশা
জীর্ণ সেতুবন্ধন
ক দিকে কলকাতা স্টেশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। অন্য দিকে, লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ি। উল্টোডাঙায় বিধাননগর রোড স্টেশনের কাছেই ক্যানাল সার্কুলার রোড থেকে কলকাতা স্টেশন যেতে হেঁটে পারাপারের কংক্রিটের সেতুটি বহু দিনই জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে। সেটি কবে সারাই হবে সে ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ফলে বিপাকে পড়েছেন এলাকার বাসিন্দা ও রেলযাত্রীরা। কোনওক্রমে কাঠ ও বাঁশের জোড়াতাপ্পি লাগিয়ে চলছে যাতায়াত। যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
১৯৯৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে রাজ্য পরিবহণ দফতর এখানে কংক্রিটের এই সেতুটি নির্মাণ করে। পরবর্তীকালে রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক ভাবে না হওয়ায় সেতুর দু’দিকের সিঁড়ি ভেঙে যায়। সিঁড়ির রেলিংও ভেঙে পড়ে। পারাপারের জন্য বাসিন্দারা বাঁশ এবং কাঠের পাটাতন দিয়ে সিঁড়ি তৈরি করেন। সেই বাঁশের সিঁড়িও এখন জরাজীর্ণ। কোথাও কোথাও দু’টি বাঁশ বা পাটাতনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে বিশাল ফাঁক। এই অবস্থায় যাতায়াত করাই কার্যত দুরূহ হয়ে উঠেছে। সিঁড়ির রেলিংও ভেঙে গিয়েছে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা স্টেশন থেকে প্রায় ১৪টি দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ে। এ ছাড়াও চলাচল করে উত্তর ও দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেন এবং চক্ররেল। রাজ্য পরিবহণ দফতর নির্মিত কংক্রিটের সেতুটির ভগ্নদশা সম্বন্ধে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সেতুটি ভেঙে গিয়েছে শুনেছি। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের বিষয়টি জানিয়েছি। তাঁরা কয়েক দিনের মধ্যে সেতুটি দেখে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবেন।”
লেকটাউন এবং কলকাতা স্টেশন থেকে দ্রুত উল্টোডাঙায় আসতে যাত্রীরা এই সেতু ব্যবহার করতেন। তবে, সিঁড়ির অবস্থা খারাপ হওয়ায় এখন ব্যবহার কমেছে। বর্ষার সময় এই সেতু ব্যবহার করতে ভয় পান এলাকাবাসী। অশ্বিনী রায় নামে এক যাত্রী বললেন, “আমি লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়িতে থাকি। সার্কুলার ক্যানাল রোডে একটি রঙের দোকানে কাজ করি। যাওয়া-আসার পথে সেতু ব্যবহার করতে হয়। এখন সেতুর সিঁড়ির যা অবস্থা তাতে যাতায়াত করতেই ভয় হয়। পড়ুয়ারা প্রাণ হাতে এই সেতু পার হয়। প্রয়োজনীয় এই সেতু প্রায় অকেজো হয়ে পড়ায় প্রচুর সমস্যা হচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বর্ষাকালে বাঁশ, কাঠের পাটাতন ও সিঁড়ি আরও বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও পাটাতন ভেঙে তৈরি হয়েছে গর্ত। পা ফসকালে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ বা পুনর্নির্মাণ হয়নি কেন?
স্থানীয় সিপিএম কাউন্সিলর বিরতি দত্ত বলেন, “পরিবহণ দফতর এই সেতুটি নির্মাণ করলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা ভেঙে যায়। গত বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই বিধায়ক তহবিল থেকে এই সেতুর সংস্কারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। পরিবহণ দফতরকেও বিষয়টি জানানো হয়। পরে, সরকার পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় এই প্রকল্প আটকে যায়। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।”
তিনি বলেন, “এই সেতুর কাছেই কলকাতা পুরসভা একটি ‘আন্ডারপাস’ নির্মাণ করছে। সেতুটি ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে সেতুর যে অংশ ভেঙে পড়েছে সেই অংশটি কাঠ দিয়ে আপাতত সারিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। সেতুটি যত দিন না কংক্রিটের হচ্ছে তত দিন যাতে সুষ্ঠু ভাবে ব্যবহার করা যায় সেই পরিকল্পনার কথাই ভেবেছি।”
পুরকর্তৃপক্ষ জানান, এটি পরিবহণ দফতরেরই প্রকল্প। তাদের অনুমতি ছাড়া এই প্রকল্পে হাত দেওয়া সম্ভব নয়। পরিবহণ দফতরকে এই সেতুর মেরামতির ব্যাপারে আর্জি জানানো হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.