|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ২... |
|
ডিজে মস্তি নাচ |
নহবত নেই। আছে ডিস্ক জকি। লিখছেন শতরূপা চক্রবর্তী |
একের পর এক হিপ-হপ গানের মিশেল।
গানগুলো এমন ভাবে একে অন্যের সঙ্গে জড়িয়ে যে বুঝে ওঠা যায় না সেগুলো এক-একটা আলাদা গান। এ যেন একই অঙ্গে কত রূপ! আর সেই গানের তালে পা মিলিয়ে শরীরে তরঙ্গ তুলে নাচছে একদল সুবেশী তরুণ-তরুণী।
ভাবছেন কোনও নাইটক্লাব? ভুল ভাবলেন। ডিজে অর্থাৎ ডিস্ক জকির তৈরি মিউজিক বা গানের এই পাগল করা ছন্দে পায়ে পা মিলিয়ে নাচছে উদ্দাম বাঙালি। এতই মনে ধরেছে ‘ডিস্ক-কালচার’ যে এখন বাঙালির বিয়ের অনুষ্ঠানেও শামিল ‘ডিজে’।
বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ-গান ছিল অন্য-ভাষীদের একচেটিয়া। বাঙালির গায়েও কি তবে সেই হাওয়া লাগল? এক সময় বাঙালির বিয়ের বাজনা মানেই ছিল নহবত। যাঁরা নহবত বসাতে পারতেন না, তাঁরা মাইকে বাজাতেন বিসমিল্লার লং-প্লে রেকর্ড। তাতে বাজত পিলু, কাফি বা খাম্বাজ। এখনও মুষ্টিমেয় বাঙালি সেই পরম্পরা বজায় রেখেছে। কিন্তু পৃষ্ঠা উল্টোলে অন্য সংযোজনও চোখে পড়বে। বাঙালি এখন বিয়েতে ডিজে এনে নাচ-গানে মেতে উঠছে। এই উল্লাসে শামিল অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও।
কিছু দিন আগেও বিয়ের আসর জমাত লাইভ ব্যান্ড। বিয়েতে আপ্যায়িত লোকজন, আত্মীয়-পরিজন কিংবা বর-কনের বন্ধুবান্ধবের আনন্দে যাতে আরও একটু বেশি রং লাগে, তার জন্যই বাড়ির অভিভাবকরা লাইভ ব্যান্ডের ব্যবস্থা করতেন। হাওড়ার সুকন্যা বিশ্বাস বলছিলেন, “আমার বিয়ে হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। তখন লাইভ ব্যান্ডের রমরমা। মামা আমার বিয়ের দু’মাস আগে থেকেই একটা লাইভ ব্যান্ড বুক করে রেখেছিলেন। মেল-ফিমেল দু’জন সিঙ্গার মিলে জাস্ট জমিয়ে দিয়েছিলেন পরিবেশ। এক বার পুরোনো দিনের গান গাইছিলেন তো পরক্ষণেই নাইন্টিজের সেই সব রোম্যান্টিক গান। উপস্থিত সকলেই ভীষণ মজা করেছিলেন।”
তবে এখন অনেকেই লাইভ ব্যান্ড এনে নাচাগানার বদলে ডিজে আনতেই বেশি পছন্দ করছেন। কথা হচ্ছিল কলেজ স্ট্রিটের জয় দাসের সঙ্গে। |
|
বছর পঁচিশ বয়স তাঁর। পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁর অন্যতম শখ ডিস্ক-জকিং। এই চলতি বিয়ের মরসুমেই তিনি কম করে পাঁচ-ছ’টি বাঙালি বাড়ি থেকে ডাক পেয়েছেন। কেউ বিয়ের আগের দিন ব্যাচেলর পার্টিতে, কেউ বা বিয়ের দিন, আবার কেউ বা রিসেপশনের দিন ডিজে আনাতে চান। লাইভ ব্যান্ড ছেড়ে ডিজে-র দিকে হঠাৎ এ ভাবে ঝুঁকে পড়ার কারণটা ঠিক কী? “এখন লাইভ ব্যান্ড বুক করার খরচ বেড়েছে। সেই তুলনায় ডিজে ভাড়া করার খরচ কিছুটা কম। মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যেই। তা ছাড়া নতুনত্বও আছে। তাই ডিজের দিকে ঝুঁকছে মানুষ,” জানালেন জয়। আর বেশির ভাগ ডিজে-র কাছেই প্রচুর গান বা মিউজিকের সংগ্রহ থাকে। লাইভ ব্যান্ডের সিঙ্গারদের মতো ডিজে-রা অনুষ্ঠানের মধ্যে তেমন বিরতিও নেন না। পর পর মিউজিক বাজিয়ে যান। নাচানাচির মাঝে বিরতি এখন কেউ ততটা পছন্দ করে না।
নিজের বিয়ের আগের দিন ব্যাচেলর পার্টিতে ডিজে এনে বেশ হইচই করেছিলেন ইন্দ্রপ্রমিত সেন। পেশায় একটি বেসরকারি সংস্থার হিসাবরক্ষক তিনি। চার বছরের দীর্ঘ ‘কমপ্লিকেটেড রিলেশনশিপ’ শেষ পর্যন্ত বিয়েতে গড়িয়েছিল। বললেন, “বন্ধুদের কথা দিয়েছিলাম প্রেমটা পিঁড়ি পর্যন্ত টিকলে ডিজে আনব। নাচা-গানার সঙ্গে খানা-পিনাও থাকবে। তাই ব্যাচেলর পার্টির আয়োজন করেছিলাম।” তবে সবটাই খুব সহজে হয়নি। ডিজে আনার জন্য স্থানীয় বিয়েবাড়িগুলো ভাড়া দিতে রাজি হয়নি। তাই শেষে নিজের বাড়ির ছাদেই পার্টি অ্যারেঞ্জ করেন তিনি।
বিয়ের ডিজে-পার্টি খোলা জায়গাতেও করতে পারেন। স্থানীয় পুরসভার অনুমতি দরকার পড়ে। পেশায় শিক্ষিকা অদিতির বিয়ের রিসেপশনের ডিজে-পার্টি ঠিক এই কারণেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কারণ অনুমতি মেলেনি। “স্টেজও পর্যন্ত রেডি ছিল জানেন? কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব উত্তেজনায় ইতি পড়ল,” স্পষ্ট আক্ষেপ অদিতির গলায়।
কলকাতার এক ডিস্ক জকি রাজ ২০০৪ সাল থেকে এই পেশায় রয়েছেন। তিনি জানালেন, “ডিজে ভাড়া করার আগে অবশ্যই দেখে নিতে হবে ‘পি পি এল লাইসেন্স’ আছে কি না।” তবেই জনসমক্ষে রেকর্ডেড মিউজিক বাজানো যায়।
ডিজের কাছ থেকে ঠিক কী ধরনের মিউজিক পছন্দ করছেন বাঙালি? বিখ্যাত ডিজে আকাশ জানাচ্ছেন, “সব ধরনের গানই রয়েছে। এখনকার বাংলা ছবিগুলোর হিট গান যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ‘সাধের লাউ’-এর মতো লোকগীতির চাহিদা। আবার ভাংড়া বা পপ ইংরেজি গানও লোকে বেশ নিচ্ছে। মোদ্দা কথা এমন মিউজিক বাজাতে হবে, যাতে সবাই এক সেকেন্ডের জন্যও চুপ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে না থাকতে পারে। সকলকে নাচিয়েই আমাদের সুখ।” আর বয়স্করা? তাঁরা কি পছন্দ করছেন এই হুল্লোড়বাজি? হেসে আকাশ বললেন, “ওঁদের কথাও মাথায় রাখি। পুরোনো দিনের ‘দম মারো দম’, ‘দে দে প্যার দে’-র মতো প্রচুর গানের রিমিক্স-এর সংগ্রহও রাখতে হয়।”
কেমন খরচ পড়ে ডিজে আনতে? আকাশ জানাচ্ছেন,“এটা নির্ভর করে যে ডিজে আনবেন তাঁর অভিজ্ঞতার উপর। অভিজ্ঞ ডিজে বেশি টাকা দাবি করবেন, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। বাজেট তেরো-চোদ্দো হাজার টাকা দিয়ে শুরু হয়ে লাখ পর্যন্ত গড়াতে পারে।”
ডিজের সাতকাহন শোনা তো সাঙ্গ। কী ভাবছেন? নিজের বিয়ের পার্টিতেও ডিজে-র মিউজিকের ছন্দে কোমর দোলালে কেমন হয়? মন্দ কী! চেখে দেখুন না... |
ডিজে ও আপনি |
• ডিস্ক জকি যাতায়াত খরচ নেন কি না কিংবা ঘণ্টাপ্রতি পারিশ্রমিক নেন কি না সে ব্যাপারে খো লাখুলি আলোচনা করে নিন।
• কত দিন ধরে তিনি এই পেশার সঙ্গে যুক্ত তা অবশ্যই জেনে নেবেন। বিয়ের পরিবেশ মাতিয়ে দিতে তিনি কতটা পারদর্শী জানতে ভুলবেন না।
• সম্ভব হলে আগে করা তাঁর অনুষ্ঠানের কোনও ভিডিও ক্লিপিংস দেখতে চাইতে পারেন।
• তিনি যে সব গান বাজাবেন তার একটা লিস্ট আগে থেকে চেয়ে রাখতে পারেন।
• পার্টির সময় তিনি উপস্থিত লোকজনের অনুরোধ শুনে গান বাজাতে পারবেন কি না জেনে নিন।
• অতিরিক্ত সময়ের জন্য তিনি আলাদা খরচ নেন কি না জিজ্ঞাসা করুন।
• অনুষ্ঠান বাতিল হয়ে গেলে টাকা ফেরতের কোনও ব্যবস্থা আছে কি না অবশ্যই জানুন। |
|
|
|
|
|
|