|
|
|
|
গাড়ি সারাইয়ের গ্যারাজের আড়ালেই চলত চুরি-চক্র |
আর্যভট্ট খান |
একেবারে নতুন অবস্থায় মিলত পুরনো গাড়ি। সুমো দেড় লক্ষ, বোলেরো পৌনে দু’লক্ষ, টাটা ইন্ডিকা এক লক্ষ কুড়ি হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকায়। দশ চাকার ট্রাক বিক্রি হত চার থেকে সাড়ে চার লক্ষে ও ছ’চাকার ট্রাক সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষে। এত কম দাম, সঙ্গে বৈধ কাগজ থাকায় বেশির ভাগ সময়েই সহজে বিক্রি হত গাড়িগুলি। এই ভাবে গত ৪ বছরে শ’খানেকেরও বেশি গাড়ি বিক্রি করেছেন রঞ্জিত বিশ্বাস। পুলিশকে তিনি জানান, চোরাই গাড়িকে নতুন করতে রং থেকে শুরু করে গাড়ির অন্দরসজ্জা, সবই চলত তাঁর গ্যারাজে।
কল্যাণী এক্সপ্রসেওয়ের ধারে নিমতার কাছে ছিল গ্যারাজটি। স্থানীয়েরা জানতেন ওই গ্যারাজে ছোট গাড়ি থেকে শুরু করে লরি, ট্রাকের মেরামতি ও রং হয়। পুরনো গাড়ি কেনা-বেচাও হয়। চার-পাঁচ জন মিস্ত্রি সেখানে কাজ করতেন।
কেউ টেরও পাননি, গ্যারাজের আড়ালে চলছে চোরাই গাড়ির ব্যবসা। মালিক রঞ্জিত বিশ্বাস যার মূল পাণ্ডা। বয়স ৩২। রঞ্জিত সিটি কলেজের স্নাতক। নিজেও গাড়ির খুঁটিনাটি জানেন। গ্যারাজের অফিসে বসেই পুরনো গাড়ি কেনা-বেচা করতেন। পুলিশ জেনেছে, ক্রেতারা জানতেই পারতেন না যে তারা চোরাই গাড়ি কিনছেন। নিপুণ ভাবে চেসিস এবং ইঞ্জিনের নম্বর পাল্টে দিতেন। নাগাল্যান্ড থেকে গাড়ির কাগজ বানিয়ে তা এ রাজ্যের কাগজে বদলাতেন।
পুলিশের দাবি, রঞ্জিত স্বীকার করেছেন, সম্প্রতি তিনি উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁয় একটি গাড়ি বেচেছেন যাতে এসি থেকে ডেক সবই ছিল। অথচ দাম ছিল বেশ কম। পুলিশ জানাচ্ছে, রঞ্জিতেকে সাহায্য করত নরেন দীপক, দীপু, মিথিলেশ ও বিজয়কুমার। এদের পুলিশ ধরেছে রাজারহাট-নিউ টাউনের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
পুলিশের মতে, যারা পুরনো গাড়ি কিনছেন, তাঁদের উচিত আগের মালিক সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া। তবে অধিকাংশ সময়েই ক্রেতারা তা করেন না। রঞ্জিতের ওই গ্যারাজের খোঁজ পেয়ে পুলিশ ক্রেতা সেজে সেখানে যায়।
গাড়িগুলি রঞ্জিত কিনতেন কার থেকে? পুলিশ জেনেছে, গাড়ি আসত মুজফ্ফরপুর থেকে। সেখানে মামা নামে যে ব্যক্তি পুরো চক্র চালাত সেই গাড়িগুলি চোরদের কাছ থেকে কিনত। রঞ্জিতকে ছোট গাড়ি থেকে লরি বা ট্রাক মামাই সরবরাহ করত। তবে মামা ধরা না পড়ায় কোথা থেকে গাড়িগুলি চুরি হত, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মামাকে গ্রেফতার করা গেলে পুরো ঘটনা স্পষ্ট হবে।” পুলিশের অনুমান, এ রকম আরও চোরাই গাড়ি বিক্রি করেছে এই চক্র। পুলিশ রঞ্জিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সেই সব গাড়িরও সন্ধান করছে। |
|
|
|
|
|