ইকবালের ছেলেকেও খুঁজছে পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
বাবার সঙ্গে জড়িয়ে গেলেন ছেলেও। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে মহম্মদ ইকবালের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ছেলে অনিলকেও এখন পুলিশ খুঁজছে।
কলকাতা পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর তৃণমূল চেয়ারম্যান মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার নাম এফআইআরে লিখেছিলেন তদন্তকারী অফিসার। তার পর থেকে ইকবালকে ধরার জন্য পুলিশ-কর্তাদের উপরে চাপ আসতে থাকে। কিন্তু অভিযোগ, মাথায় এক মন্ত্রীর ‘হাত’ থাকায় বুধবার বিকেল পর্যন্ত মুন্না দিব্যি এলাকায় ঘুরেছেন। এমনকী, দলীয় অফিসে বসে ছেলেকে পাশে নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলেছেন। তবে বেগতিক দেখে ওই রাতেই তিনি বেপাত্তা হয়ে যান। উধাও হয় সানু নামে তাঁর এক বিশ্বস্ত সঙ্গীও।
আর বৃহস্পতিবার রাত থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন মুন্নার ছেলে অনিল। তাঁর অপরাধটা কী? |
যোগ্য ছেলের সঙ্গত
|
শুধু মহম্মদ ইকবাল নন, মঙ্গলবার হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে
গোলমালের ঘটনায় ছিলেন তাঁর ছেলে অনিলও। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য। |
গার্ডেনরিচ থানার নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ: মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনের গোলমালে অনিল সরাসরি জড়িত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী পুলিশ-কর্মীরা সে দিনই উপরতলায় অনিলের নামে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, অনিল নিজে মারামারিতে জড়িয়েছেন। বিভিন্ন ক্যামেরায় ধরা পড়া সে দিনের গোলমালের ছবিতে মেরুন
শার্ট পরিহিত বছর তেইশের ছেলেটিকে পরিষ্কার দেখা গিয়েছে বলে তাঁদের দাবি।
বস্তুত হাঙ্গামায় অনিল যে প্ররোচনা দিয়েছিলেন, প্রাথমিক ভাবে সিআইডি-ও তা জানতে পেরেছে বলে গোয়েন্দা-সূত্রের খবর। “মঙ্গলবারের গোটা ঘটনায় অনিলের জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ আমরা পেয়েছি। তবে পুলিশকে গুলি করে খুনের মামলায় তিনি অভিযুক্ত নন। হাঙ্গামা পাকানো ও খুনের চেষ্টার আর একটা যে মামলা রুজু হয়েছে, তাতেই অভিযুক্ত হিসেবে অনিলের নাম উঠে এসেছে।” বলছেন তদন্তকারী এক অফিসার।
বাবার পাশাপাশি ছেলেরও এমন প্রতাপ কী ভাবে? |
গার্ডেনরিচ থানার তৈরি করা রিপোর্টের অংশ বিশেষ। |
পুলিশমহলের খবর: বাবার ছত্রচ্ছায়াতেই অনিলের বাড়বাড়ন্ত। তবে বাবার তুলনায় তাঁর মাথা ঠান্ডা। সিআইডি-র এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, “আয়রন গেট রোডে পরের পর গজিয়ে ওঠা বেআইনি নির্মাণ থেকে প্রচুর টাকা রোজগার করেছেন অনিল। বাবা বরো চেয়ারম্যান হওয়ার পরে তাঁর সব কাজকর্ম ছেলেই দেখভাল করছিলেন।” পুলিশ জানাচ্ছে, সম্প্রতি অনিল
একটা এসইউভি কিনেছেন ১৬ লক্ষ টাকা দিয়ে।
দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাবা-ছেলে নিরুদ্দেশ হলেন কেন?
ইকবালের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর: পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছিল, তা দেখে বরো চেয়ারম্যান আঁচ পেয়ে যান, তাঁর বিপদ সামনে। পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করার কথাও তিনি ভেবেছিলেন। কিন্তু এফআইআরে সরাসরি খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ করা হয়েছে মুন্নার বিরুদ্ধে। যা থেকে সহজে ছাড়া পাওয়া কঠিন। এই কারণেই প্রথমে এগিয়েও পরে পিছিয়ে গিয়েছেন মুন্না। |
|
স্থানীয় তৃণমূল পার্টি অফিসে যখন টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথা
বলছেন
ইকবাল, তখনও পাশে অনিল। ছবি: এবিপি আনন্দের সৌজন্যে |
ঘনিষ্ঠেরা মুন্নাকে মনে করিয়ে দেন, ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামের পরিণতি কী হয়েছে। ধরা পড়ার প্রায় এক মাস কেটে গেলেও আরাবুলের জামিন হয়নি। এখন তিনি দলের নেতাদেরই দোষারোপ করছেন। ‘শুভার্থীদের’ পরামর্শ শুনে মুন্না শেষে মত পাল্টে গা ঢাকা দেন। রোজই তাঁর ডেরায় পুলিশ যাচ্ছে। বাবা, ছেলে কারও হদিস এখনও মেলেনি।
মুন্না-অনিলের পাশাপাশি তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে নিচুতলার পুলিশ-কর্মীরা গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে প্ররোচনা দেওয়ার জন্য ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীলের দিকেও আঙুল তুলছেন। থানা-সূত্রের দাবি: গার্ডেনরিচ-কাণ্ড নিয়ে পুলিশের তৈরি রিপোর্টেও ইকবালের সঙ্গে রঞ্জিতবাবুর নাম রয়েছে। গণ্ডগোলে উস্কানি দেওয়ার জন্য
তাঁদের অভিযুক্ত করা হয়েছে ওই রিপোর্টে। কী রকম?
রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘হরিমোহন ঘোষ কলেজে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ে গেটের কাছে জমা হওয়া কংগ্রেস ও ছাত্র পরিষদ নেতাদের পুলিশ সরিয়ে দিতে শুরু করে। তখনই ঘটনাস্থলে আসেন ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তথা ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্না ও ১৩৩ নম্বরের তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জিত শীল। তাঁরাই জনতাকে ছাত্র পরিষদ ও কংগ্রেস নেতাদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করতে শুরু করেন। পরিস্থিতির অবনতি হয়, বোমা পড়তে শুরু করে।’
ইকবালের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি: রঞ্জিতবাবুর অনুরোধেই বরো চেয়ারম্যান ও তাঁর ছেলে হরিমোহন ঘোষ কলেজের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল রঞ্জিতবাবু ও তাঁর ছোট ছেলে অভিজিতের উপরে। কিন্তু গোলমালের আগের দিন (সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি) রাতে পাহাড়পুর রোডে বোমা ফেটে অভিজিৎ গুরুতর জখম হন। তার জেরেই কলেজের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি ইকবালের ‘মদত’ চেয়েছিলেন রঞ্জিতবাবু। সেই মতো ইকবাল ছেলেকে নিয়ে কলেজের সামনে পৌঁছান। রঞ্জিতবাবুর নিজের কী বক্তব্য?
শুক্রবার রঞ্জিতবাবু বলেন, “পুলিশ কেন আমার নাম নিচ্ছে, জানি না। আমি সে দিন ঘটনাস্থলে ছিলাম না। আহত ছেলেকে নিয়েই দিনভর ব্যস্ত ছিলাম।”
|
ববিকে বাড়তি পুলিশ
নিজস্ব সংবাদদাতা |
গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের জেরে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (ববি)-এর পুলিশি নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। এত দিন তাঁর সুরক্ষায় ৫-৬ জন পুলিশ দেওয়া হত। বুধবার থেকে চেতলায় তাঁর বাড়ির সামনে রাস্তায় আরও চার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। |
|