নতুন পদ নিতে নারাজ পচনন্দা
তুন পদে যোগ দিতে চাইছেন না রঞ্জিতকুমার পচনন্দা।
বৃহস্পতিবারই কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে পচনন্দাকে রাজ্যের নিরাপত্তা-অধিকর্তার পদে ঠেলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু গার্ডেনরিচের ঘটনার পর থেকে যে পচনন্দাকে কার্যত নতুন চেহারায় আবিষ্কার করেছে পুলিশ মহল, সেই পচনন্দা অপেক্ষাকৃত গুরুত্বহীন এই কাজের দায়িত্ব নিতে রাজি নন। প্রয়োজনে রাজ্য ছেড়ে দিল্লি চলে যাওয়ার কথাও ভাবনাচিন্তা করছেন তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে পচনন্দা জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও পদে যোগ দিতে চান।
সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পচনন্দা অতীতে এসপিজি, বিএসএফ এবং সিবিআই-তে কাজ করে এসেছেন। দিল্লিতে তাঁর যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও পদে যোগ দেওয়াটা তাঁর পক্ষে সমস্যার নয়। তবে সে ক্ষেত্রে রাজ্যের ছাড়পত্র দরকার হবে।
শুক্রবার পচনন্দা মহাকরণে জানিয়ে দিয়েছেন, নতুন পদ তিনি গ্রহণ করতে চান না। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন তিনি। চিঠিতে পচনন্দা জানাবেন, তাঁর মা অসুস্থ। মায়ের চিকিৎসার জন্য তাঁকে দিল্লিতে থাকতে হবে। তাই তিনি রাজ্য সরকারের পদ থেকে অব্যাহতি চাইছেন। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, পচনন্দা প্রাথমিক ভাবে ১৫ দিনের ছুটি নিয়েছেন। ছুটিতে থাকার সময়েই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে অব্যাহতি চাইবেন বলে জানা গিয়েছে। তবে ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও আইপিএস অফিসারকেই দিল্লি যাওয়ার ছাড়পত্র দেননি। মহাকরণ সূত্রের খবর, অন্তত ১৫ জন আইএএস, আইপিএস-এর দিল্লি যাওয়ার আবেদন মুখ্যমন্ত্রীর টেবিলে মাসের পর মাস ধরে পড়ে আছে।
পচনন্দা কি চাইলেই তাঁর নতুন পদ অগ্রাহ্য করতে পারেন? রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, পচনন্দার মতো সিনিয়র অফিসারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার যথেষ্ট মূল্য আছে। তাঁর চিঠি পেলে রাজ্য সরকার এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। রাজ্য সরকার তেমন হলে পচনন্দাকে কম্পালসারি ওয়েটিংয়ে পাঠাতে পারে। সে ক্ষেত্রে সরকারি গাড়ি পাবেন না তিনি। বাকি সুযোগসুবিধা অপরিবর্তিত থাকবে। আবার অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, আইপিএস অফিসারের ইচ্ছার মর্যাদা দেওয়ার নজিরও রয়েছে। নজরুল ইসলামের ক্ষেত্রে এমন ঘটেছিল বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসারেরা জানিয়েছেন। নজরুলকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে স্বরাষ্ট্র দফতরের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি পদে বদলি করেছিলেন। নজরুল আপত্তি করায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে অন্য একটি পদ দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা-অধিকর্তার পদে যোগ দিতে পচনন্দার আপত্তির প্রধান কারণ কী? তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানাচ্ছে, পুলিশ কমিশনারের মতো গুরুদায়িত্ব সামলানোর পরে পচনন্দাকে যে পদটি দেওয়া হয়েছে, সেটি কার্যত ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী’র কাজ। ২৪ ঘণ্টা তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীকে পাহারা দিতে হবে। এটা তাঁর মর্যাদার পক্ষে বেমানান। পচনন্দার ক্ষেত্রে মর্যাদার প্রশ্নটি এখন সব দিক থেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডের পরে তাঁর ‘পুনর্জন্ম’ হয়েছে বলে মনে করছেন রাজ্যের আইপিএস অফিসারদের বড় একটা অংশই। সাধারণ মানুষ এবং পুলিশ বাহিনীর চোখে যে পচনন্দা এত দিন মমতার ‘ইয়েসম্যান’ বলে পরিচিত ছিলেন, সেই পচনন্দাই শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রকৃত অধিনায়কের ভূমিকা পালন করেছেন। শাসক দলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে শেখ সুহান এবং ইবনেকে গ্রেফতারে নেতৃত্ব দিয়েছেন, নিহত এসআই তাপস চৌধুরীর পরিবারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
কী ভাবে এল এই বদল? পুলিশের অন্দরমহল মনে করিয়ে দিচ্ছে, অতীতে কিন্তু মমতার সঙ্গে পচনন্দার বিশেষ সুসম্পর্ক ছিল না। দেড় দশক আগে দক্ষিণ কলকাতার বেদী ভবনে দখলদার-উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে দু’জনের মধ্যে বিরোধ হয়েছিল।
পচনন্দা তখন ডিসি সাউথ। ২০১১-র বিধানসভা নিবার্চনের আগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গৌতম চক্রবর্তীকে সরিয়ে কমিশনারের পদে আসেন পচনন্দা। তখন অনেকেই মনে করেছিলেন, মমতা ক্ষমতায় এসেই পচনন্দাকে সরাবেন। হয়তো হতও তাই, কিন্তু পচনন্দাকে দায়িত্বে রেখে দিতে মমতাকে অনুরোধ করেন স্বয়ং রাজ্যপাল। পচনন্দা থেকে যান।
তার পর থেকে পচনন্দা মুখ্যমন্ত্রীর অত্যন্ত হয়ে ওঠেন। পার্ক স্ট্রিটের ধর্ষণ কাণ্ডে পচনন্দা যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে বিবৃতি দেন, তা অনেককেই অবাক করেছিল।
গত কালীপুজোতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পুলিশের পোশাক পরে খালি পায়ে ঘুরতে দেখা গিয়েছিল পচনন্দাকে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে পদবীকে বিকৃত করে কৌতুক করায় অধস্তন অফিসারদের কাছে যথেষ্ট হাসির খোরাকও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গার্ডেনরিচের ঘটনায় প্রাথমিক শিথিলতার পরে যে ভাবে পচনন্দা তাঁর রাজধর্ম পালন করেছেন, তাতে পুলিশ-কর্তাদের অনেকেই বিস্মিত। পচনন্দার এই পরিবর্তিত ভূমিকায় পুলিশের নিচুতলার মনোবলই শুধু বাড়েনি, সহকর্মীদের কাছে সম্মানও বেড়েছে তাঁর। রাজ্যের এক পুলিশ কর্তার মন্তব্য, “পচনন্দা পদ হারানোর ঝুঁকি নিয়েই যা করার করেছেন। পুলিশ কমিশনারের পদে যোগ দেওয়ার পর থেকে তাঁর যে চাটুকার ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল, গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে তা ধুয়ে গেল।” বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, পচনন্দার ঘটনা দেখিয়ে দিল, মুখ্যমন্ত্রীর তল্পিবাহক হতে না পারলে সরতেই হবে। ঘনিষ্ঠ মহলে পচনন্দা নিজেও শুক্রবার জানিয়েছেন, তিনি এখন অনেকটা ভারমুক্ত। কোনও আক্ষেপ নেই। ভবিষ্যতেও পুলিশ মার খেলে দোষীদের ছাড়বেন না তিনি, যে পদেই থাকুন না কেন!
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে ইঙ্গিত মিলেছিল যে, সরতে হতে পারে। লালবাজারে এসে সেই সংবাদ দেওয়ার পরে সহকর্মীদের মধ্যে রীতিমতো শোকের আবহ তৈরি হয়। যখন লালবাজার ছেড়ে চলে আসছেন, পুলিশ অফিসারেরা সবাই মিলে ‘স্ট্যান্ডিং ওভেশন’ দিয়েছিলেন তাঁদের অধিনায়ককে।
কমিশনার-জীবনে একবারই প্রকৃত অধিনায়ক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পচনন্দা। তখনই তাঁকে সরে যেতে হল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.