গণ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী খুন
শাহবাগের ঢাকায় চললেন খুরশিদ
ত্তাল ঢাকা।
এ ভাবে গোটা দেশ জুড়ে মানুষ জামাত-বিরোধী আন্দোলনে রাজপথে নেমেছে বহু দিন পর।
সত্যি কথা বলতে কি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বুঝতে পারেননি ফাগুন উৎসবের সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ উগ্র মৌলবাদী জামাতে ইসলামির হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির বিরুদ্ধে এ ভাবে প্রতিবাদে মুখর হবে। নবীন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা এক দিকে যখন একাত্তরের ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে টানা ১১ দিন ধরে শাহবাগ স্কোয়ারে ধর্নায় বসে রয়েছেন, তেমন নাম গোপন না করেই ফেসবুক-টুইটারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছেন, নিষিদ্ধ করা হোক জামাতকে। যে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দেশ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁদের এই আবেগ বাংলাদেশে এক ইতিহাস তৈরি করেছে। ‘দ্য ইকনমিস্ট’ বলেছে, শাহবাগের এই সমাবেশ গত দু’দশকে ঢাকায় সবচেয়ে বড় সমাবেশ। শুক্রবার রাতে শাহবাগ আন্দোলনের এক সক্রিয় কর্মী রাজীব হায়দার (২৮)-এর গলা কাটা দেহ মিলেছে পথের ধারে।
এমন এক উত্তাল পটভূমিতে আগামী কাল ভারতের বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ ঢাকা পৌঁছচ্ছেন শেখ হাসিনা ও বিদেশমন্ত্রী দীপু মণির সঙ্গে আলোচনায় বসে সীমান্ত চুক্তি এবং তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন করে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে। ভারত এ কথা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঢাকাকে জানিয়ে দিতে চায় যে, তারাও মৌলবাদী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। নিজে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হয়েও সলমন নিজে জামাতের কার্যকলাপের ঘোরতর বিরোধী।
ভারত সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নাক গলাবে না ঠিকই, কিন্তু জামাতকে নিষিদ্ধ করায় আপত্তি থাকতে পারে না তাদেরও। কারণটা তাদের ভারত-বিরোধী রাজনীতিই শুধু নয়, আলফা থেকে জামাতুল মুজাহিদিন, সব ধরণের জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জামাতের কিছু শীর্ষ নেতার সংস্রব স্পষ্ট। বিদেশ মন্ত্রকও তাই জামাতের বিরুদ্ধে এই গণজাগরণকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে।
আবার মানুষ এ ভাবে রাজপথে নামায় নির্বাচনের আগে হঠাৎই লাভের কড়ি ঘরে তুলছেন শেখ হাসিনা। আর জামাত তাদের জোট-শরিক হওয়ায় সমস্যায় পড়ে গিয়েছে বিএনপি। শেখ হাসিনার কাছেও যেমন এমন অভূতপূর্ব জন জাগরণ অপ্রত্যাশিত, খালেদার কাছেও এ এক আকস্মিক বিড়ম্বনা। কারণ, কিছু দিন আগেও তিনি দলের নানা জনসভায় বলে এসেছেন, কাদের মোল্লা বা দেলওয়ার হোসেন সাইদির মতো জামাত নেতারা যুদ্ধাপরাধী নয়। সদ্য ভারত সফর সেরে তিনিও দু’দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বলছিলেন। এখন তিনি কী করবেন?
পরিসংখ্যান বলছে, ক্যাডার-ভিত্তিক দল জামাতের বাংলাদেশে সর্বত্রই ভোট আছে গড়ে ৮ থেকে ১০ শতাংশ। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে তারা যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে পারে, পাটিগণিতের হিসেবেই বিরোধী জোটের এই ভোট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

ঢাকার শাহবাগ স্কোয়ারে। শুক্রবার এপি-র ছবি।
এক দিকে জামাত আরও জঙ্গি হয়ে যানবাহন পুড়িয়ে বার্তা দিতে চাইছে, “নিষিদ্ধ করে দেখো না! আমরা আরও হিংসার পথে যাব।” পুলিশ ও প্রশাসনের উপরে তারা ঝটিকা হামলা চালাচ্ছে। এ দিনও কক্সবাজারে জামাত কর্মী ও পুলিশের প্রায় দেড় ঘণ্টা গুলির লড়াইয়ে চার জন মারা গিয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হন ২৫ পুলিশ-সহ শতাধিক মানুষ।
কিন্তু সরকার যদি জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে খালেদা কী করবেন?
প্রথমত, আজ যা পরিস্থিতি তাতে চাপের মধ্যে আছেন খালেদা। হাসিনা শক্তিশালী হয়ে ওঠায় সম্প্রতি তার সরকারের বিরুদ্ধে যে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা কাজ করছিল, তা অনেকটা প্রশমিত। এমতাস্থায় বিএনপি কি ভোট বয়কট করবে? আবার ভোটে সামিল হলে সঙ্গে জামাতকে নেওয়া কি তাদের পক্ষে লাভের হবে?
জামাত যদি ভোট বয়কটের ডাক দেয়, তবে তার রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াই বা কী হবে? আওয়ামি লিগ অবশ্য চায় বিএনপি ভোটে সামিল হোক। কারণ, প্রধান বিরোধী দল বয়কট করলে সেই ভোটের বিশ্বাসযোগ্যতা গোটা দুনিয়ার কাছে তুলে ধরা কঠিন হয়।
সলমন খুরশিদের কথায়, “এই সরকার বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের জঙ্গিদের ব্যবহার করতে দিচ্ছে না, এটা কম কথা নয়। তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তি করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।” বিদেশমন্ত্রী আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রণববাবুর সঙ্গেও কথা বলেন। সলমন বলেন, “আমরাও এক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, যা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিরাপত্তা দেবে। তৈরি করবে নতুন আস্থা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.