থিমের পথে সরস্বতীও। অশান্ত শিক্ষাঙ্গণ থেকে নারী নির্যাতন রোখার ভঙ্গিমায়, শিল্পাঞ্চলের নানা প্রান্তে বাগদেবীর এসেছেন নানা রূপে। রকমারি মিষ্টি, কাঠের গুঁড়ো বা ধানের শিস, প্রতিমা তৈরিতে ব্রাত্য থাকেনি কিছুই। শুক্রবার সকাল থেকেই এই সব মণ্ডপে ঢল। পুষ্পাঞ্জলি, দেদার আড্ডা ও খিচুড়িতে মাত হল শিল্পাঞ্চল।
আসানসোলের বুধায় দেশপ্রিয় ক্লাবের উদ্যোগে প্রায় ৩৫ ফুটের সরস্বতী প্রতিমা মানুষকে তাক লাগিয়েছে। পুজো উপলক্ষে একটি বড়সড় মেলাও বসেছে বুধা ফুটবল মাঠে। সকাল থেকেই সেখানে ভিড় ছাত্রছাত্রীদের। বার্নপুরে সুভাষ সাংস্কৃতিক পরিষদের পুজো উপলক্ষেও মেলা বসেছে। বার্নপুরের প্রান্তিক ক্লাবের উদ্যোগেও হচ্ছে জমজমাট পুজো। কুলটির নিয়ামতপুরের ইসিএল আবাসন এলাকায় অন্নপূর্ণা সারস্বত পুজো কমিটি আয়োজিত সরস্বতী পুজো প্রায় ৫০ বছরের পুরনো। কুলটির বিবেকানন্দ স্পোর্টিং ক্লাব ও অমর সঙ্ঘের মণ্ডপও বেশ মনোরম। চিত্তরঞ্জন রেল শহরের তিন নম্বর এরিয়ার সানডে ক্লাবের পুজোয় রয়েছে তিন দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান। রূপনারায়ণপুরের লোয়ার কেশিয়ার দেশবন্ধু ক্লাবের পুজোও বেশ জনপ্রিয়। উদ্যোক্তারা এলাকার দুঃস্থ পড়ুয়াদের পড়াশোনার সামগ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। |
অসমের একটি মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে দুর্গাপুরে। —নিজস্ব চিত্র। |
দুগার্পুরের নানা মণ্ডপেও থিমের ঘনঘটা। তেঁতুলতলা কলোনি কিশোর সঙ্ঘের ২৪তম বর্ষের পুজোয় এ বার রামায়ণের সাতকাণ্ডের বিভিন্ন দৃশ্য দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। পুকুরের মাঝে তুলে ধরা হয়েছে সমুদ্রমন্থনের দৃশ্য। দেবী রয়েছেন পাল্কিতে। গত বছর স্বরবর্ণের বিভিন্ন অক্ষর ও ছড়া দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়ে সাড়া ফেলেছিলেন তাঁরা। উদ্যোক্তাদের পক্ষে চিরণদীপ রায় জানান, পুজোয় এক দিন পাড়ার কচিকাঁচাদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন তাঁরা। ন’ডিহা আনন্দপুর প্রগতি সঙ্ঘের মণ্ডপ হয়েছে বাতাসা, জিলিপি ও বোঁদে দিয়ে। প্রতিমাও বিভিন্ন মিষ্টি দিয়ে তৈরি। গত বার ফল দিয়ে মণ্ডপ গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছিলেন বলে আয়োজকদের তরফে জানান কার্তিক বাদ্যকর। দুর্গাপুর স্টেশন লাগোয়া সুভাষপল্লি যুগের প্রতীক ক্লাবের মণ্ডপ অসমের একটি আশ্রমের আদলে তৈরি। সাত ফুট উচ্চতার প্রতিমা নজর কেড়েছে। ক্লাবের তরফে বুদ্ধদেব খাঁড়া জানান, প্রতিমা তৈরি হয়েছে খড়, কাঠের গুঁড়ো, ধানের শিস, সুতলি দিয়ে। দুর্গাপুর শহর ছাড়িয়ে কাঁকসা ও বুদবুদেও ধুমধামের সঙ্গে পুজো হয়েছে।
পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্র গ্রামের এক মণ্ডপে এ বার ফুটে উঠেছে সাম্প্রতিক অস্থির পরিস্থিতি। হরিজন সেবক সঙ্ঘের পুজো ২১ বছরে পা দিল। সংগঠকদের তরফে জিতেন বাউড়ি জানান, স্কুল-কলেজে যে ভাবে অশান্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তা ফুটিয়ে তুলতেই তাঁরা এই থিম বেছেছেন। |
পাণ্ডবেশ্বরের একটি মণ্ডপ। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ। |
অন্ডালের ইস্ট জামবাদ মাঝিবস্তির পুজোতেও আইনশৃঙ্খলা অবনতির দিকটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা হয়েছে। জামবাদ মোড় যুব সঙ্ঘের পুজোয় আবার নদীবক্ষে নৌকায় পূজিত হচ্ছেন সরস্বতী।
জামুড়িয়ার বালানপুরের এক মণ্ডপে এক দিকে গ্রামীণ পরিবেশ, অন্য দিকে শহরের ছবি। আয়োজকেরা নিজেরাই বাঁশ, সুতো, কাদামাটি দিয়ে মডেলগুলি ফুটিয়ে তুলেছেন। রানিগঞ্জের পূর্ব কলেজপাড়ায় ‘জয় মাতাদি’র পুজো পাঁচ বছরে পা দিল। সেখানে নারী নির্যাতন প্রতিরোধের দৃশ্যে দেবীকে আঁকা হয়েছে। হাসপাতাল পট্টি আদর্শ যুব সঙ্ঘ, শিশুবাগান, বড়দহি, রাজপাড়াতেও পুজো হয়েছে বেশ জাঁকজমকে। রানিগঞ্জে এগারা শিবশক্তি ক্লাবের মণ্ডপ পুকুরের মাঝে। মূর্তি বসানো হয়েছে শেষনাগের মাথায়। মণ্ডপের বাইরেই কাজুবাদামের মূর্তি। আসানসোলে রঘুনাথবাটী, নিউ আপার চেলিডাঙা-সহ নানা পাড়ায় জোরকদমে হয়েছে বাগদেবীর আরাধনা। |