ভূগর্ভস্থ কোল বেড মিথেন (সিবিএম) গ্যাস তোলার প্রকল্পে ফের বাধা পেল এসার অয়েল। এ বার ময়দানে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের একটি সিন্ডিকেট, যাতে শাসকদল তৃণমূলের লোকজনও রয়েছেন বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য, গত তিন সপ্তাহের মধ্যে এই নিয়ে তিন বার এই সংস্থার কাজে বাধা দেওয়া হল। বর্ধমানের অন্ডাল, পাণ্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা ব্লকের নানা জায়গায় ইতিমধ্যেই ১২০টি কুয়ো খনন করেছে এসার। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের শেষে কাঁকসার জাটগোড়িয়া এবং গত সপ্তাহে লাউদোহার ধবনি ও লবণাপাড়ায় তাদের কর্মীদের বাধা দেন কিছু গ্রামবাসী। দাবি ছিল মূলত জমির দাম, চাকরি, রাস্তা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত। দুই ক্ষেত্রেই এসারের তরফে আশ্বাস পেয়ে তাঁরা নিরস্ত হন।
শুক্রবার সকালে লাউদোহারই নাচনে ফের প্রকল্পের গাড়ি আটকান গ্রামবাসীদের একাংশ। ওই এলাকায় এখন দু’টি কুয়ো খোঁড়ার কাজ চলছে। কর্মী ও আধিকারিকেরা ঢুকতে না পারায় দিনভর কাজ বন্ধ থাকে। আজ, শনিবারও তাঁরা নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আন্দোলনকারীদের পক্ষে চন্দন গোস্বামী বলেন, “বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে নানা দাবি-দাওয়া জানিয়েও ফল হয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনের পথ নিয়েছি।”
এসার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৯ ডিসেম্বর ‘নাচন সিভিল মেটিরিয়ালস সাপ্লাই অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠনের প্যাডে কিছু দাবি-দাওয়া লিখে আনা হয়েছিল। সংস্থার অফিসারেরা তা নেননি।
এ দিন ঠিক সেই দাবিগুলিই ফের তোলা হয়েছে। তার মধ্যে গ্রামে রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থা, পাকা নর্দমা তৈরি, শ্মশানে ঘর বানানোর মতো নানা দাবি রয়েছে। ফলে তথাকথিত গ্রামবাসীর আন্দোলনের মধ্যে ‘সিন্ডিকেট’-এর ছায়া দেখছেন সংস্থার আধিকারিকেরা।
সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “ওঁদের কিছু দাবি সঙ্গত। সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা যেতেই পারে। কিন্তু গ্রামবাসীদের দাবির কথা বলে যখন নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহকারী সংগঠনের প্যাডে লেখা আবেদন জমা দেওয়ার চেষ্টা হয়, তখন উদ্দেশ্য নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহ জাগে।” অন্য এক আধিকারিক বলেন, “যে ভাবে বারবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তা উদ্বেগজনক।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “ঠিক কী ঘটেছে জানি না। তবে বাম আমলে এ সব উপদ্রব ছিল। এখন আবার মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার আবার এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূল ও তাদের সরকারকেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, “বারবার এই গণ্ডগোলে শাসকদলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত আছে। রাজ্য সরকার কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করছে না। এতে পরিষ্কার যে, এই সরকার শিল্প চায় না।”
তৃণমূলের দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লক সভাপতি সুজিত মুখোপাধ্যায় পাল্টা বলেন, “আমরা কাজ বন্ধ রেখে আন্দোলনের বিরোধী। কিন্তু এসার প্রতিশ্রুতি দিয়েও গ্রামোন্নয়ন করছে না। এটাও ঠিক নয়।”
এসার ইতিমধ্যে এই প্রকল্পে ৫০০ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। রাজ্যে মোট ৫০০টি মিথেন তোলার কুয়ো খোঁড়ার জন্য আরও তিন হাজার কোটি টাকা তাদের বিনিয়োগ করার কথা। কিন্তু এলাকার উন্নয়নে তাঁরা নজর দিচ্ছেন না, এমন অভিযোগ সংস্থার কর্তারা মানতে নারাজ।
তাঁদের বক্তব্য, আগে জাটগোড়িয়া বা ধবনি-লবণাপাড়ায় তাঁরা গ্রামবাসীর কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেছেন। যথাযোগ্য আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দু’এক মাসের মধ্যে সব কিছু করে দেওয়া সম্ভব নয়। কোনও সিন্ডিকেটের চাপের কাছে মাথা নোয়াতেও তাঁরা নারাজ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, এই প্রকল্পের জন্য এসার ক্রমাগত কিছু-কিছু করে জমি কিনছে। তাতে সব জায়গায় দামে হুবহু সামঞ্জস্য রাখা যাচ্ছে না। তাতে যেমন কিছু সমস্যা হচ্ছে, এলাকার কিছু নেতা বা ব্যবসায়ীর কায়েমি স্বার্থও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসার কর্তৃপক্ষ আপাতত সমস্যাগুলিকে বেশি গুরুত্ব না দিলেও একের পর এক ঘটনায় তা বড় হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে শিল্পমহলের একাংশের আশঙ্কা।
অপূর্ববাবু অবশ্য বলেন, “এ সব বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের দলের কেউ শিল্পসংস্থার সঙ্গে কোনও রকম জবরদস্তি করবেন না।” |