পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যে সংখ্যালঘু-তরজার মাত্রা চড়ছে!
তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচন এবং তার পরে পঞ্চায়েত নির্বাচন মাথায় রেখে সংখ্যালঘুদের কাছে টানার প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও সংখ্যালঘুরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিতই রয়েছেন, সেই অভিযোগ তুলে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতেও চাইছে তারা।
নেতাজি ইন্ডোরে সোমবার কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সংগঠনের এক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী দীপা দাশমুন্সি এ রাজ্যের সংখ্যালঘুদের প্রতি তৃণমূল সরকার প্রতারণা করছে বলে সরব হয়েছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য সম্মেলন-মঞ্চে সরাসরিই বলেন, “সংখ্যালঘুদের জন্য যে প্রকল্পগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে, এ রাজ্যে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘু উন্নয়নের ভুল তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।” সমর্থকদের প্রতি তাঁর আহ্বান, “এই সম্মেলন থেকে নিজের নিজের এলাকায় ফিরে গিয়ে নিজেদের আত্মীয়-পরিজনদের বোঝান এই সমস্যাটা। এবং এই সমস্যাগুলি বুঝিয়ে আসন্ন ৩ উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়ী করার চেষ্টা করুন।”
বিরোধী শিবির বা সংখ্যালঘু সংগঠনগুলি যা-ই বলুক, মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য তাঁর অবস্থানে অনড়। ভাঙড়ে এ দিনই একটি সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী এ দিনই সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রসঙ্গে কংগ্রেস এবং সিপিএমকে এক হাত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “৬০ বছর ধরে এ রাজ্য কোনও উন্নয়ন হয়নি। আমি নির্বাচনের আগে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তার ৯৯% করে দিয়েছি! খুব তাড়াতাড়ি রাজ্য সরকার ওই কাজের খতিয়ান পেশ করবে। একটি বই তৈরি করা হচ্ছে।” বিতর্ক হলেও ভাঙড়ের সংখ্যালঘু মেডিক্যাল কলেজের বিষয়ে পুরনো অবস্থানই বজায় রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মমতা। তিনি এ দিন বলেছেন, “এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে (পিপিপি) তৈরি হবে। ৭৫০টি শয্যা ও ১৫০ জন ছাত্র পড়াশোনা করতে পারবে। যদি কেউ এগিয়ে না-আসে, তা হলে সরকার নিজেই করবে। ৩৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। তা আমি দিয়ে দেব!”
নেতাজি ইন্ডোরে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী কে রহমান খান অবশ্য এ দিনই অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নে শুধুই একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। রহমানের বক্তব্য, “বাম আমলে রাজ্য সরকার সংখ্যালঘু উন্নয়নের কোনও চেষ্টাই করেনি। এখনও ১৫টি প্রকল্পে যে পরিমাণ টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে, তার রূপায়ণ হচ্ছে না।” তিনি জানান, সংখ্যালঘুদের জন্য ৩৮ হাজার ঘর তৈরিতে ইতিমধ্যে কেন্দ্র পাঠিয়েছে। ৪১টি স্কুলবাড়ি, ৭টি আইটিআই এবং তিনটি পলিটেকনিক তৈরির টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলির কী হাল, তা মানুষকে তথ্য জানার অধিকার আইন মারফত জানার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সাচার কমিটির রিপোর্টের প্রসঙ্গ এনে দীপাও বলেন, “সংখ্যালঘুদের জন্য কোন জেলায় কোন খাতে কেন্দ্র কত টাকা বরাদ্দ করেছে আর কত টাকা খরচ হয়েছে, তার হিসাব জানতে চান আপনারা স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।” ঘটনাচক্রে, এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, সাচার কমিটির রিপোর্টের ৯৯% তিনি রূপায়ণ করে দিয়েছেন!
সংখ্যালঘুদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে তৃণমূল রাজনীতি করছে বলে অভিযোগ করে দীপা এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন, “শুধুমাত্র ইফতার পার্টিতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলে সমস্যা মিটবে না! জানাতে হবে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের মধ্যে কত জন ক’দিন ভাতা পেয়েছেন? সেই ভাতার টাকা কোন খাত থেকে এল?” সংখ্যালঘু খাতে কেন্দ্রের সাহায্যের খতিয়ান নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের কর্মীদের প্রচারে নামার পরামর্শ দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। |