জেলায় জেলায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের যে ধারাবাহিক সমস্যা চলছিল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকে, তার সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেল রাজ্য সম্মেলনে! রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কাজকর্ম নিয়ে তুমুল ক্ষোভ জানালেন জেলা ও গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা। নতুন কমিটি সম্মেলনে ঘোষণা হওয়ার আগেই তার খবর কী ভাবে সংবাদমাধ্যমে বেরিয়ে গেল, সেই প্রশ্ন তুলে তুলোধোনা করা হল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকে। তারই সূত্রে বিতণ্ডা এবং ধস্তাধস্তি বাধল সম্মেলন কক্ষেই! শেষ পর্যন্ত রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকে ঘোষণা করতে হল, খবর ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের কমিশন গড়া হবে!
প্রত্যাশিত ভাবেই, এই সম্মেলন থেকে ফের রাজ্য সম্পাদক হয়েছেন অশোকবাবুই। কোনও পরিবর্তন হয়নি রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও। সোমবার সম্মেলনের শেষ দিনে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন প্রতিনিধিরা। এমনকী, তরুণ এক বিধায়ক এবং এক ছাত্র-নেতাও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন! পরে অগ্রগামী কিষান সভার তরফে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হাফিজ আলম সৈরানি বলেন, প্রতিনিধিরা রাজ্য নেতৃত্বকে যে ভাষায় দোষারোপ করেছেন, তাতে অশোকবাবুর সম্মানহানি হয়েছে। কয়েক জন প্রতিনিধি চিৎকার করে প্রতিবাদ করেন, সম্মেলনই যাবতীয় ক্ষোভ-অভিযোগ জানানোর জায়গা। অচিরেই এই বিতণ্ডা ধস্তাধস্তির চেহারা নেয়! ফব সূত্রের খবর, ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে দেখা যায় হুগলির প্রবীণ জেলা সভাপতি নৃপেন চট্টোপাধ্যায়কে। মঞ্চ থেকে নেমে আসেন রাজ্য নেতারাও। দু’দলের বিবাদে কিছু ক্ষণ পণ্ড হয়ে যায় সম্মেলনের কাজ।
গোলমালের পরে যথারীতি রাশ হাতে নিতে হয় অশোকবাবুকেই। তিনি জবাবি ভাষণে জানান, সম্মেলনে বসেই তিনি ঠিক করেছেন, আপাতত দলের দায়িত্ব তাঁকে নিজের হাতেই রাখতে হবে! নইলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠন সংক্রান্ত যে খবর সংবাদমাধ্যমে বেরিয়েছে, রাজ্য সম্পাদক হিসাবে তার দায় নিজের ঘাড়েও নিয়ে অশোকবাবু ঘোষণা করেন, এই ব্যাপারে কমিশন করা হবে।
পরে দলের রাজ্য দফতরে অশোকবাবু বলেন, তাঁর উত্তরাধিকারী খোঁজার চেষ্টা হচ্ছে। যথাসময়ে তা ঘোষণা করা হবে। তবে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নরেন দে বলেন, “জোর করেই আমরা অশোকদা’কে দায়িত্বে রেখেছি। পঞ্চায়েত নির্বাচন সামনে। উনি দরকারে দলের দফতরে বসেই কাজ করতে পারেন। ওঁর সচল মস্তিষ্ক দলের কর্মীদের কাছে খুব জরুরি।”
তবে সরল দেব অধ্যায়ে এ বার ইতি টেনে দিতে চেয়েছেন অশোকবাবু। এ ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে অশোকবাবু বলেছেন, “তাঁকে নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। তিনি তো চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগ করার পরে যা অবস্থা হয়, ওঁর তা-ই।” নতুন রাজ্য কমিটিতে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে আনা হয়েছে জেলায় সরলবাবুর বিরোধী বলে চিহ্নিত সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়কে। আলি ইমরান রামজ্ (ভিক্টর), অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ কারক, তাজমুল হোসেন-সহ নতুন ২১ জন এসেছেন রাজ্য কমিটিতে।
|
রাজ্যকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের |
রাজ্য সরকার ইমামদের ভাতা নিয়ে মামলায় নির্দিষ্ট দিনে হলফনামা পেশ না-করায় কলকাতা হাইকোর্ট তাদের ভর্ৎসনা করল। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল, অন্যান্য গরিব মানুষকে বাদ দিয়ে শুধু গরিব ইমামদের কেন ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, হলফনামায় সরকারকে তা জানাতে হবে। যাজক বা পুরোহিতেরা কেন ওই ভাতা পাবেন না, জানাতে হবে তা-ও। সোমবার ওই হলফনামা পেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার এ দিন হলফনামা দেয়নি। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ তাই সরকারকে ভর্ৎসনা করে। সরকারি আইনজীবী তপন মুখোপাধ্যায় অবশ্য এ দিন হলফনামা জমা দিতে না-পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এই মামলার শুনানি হবে ২৫ ফেব্রুয়ারি। |