পঞ্চায়েত ভোটের সূচি নির্ধারণ নিয়ে মহাকরণ ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনে সংঘাত থামার লক্ষণ নেই। ফলে সময় এগিয়ে এলেও ভোটের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।
রাজ্য সরকার চেয়েছে, এক দফাতেই ভোট। কিন্তু মহাকরণের সে প্রস্তাব দ্বিতীয় বারের জন্য ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। পঞ্চায়েত দফতরকে তারা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে তিন দফাতেই ভোটগ্রহণ দরকার, আর তা নিতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তার ছত্রচ্ছায়ায়। এ দিকে রাজ্যও নিজের অবস্থানে অনড়। সরকারি সূত্রের খবর: এক দফায় ভোট চেয়ে আজ, মঙ্গলবার মহাকরণ ফের কমিশনকে চিঠি দিতে চলেছে। এবং এর পরেও কমিশন তা না-মানলে সরকার একতরফা ভাবে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিতে পারে। মহাকরণের মনোভাব অন্তত তেমনই বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে সূত্রটি।
রাজ্য প্রশাসনের এক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, আইন অনুযায়ী কমিশনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পঞ্চায়েত দফতরেরই ভোটের দিন স্থির করার কথা। ওই পদ্ধতি মেনে গত ক’মাস ধরে আলোচনা, প্রস্তাব, পাল্টা প্রস্তাবের পর্ব চলছে। দু’পক্ষই সিদ্ধান্তে অবিচল থাকায় চূড়ান্ত ঘোষণা করা যাচ্ছে না। মহাকরণের খবর: এ বার কমিশনকে পাঠানো চিঠিতে এপ্রিলের শেষ থেকে মে মাসের গোড়ার মধ্যে নির্দিষ্ট কয়েকটি তারিখের উল্লেখ করে কোনও একটিতে এক দফায় ভোট সেরে ফেলার প্রস্তাব থাকবে। কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রসঙ্গে কিছু বলা থাকবে না।
কমিশন অবশ্য ঠিক করেছে, সরকারের তরফে এমন চিঠি এলেও তারা মতামত পাল্টাবে না। কিন্তু মহাকরণ যদি একতরফা ভোটের দিন ঘোষণা করে দেয়?
কমিশনের এক কর্তার বক্তব্য, পঞ্চায়েত আইনের ৪২ নম্বর ধারা মোতাবেক সরকার তা করতেই পারে। তবে ওই আইনেরই ৪৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্ত পছন্দ না-হলে কমিশনও তা পুনর্বিবেচনার কথা বলতে পারে রাজ্যকে। তখন আবার কমিশন-মহাকরণ আলোচনা শুরু হবে।
অতএব মতৈক্য না-হলে জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সোমবার রাজ্য পুলিশের দুই কর্তার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানে পঞ্চায়েত ভোটের পুলিশি-ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয়। মহাকরণের সূত্রের খবর, এক দিনে ভোট ধরেই কথাবার্তা হয়েছে। কমিশন ৮০০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে তিন দফায় ভোট চেয়েছে। রাজ্যের প্রস্তাব: এক দফায় ভোট হোক, ৪৪০ কোম্পানি রাজ্য পুলিশের তত্ত্বাবধানে।
উল্লেখ্য, এর আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ের কাছে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ এবং পুলিশি ব্যবস্থা সম্পর্কে মতামত চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিজি সরকারকে জানিয়েছেন, এক দফায় ভোট করাই শ্রেয়। তাঁর যুক্তি: ২০০৩-এ পঞ্চায়েত ভোট হয়েছিল এক দফায়, ২০০৮-এ তিন দফায়। এবং তিন দফায় ভোট হওয়ায় গত বার হিংসাত্মক ঘটনা ও প্রাণহানি বেশি হয়েছিল। ডিজি’র মতে, একাধিক দফায় ভোট হলে দুষ্কৃতীরা নানা স্থানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ পায়, ফলে গোলমালের বাড়তি আশঙ্কা থেকে যায়।
পাশাপাশি, ভোটের দিন প্রতি বুথে না-হলেও প্রতি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে সশস্ত্র রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভোট করানো যেতে পারে বলে সরকারকে জানিয়েছিলেন নপরাজিতবাবু।
ডিজি-র নোটে আপত্তি করেননি মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে পঞ্চায়েত দফতরকে বলা হয়, সরকারের এই মনোভাবের কথা কমিশনকে জানিয়ে দিতে। তার পর থেকেই মতানৈক্যের আবর্তে পড়ে গিয়েছে পঞ্চায়েত ভোটের সময়সূচি।
|