লেখার শুরুতেই বলে রাখছি যে ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড়দের অ্যাসোসিয়েশন তৈরি হল এআইটিএ-র সঙ্গে ঝগড়া করার জন্য নয়। বরং আমাদের এই নতুন সংস্থা পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করার বদলে ফেডারেশনের দিকে প্রতি মুহূর্তে সাহায্যের দরাজ হাত বাড়িয়ে দেবে। সাহায্যের দরাজ হাত - ভারতীয় টেনিসের যে কোনও রকম উন্নতির স্বার্থে। এটা কোনও বলার জন্য বলা নয়। টেনিস প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের জন্মই ঘটল এই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সাধনের জন্য।
বহু বছর আগে আমি, রামনাথন, প্রেমজিৎরা যখন চুটিয়ে ডেভিস কাপ খেলছি সেই সময় এক বার এ রকম প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন গড়া হয়েছিল। অনিল গুপ্ত নামে একজন প্রধান উদ্যোগটা নিয়েছিলেন। কিছু বছর আগে রিকো পিপার্নো, নন্দন বলরাও একই রকম একটা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দু’বারই ব্যাপারটা পুরোপুরি দাঁড়ায়নি। তবে সেই দু’বারের থেকে এ বারের প্রেক্ষিৎটা অনেক আলাদা। ভারতীয় টেনিসে এখন প্লেয়ারদের ব্যাপারে সত্যিই অনেক আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী নেওয়ার সময় এসে গিয়েছে। সেটা প্লেয়ারদের পেমেন্ট হোক কিংবা ট্র্যাভেল। ভারতীয় টিম সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্লেয়ারদের মতামতের গুরুত্ব এখন আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে। আসলে টেনিস বিশ্বটাই অন্য খেলাগুলোর দুনিয়ার থেকে আলাদা। এটিপি, ডব্লুটিএ-এই দুটো সংস্থাই সম্পূর্ণ টেনিস প্লেয়ার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। যারা ছেলে এবং মেয়েদের টেনিস সার্কিট চালায়। তো যে বা যে সব প্লেয়ার বছরভর সার্কিটে নিজের মালিক নিজেই, সে বা তাঁরা যখন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই আশা করে দেশের জাতীয় সংস্থা তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেবে। এমন নয় যে ভারতীয় প্লেয়াররা এআইটিএ-কে চালনা করবে, কিন্তু প্লেয়ারদের চিন্তা-ভাবনার একটা প্রতিফলন তো এআইটিএ-তে ছাপ রাখতেই পারে। তাতে ভারতীয় টেনিসের ভাল ছাড়া খারাপ কখনও হবে না।
মহেশ কিছু দিন আগে যখন কলকাতায় এসেছিল তখন প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন গড়া নিয়ে আমার সঙ্গে প্রথম কথা বলে। আমার ওদের সব কথা শুনে মনে হয়েছিল সমস্ত কথার মধ্যে যুক্তি না থাকলেও বেশির ভাগ কথাই খুব যুক্তিপূর্ণ। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে, ভারতীয় দল নির্বাচন কমিটিতে প্লেয়ারদের প্রতিনিধি রাখার যে দাবিটা প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন তুলেছে। এই ব্যাপারে আমি মনে করি, ভারতীয় টেনিস প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন সমস্ত ভারতীয় খেলাধূলার ইতিহাসে পথিকৃৎ হয়ে থাকবে।
আমি মনে করি, শুধু টেনিস নয়, প্রতিটি খেলাতেই জাতীয় দল নির্বাচন কমিটিতে প্লেয়ারদের এক জন প্রতিনিধি থাকা উচিত। কেন ধোনি ভারতীয় ক্রিকেট নির্বাচন কমিটিতে থাকবে না বা ভাইচুং ভুটিয়া ভারতীয় ফুটবল নির্বাচন কমিটিতে থাকবে না তা আমার অন্তত বোধগম্য হয় না। কেন না মাঠে ওরাই নেমে লড়াই করে। দলের কোনটা ভাল, কোনটা খারাপ সেটা নির্বাচন কমিটিকে প্লেয়ারই সব চেয়ে ভাল ভাবে জানাতে পারে।
দু’দিন আগে আনন্দবাজারেরই এক সাংবাদিক বন্ধু আমাকে এই টেনিস প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছিল তখনও সরকারি ভাবে ব্যাপারটা ঘোষিত হয়নি বলে তাকে সবটা বলতে পারিনি। সোমবারও যে প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সব ঠিক হয়ে গেল তাও নয়। শুধু প্রেসিডেন্ট ও সচিব নিয়ে কমিটি গঠিত হল। ‘ফাউন্ডার মেম্বার’ও বেশ কয়েক জন আছে। যেমন সোমদেব, বোপান্না, রিকো পিপার্নোরা। ‘কোম্পানি অ্যাক্ট’-এর পঁচিশ নম্বর ধারায় ‘নন-প্রফিটেবল’ সংস্থা হিসাবে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনকে গড়া হয়েছে। খুব শিগগিরই আমাদের সংস্থা এআইটিএ-র থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন করবে এবং আশা করি পেয়েও যাবো। কারণ, আবারও বলছি, ভারতীয় টেনিসের যে কোনও রকম উন্নতির জন্য আমাদের প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন আগামী দিনে সব সময় এআইটিএ-র পাশে থাকবে। এপ্রিলে ভারতের পরের ডেভিস কাপের অনেক আগেই আমাদের সংস্থার পুরো কমিটিও গড়া হয়ে যাবে। আমাদের পরের বৈঠক এমন কী বিদেশেও হতে পারে। প্রয়োজনে সেখানে আমি উড়ে যাব। আমার এবং আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য এআইটিএ-র সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারতীয় টেনিসের উন্নতি সাধন। |