গলায় দড়ি ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল মধ্যবয়সী এক ব্যক্তির। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে চণ্ডীতলার কুমিরমোড়ার সেনপাড়া এলাকায়।
পুলিশ জানায়, শঙ্কর মালিক (৫৩) নামে ওই ভাগচাষিকে এ দিন ঝুলন্ত অবস্থায় বাড়ির গোয়ালে পাওয়া যায়। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
শঙ্করবাবুকে দলের কর্মী বলে দাবি করে সিপিএম নেতৃত্বের দাবি, ধান ভাল না হওয়ায় দেনায় দিশেহারা হয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন শঙ্কর। তাঁর বাড়ির লোকজন অবশ্য জানিয়েছেন, অসুস্থ ছিলেন শঙ্করবাবু। ইদানীং অবসাদে ভুগছিলেন। চিকিৎসা চলছিল তাঁর। বৃষ্টি কম হওয়ায় ধান ভাল হয়নি সেটা ঠিক। কিন্তু ঋণের বিষয়টি নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তাঁর স্ত্রী। তবে তাঁর স্বামী রাজনীতি করতেন না বলেই জানিয়েছেন শঙ্করবাবুর স্ত্রী গোপালীদেবী।
যদিও ওই চাষির মৃত্যুর খবর রটে যেতেই স্থানীয় সিপিএম নেতারা তাঁর বাড়িতে যান। চণ্ডীতলার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক ভক্তরাম পান বলেন, “খেতে চাষের জল না পাওয়ায় শঙ্কর ভাল ধান ফলাতে পারেননি। কিন্তু মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেনি। অবসাদে আত্মহত্যায় বাধ্য হয়েছেন আমাদের ওই কর্মী।”
অন্য দিকে, রাজ্যের কৃষি দফতরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, “ওই চাষির মৃত্যু অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে সেটা নিয়ে সিপিএমের রাজনীতি করাটাও কম দুঃখের নয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাঁর পরিবার সাহায্য পাবে। আসলে সিপিএম পঞ্চায়েত ভোটের মুখে চাষির মৃত্যুর কথা বলে পালে হাওয়া টানতে চাইছে।” যদিও তাঁর বিশ্বাস, “মানুষ বোকা নয়।”
শঙ্করবাবুর দাদা রণজিৎ মালিক এ দিন বলেন, “ভাই অবসাদে ভুগছিল। ঋণ কত টাকা ছিল তা বলতে পারব না। তবে ভাল করে খেতে না পারায় তার চিকিৎসা চলছিল দীর্ঘদিন। কাজ না হওয়ায় পরিচিত লোকজনের পরামর্শে ওঝা-গুণিন দেখান হয়।”
গোপালীদেবী বলেন, “ভূত তাড়াতে স্বামীকে জলপোড়া দিয়েছিল গুণিন। ভাল করে খেতে পারছিলেন না স্বামী। উনি বেশি দিন বাঁচবেন না, সেটা বলেই দিয়েছিল গুণিন। তারপর থেকে স্বামী চুপচাপ থাকত।”
চণ্ডীতলার তৃণমূল নেতা সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “হুগলি জেলা সর্বশিক্ষায় রাজ্যের মধ্যে অগ্রগন্য বলে ঘোষণা করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। কেমন শিক্ষা হয়েছিল মালুম পাওয়া যাচ্ছে। এখনও মানুষ গুণিন দেখিয়ে ভূতপ্রেতের ভয়ে অবসাদে আত্মহত্যা করেন।” তাঁর কটাক্ষ, “সর্বশিক্ষার সব টাকা ভূতেই খেয়েছে।” |