|
|
|
|
|
লাল-সবুজ জার্সি বদলে
জমে উঠছে ভোট-ম্যাচ
সন্দীপন চক্রবর্তী • উদয়পুর |
|
তখ্ত বদল হবে কি না, জানা নেই। কিন্তু জার্সি বদল হচ্ছে জবরদস্ত!
সম্মুখ সমরের ময়দানে যে দুই প্রধান প্রতিপক্ষ ত্রিপুরায়, তাদের মধ্যেই দেদার চলছে দলবদল! সংখ্যার তুল্যমূল্য বিচারে কিছু এগিয়ে সিপিএম। বিধানসভা ভোটের আগের চার-পাঁচ মাসে কংগ্রেসের দিক থেকে তাদের পক্ষে এসেছেন প্রায় তিরিশ হাজার সমর্থক, দাবি ত্রিপুরা সিপিএমের ‘আলিমুদ্দিন’ দশরথ দেব স্মৃতি ভবনের। তার মধ্যে সক্রিয় কর্মী পাঁচ হাজারের বেশি। আবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনের দাবি, সিপিএম থেকে বেরিয়ে আসছেন শ’য়ে শ’য়ে মানুষ!
জেলায় জেলায় সিপিএমের নির্বাচনী প্রচারসভায় নেতারা হাতে লাল পতাকা ধরিয়ে দলে টেনে নিচ্ছেন কংগ্রেস সমর্থকদের! প্রভাত দত্ত বা লিটন সাহা যেমন। ধনপুরে নিজের কেন্দ্রে লিটনকে দলে স্বাগত জানানোর পরে প্রায় তাঁর বাড়ির উঠোনে ছোট সভা করে এসেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার! আবার সিপিএম ছেড়ে সদ্য এসেছেন বলে কংগ্রেসের প্রচারে নানা প্রান্ত থেকে ডাক আসছে প্রবীর চক্রবর্তীর! তবে দলবদলের এই প্রতিযোগিতার সেরা ছবি পেশ করছে বড়জলা বিধানসভা কেন্দ্র। যেখানে দু’দলের প্রার্থীই দুই জিতেন্দ্র এবং দু’জনেই দলত্যাগী!
পশ্চিম ত্রিপুরার বড়জলা কেন্দ্রটি এ বার তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। যার ফলে পাশের আগরতলা কেন্দ্রে সরে গিয়েছেন বড়জলার বর্তমান বিধায়ক সিপিএমের শঙ্কর দত্ত। শঙ্করবাবুর জায়গায় বড়জলায় সিপিএমের নতুন প্রার্থী জিতেন্দ্র দাস। যিনি ১৫ বছরেরও বেশি প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন! তিনি লড়ছেন কংগ্রেস প্রার্থী জিতেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। যিনি সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলেন এবং তেলিয়ামুড়া থেকে পাঁচ বার বিধায়ক হয়েছিলেন! দল বদলে এ বারই প্রথম হাত চিহ্ন নিয়ে ভোটে! |
|
|
জিতেন্দ্র দাস |
জিতেন্দ্র সরকার |
|
লঙ্কামুড়ার স্কুলের কাছে বাড়ি বাড়ি প্রচারের ফাঁকে সিপিএমের জিতেন্দ্রকে ধরা গেল। গলার লাল উত্তরীয় টানটান করে নিয়ে বললেন, “কংগ্রেসের দ্বিচারিতা আর প্রতারণা লোকে ধরে ফেলেছে! ভোট এলে ওরা কিছু বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয়। তার পরে আর মানুষের জন্য কিছু কাজ করে না!” জিতেন্দ্র কংগ্রেস ছেড়েছিলেন ২০০৪ সালে। সিপিএম তাঁকে দীর্ঘ সময় পরখ করে দেখেছে এবং এখন তিনি খয়েরপুর লোকাল কমিটির সদস্য। তাঁর বক্তব্য, “এই যে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য নির্মল দাস, জ্যোতির্ময় কর্মকার বা চন্দন ত্রিপুরা সম্প্রতি দল ছেড়ে দিলেন, এই একই কারণে!”
জিতেন্দ্রের প্রতিদ্বন্দ্বী বর্ষীয়ান জিতেন্দ্র আবার পাল্টা অভিযোগ ঢেলে দিচ্ছেন সিপিএমের বিরুদ্ধে। ঊষাবাজারে এক সমর্থকের বাড়ি বিশ্রামে গিয়ে বিছানায় বসে ছিলেন হাঁটু মুড়ে। ওই অবস্থাতেই বললেন, “এসএফআই থেকে সিপিএম পার্টি করা শুরু করেছিলাম। নৃপেন চক্রবর্তী, দশরথ দেব, বীরেন দত্তদের দেখে পার্টিটার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। কিন্তু এখন নানা স্তরে দুর্নীতি। সে সব কথা বলতে গেলে নেতারা বিরক্ত হন। গরিব, তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য উন্নয়নের টাকা ঠিক কাজে খরচ করে না। তাই বেরিয়ে এসেছি।”
রাজ্য রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, ত্রিপুরায় তৃণমূল এখনও শক্তপোক্ত হয়ে না-ওঠায় কংগ্রেস ছেড়ে সেই দলে কেউ যাচ্ছেন না। যা পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে। বিজেপি-রও তেমন অস্তিত্ব নেই। এই অবস্থায় প্রধান দু’টো দল কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যেই দলবদল হচ্ছে! কিন্তু বর্ষীয়ান জিতেন্দ্রবাবু তো সিপিএম ছেড়ে সিপিআই, আরএসপি বা ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বামপন্থী দলে যেতে পারতেন? কংগ্রেস প্রার্থীর জবাব, “বাকি বামপন্থী দলগুলোর তেমন অস্তিত্ব নেই। কংগ্রেসেও অনেক দুর্বলতা আছে। কিন্তু এখানে অন্তত দুর্নীতিগ্রস্তদের দায়িত্ব দলীয় নেতৃত্ব কাঁধে নেন না। দুর্নীতির দায়ে জেলে গেলেও দল বাঁচাতে আসে না!”
কংগ্রেস নেতা সমীররঞ্জন বর্মণের কথায়, “রিগিং করে, গ্রামের দিকে ভয় দেখিয়ে সিপিএম মানুষকে নিজেদের দিকে রাখার চেষ্টা করেছে! একটু সুযোগ পেলে তারা তো সিপিএমকে পরিত্যাগ করবেই।”
নীতিবাগীশ সিপিএম কেন গত কাল পর্যন্ত কংগ্রেস-করা লোকজনের হাতে পতাকা ধরাবে? দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ব্যাখ্যা, “সবাই তো সিপিএমের সদস্য নয়! পার্টির মেম্বার একটা আলাদা ব্যাপার। এতগুলো লোক, এত দিন একটা পার্টি করত। সেটা ছেড়ে এখানে আসতে চাইছে, তাদের অশ্রদ্ধা করব কেন?” |
|
|
|
|
|