|
|
|
|
ফাঁসির দু’দিন পরে এসে পৌঁছল তিহাড়ের চিঠি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর |
অবশেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো চিঠি পৌঁছল কাশ্মীরের সোপোরে, আফজল গুরুর বাড়িতে। ফাঁসির দিনক্ষণ জানিয়ে পাঠানো সেই চিঠি আফজলের স্ত্রী তবসুমের হাতে এল ফাঁসি হয়ে যাওয়ার ৫১ ঘণ্টা পরে।
চিঠি-বিতর্ক চলছে ফাঁসির দিন থেকেই। নিয়ম অনুযায়ী, ফাঁসির খবর জানিয়ে আসামির পরিবারকে চিঠি পাঠান সংশ্লিষ্ট জেল সুপার। চিঠি পাঠানো হয় স্পিডপোস্টে। আফজলের বেলায় প্রথম চিঠিটি পাঠানো হয় বৃহস্পতিবার। পরদিন আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। এ দিন জম্মু-কাশ্মীরের পোস্ট মাস্টার জেনারেল স্যামুয়েলকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, শনিবার চিঠিটি জিপিও-তে পৌঁছয়। আজ সকালে সেটি আফজলের বাড়িয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। কেন? স্যামুয়েল বলেন, “রবিবার ছুটি। তাই আজ চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়।”
সংক্ষিপ্ত সেই চিঠিতে তিহাড় জেলের সুপার লিখেছেন: “আপনাকে জানানো হচ্ছে, সংসদ হামলায় অভিযুক্ত আফজল গুরুকে শনিবার সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে ফাঁসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
ফাঁসির দিনই আফজলের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, তাঁদের অন্ধকারে রেখে এই ফাঁসি হয়েছে। তাঁরা সরকারের তরফে কোনও চিঠি বা ফোন পাননি। একই বিষয়ে এর পরে সরব হন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। সরকারের তরফে সে দিন থেকেই কিন্তু বারবার বলা হচ্ছিল, চিঠি তারা পাঠিয়েছে। |
|
সুনসান লাল চক। কার্ফুর শ্রীনগরে। সোমবার। ছবি: পিটিআই |
এ দিন চিঠি পৌঁছনোর পরে প্রশ্ন ওঠে, এত সময় লাগল কেন? তার পরেই স্যামুয়েলের সাংবাদিক বৈঠক। সেখানে তিনি আরও জানান, আজ কার্ফু সত্ত্বেও চিঠি কিন্তু আফজলের বাড়িতে ১১টার মধ্যেই পৌঁছেছে। এই নিয়ে প্রশ্নের হাত থেকে রেহাই পাননি শিন্দেও। দিল্লিতে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আফজলের স্ত্রী তবসুমকে কেন টেলিফোন করা হল না? শিন্দে বলেন, “আমি ফাইলে সই করেছি। এর পরে পরিবারকে জানানোর দায়িত্ব সচিব ও জেল সুপারের। তাঁরা নিয়ম মেনেই সে কাজ করেছেন।”
কিন্তু চিঠি দেরিতে আসার পিছনে যে অন্য কারণ রয়েছে, সে কথা মেনে নিয়েছে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের এক সূত্র বলছে, “আগে চিঠি পৌঁছলে ফাঁসির খবর ফাঁস হয়ে যেত। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবেই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে। আফজলের পরিবার ফের সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানালে ফাঁসি আটকে যেতে পারত। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে এই কৌশল করা হয়েছে, যাতে দু’কুলই রক্ষা পায়।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিন্দেও এই কৌশলের কথা পরোক্ষে মেনে নেন। তাঁর বক্তব্য, প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পরেও রাজীব গাঁধীর হত্যাকারীরা আদালতে আর্জি জানান। তাই তাঁদের ফাঁসির বিষয়টি এখনও ঝুলে রয়েছে। ওমর গত কাল দাবি তুলেছিলেন, আফজলের পরে রাজীব গাঁধীর হত্যাকারীদেরও ফাঁসি দিতে হবে। না হলে বেছে বেছে আফজলকেই ফাঁসি দেওয়া হল বলে কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্মের কাছে বার্তা যাবে। শিন্দের পাল্টা যুক্তি, রাজীব গাঁধী বা বিয়ন্ত সিংহের হত্যাকারীদের ফাঁসি আটকে রয়েছে বিচারবিভাগীয় জটিলতায়। তার সঙ্গে আফজলের ফাঁসির তুলনা টানা যায় না। তা হলে এই গোপনীয়তা কেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গোপনীয়তা বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল। কারণ আজমল কসাবের মতো আফজলের ফাঁসিও যথেষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়।”
ওমর কিন্তু আজ কিছুটা নরম। তিনি মনমোহন সিংহ এবং সনিয়া গাঁধীকে এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, ইউপিএ ছাড়ার প্রশ্নই নেই। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণাও তাঁর লক্ষ্য নয়। আসলে কাশ্মীরের মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ ঠান্ডা করতেই তিনি কেন্দ্রকে আক্রমণের কৌশল নিয়েছেন।
আফজলের ফাঁসির পরে কাশ্মীরের বিরোধী দল পিডিপি মাঠে নেমে পড়েছে। ওমরকে দিল্লির চর বলে প্রচার চালানোর হুমকি দিয়েছেন মেহবুবা মুফতি। হুরিয়ত নেতারা তো আছেনই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চিঠি বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, কেন আফজলের পরিবারকে ন্যূনতম মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হল?
ওমর এখন যে প্রবল চাপের মধ্যে পড়েছেন, তার সঙ্গে অনেকেই ১৯৮৪ সালে মকবুল বাটের ফাঁসির পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মিল পাচ্ছেন। তখন কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ওমরের বাবা ফারুক আবদুল্লা। তিহাড়ে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বাটের ফাঁসির পরে ভোটে হারেন ফারুক। এ বার তাই তিনিও দাবি তুলেছেন, “শুধু কাশ্মীরের কাছে নয়, গোটা দেশের কাছেই কেন্দ্রকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।” তবে এ কথা বললেও ফারুকেরও স্পষ্ট মত, তাঁরা সরকার ছাড়ছেন না। তাই পিতা-পুত্রের এই অবস্থানকে যতটা না আক্রমণাত্মক, তার থেকেও রক্ষণাত্মক কৌশল হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস। তারা বলছে, ইতিহাস মাথায় রেখেই এ বার নিজের পিঠ বাঁচাতে ময়দানে নেমেছেন ওমর। কেন্দ্রকেও দোষ দিচ্ছেন। তাই এর পরেও সম্পর্কে চিড় ধরবে না বলেই কংগ্রেসে নেতৃত্বের আশা।
|
আফজলের চিঠি এখনও পথে
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
৮ ফেব্রুয়ারির রাতে তাঁকে জানানো হয়েছিল, পরের দিন সকালেই তাঁর ফাঁসি। চমকে গেলেও তার পর শান্তই ছিলেন আফজল গুরু। জেল সুপারকে জানিয়েছিলেন, স্ত্রী তবসুমকে একটা চিঠি লিখতে চান। জেলের এক অফিসার জানান, ফাঁসির দিনই আফজলের সেই চিঠিটি ডাকে দেওয়া হয়। তবে ওই চিঠি এখনও হাতে পায়নি আফজলের পরিবার। এ প্রসঙ্গে আফজলের তুতো ভাই ইয়াসিন কটাক্ষ করে বলেন, “ওর ফাঁসির দিনক্ষণ জানিয়ে পাঠানো চিঠিটা যেমন আজকে পেলাম, তেমন ওর লেখা চিঠিটাও হয়তো দেরি করেই পাব।” |
|
|
|
|
|