সময় রবিবার রাত প্রায় ১২টা। কোমরে হাত দিয়ে রাস্তায় বসে রয়েছেন এক যুবক। রক্তে চারপাশ ভেসে যাচ্ছে। হঠাৎই পরিচিত এক যুবককে দেখে চিৎকার করে উঠলেন তিনি, “আমায় গুলি করেছে। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে চল।” ঘটনাস্থল লালবাজার থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে রবীন্দ্র সরণির ফুটপাথ। গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত ওই যুবককে উদ্ধার করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার সেখানেই মারা যান তিনি। পুলিশ জানায়, মৃত ওই যুবকের নাম মহম্মদ হাসিম ওরফে বাচ্চা কাল্লু (৩২)। বাড়ি বড়বাজার থানা এলাকার গোবিন্দচন্দ্র ধর লেনে।
লালবাজারের ১০০ মিটারের মধ্যে দুষ্কৃতীর গুলিতে মৃত্যুর ঘটনায় শহরের নিরাপত্তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে। সাধারণ মানুষের বক্তব্য, খোদ কলকাতা পুলিশের সদর দফতরের নাগালের মধ্যে এক যুবককে গুলি করে কী ভাবে পালিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা? পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, বাচ্চা কাল্লুকে কোথায় গুলি করা হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। অন্য কোথাও গুলি করে লালবাজারের অদূরে ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।
কী হয়েছিল রবিবার রাতে? কাল্লুর বন্ধু মহম্মদ জাভেদ জানান, রাত ১১টা নাগাদ পাড়ায় ফেরেন কাল্লু। সাড়ে ১১টা নাগাদ মোবাইলে ফোন পেয়েই বেরিয়ে যান। জাভেদের দাবি, বীরু নামে আর এক যুবকের সঙ্গে কাল্লু ক্যানিং স্ট্রিটের মোড় পর্যন্ত যান। বীরুই জানিয়েছেন, সেখান থেকে কাল্লু একটি মারুতি জেন গাড়িতে চাপেন। রাত ১২টা নাগাদ কামরান নামে এক যুবক কাল্লুকে রক্তাক্ত অবস্থায় রবীন্দ্র সরণির ফুটপাথে বসে থাকতে দেখেন। তিনিই অন্য বন্ধুদের ফোনে ডেকে কাল্লুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। পুলিশ সূত্রের খবর, কাল্লুর কোমরের উপরে পেটের বাঁ দিকে গুলি করা হয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কাল্লুর কিডনি ও প্লীহা জখম হয়েছিল।
লালবাজার সূত্রের খবর, কাল্লুকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখার পরে বীরু ওরফে জেম্স আহমেদকে ফোন করেন কামরান। তাঁরা দু’জনে জখম কাল্লুকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কাল্লুর মামা আসরফ জানান, ওই যুবকের স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে আছে। গুলিতে জখম হওয়ার পরেই স্ত্রীকে ফোন করেন কাল্লু।
জাভেদ জানান, সম্প্রতি কাল্লুকে ফোন করে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তবে এ নিয়ে তাঁরা অভিযোগ দায়ের করেননি। শাহনওয়াজ নামে কাল্লুর আর এক বন্ধু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন, কলুটোলার বাসিন্দা আদনান তাঁকে গুলি করেছে বলে মৃত্যুর আগে কাল্লু তাঁকে জানান। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ জানান, অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। দু’জনকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মাস খানেক আগে আদনান ও বাচ্চা কাল্লুর মধ্যে বচসা হয়। পুলিশের দাবি, আদনান একটি বিষয় নিয়ে কাল্লুর পরিচিত কয়েক জনকে হুমকি দেয়। কাল্লু তার প্রতিবাদ করে। এর পর থেকেই কাল্লু ও আদনানের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। পুলিশের একাংশের দাবি, কাল্লুর বিরুদ্ধে মধ্য কলকাতার বিভিন্ন থানায় দুষ্কর্মের অভিযোগ ছিল। তবে বছর দুয়েক ধরে তিনি নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আদনানও একই ব্যবসায় যুক্ত। ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে এই ঘটনা কি না, খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ।
|