কাজেই লাগে না, বিশ-বাঁও জলে প্রকল্প |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
কোথাও নলকূপের চাতাল, কোথাও বা পুকুরঘাটে কাপড় কাচার পাটাতন। এই ভাবেই ব্যবহার হচ্ছে সরকারি ভর্তুকিযুক্ত শৌচাগারের প্লেট। প্রতি ঘরে শৌচাগার বানানোর সরকারি পরিকল্পনা কার্যত বিশ-বাঁও জলে বলেই মনে করছে প্রশানসিক মহলের একাংশ। অন্য দিকে, ‘নিম্নমানের’ ওই শৌচাগার ব্যবহারেরই উপযুক্ত নয় বলে দাবি উপভোক্তাদের।
কেমন ছিল সরকারি ভর্তুকিযুক্ত সেই শৌচাগার? ওই শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ময়ূরেশ্বরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে জানানো হয়, ফুট তিনেক মাটির গর্ত করে তার মধ্যে বসানো হত তিন ফুট ব্যাসার্ধের কংক্রিটের রিং। তার ওপরে বসানো হত সিমেন্টেরই সাইফন-সহ কংক্রিটের সম্পূর্ণ চাতাল। উপভোক্তাদের অভিযোগ, কিছু দিনের মধ্যেই ওই শৌচাগার হয়ে পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী। অথচ ‘প্রতি ঘরে শৌচাগার সুস্বাস্থ্য সবাকার’ সরকারি এই স্লোগান সফল করার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল প্রশাসন। প্রতিটি ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি প্রাপকদের অনুদান থেকে কেটে নেওয়া হয়েছিল ৩০০ টাকা। বাকি ৩২০০ টাকা সরকার থেকে দেওয়ার কথা। বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পেত শৌচাগার নির্মাণের দায়িত্ব। যথারীতি এই নিয়ে ওঠে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ। কিন্তু ইন্দিরা আবাস যোজনায় অনুদান পাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে ওই শৌচাগার নির্মাণের জন্য টাকা দিতে বাধ্য হতেন বলে অভিযোগ।
নানুরের মাধপুরের রেজিনা বিবি, ময়ূরেশ্বরের সনকপুরের হারাধন হাজরা জানান, শৌচাগার নির্মাণের কিছু দিন পরেই চাতালটি খুলে নিয়ে নলকূপ বা পুকুরঘাটে কাপড় কাচার পাটাতন বা বাসন মাজার কাজে ব্যবহৃত হয়। ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের বাজিতপুর পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের উপপ্রধান সৈয়দ কাসাফ দোজা, নানুর পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শোভারানী মণ্ডলরা বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনায় তিনশো টাকা করে কেটে ওই শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা কার্যত জলে গিয়েছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই এ বছর নতুন ধরনের শৌচাগার নির্মাণের পকিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন।”
কেমন হবে সেই নতুন শৌচাগার? প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, খোপ খোপ ইটের গাঁথনির উপর অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের চাতাল এবং প্যান থাকবে। থাকবে কংক্রিটের ছাদ-সহ টিনের দরজা দেওয়া ইটের ছোট ঘর। শৌচাগার ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে বালতিও। আগের তুলনায় এই নতুন ধরনের শৌচাগার অনেক বেশি উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্প রূপায়ণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ময়ূরেশ্বরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক সদ্বেন সিংহ। একই আশা প্রকাশ করেছেন নানুরের বিডিও সজল দাস এবং ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের ভারপ্রাপ্ত বিডিও মলয়শঙ্কর চট্টোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, “অনভ্যাসের কারণে বহু পরিবার ওই শৌচাগার ব্যবহার করেন না। এ বার থেকে শৌচাগার নির্মাণের পর উপভোক্তা পরিবারগুলি যাতে সেটি ব্যবহার করে তার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপের চিন্তাও করছে প্রশাসন।” |