বার্নপুরে অবশেষে বসছে বীরেন্দ্রনাথের মূর্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বার্নপুর |
দেশের অন্যতম প্রাচীন ইস্পাত কারখানা ইস্কোর রূপকার ছিলেন তিনি। মৃত্যুর ত্রিশ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরে অবশেষে বার্নপুরে বসছে স্যার বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তি। দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগে খুশি ইস্পাতনগরীর বাসিন্দারা।
ইস্কোর প্রথম চেয়ারম্যান বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে সংস্থার নব রূপকার বলে মনে করেন প্রাক্তন থেকে বর্তমান, সমস্ত শ্রমিক-কর্মী। আর ইস্কোর ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকার উন্নতি হয়েছিল, মনে করেন বার্নপুরের বাসিন্দারা। ইস্কো কারখানার প্রসঙ্গ উঠলেই উচ্চারিত হয় বাঙালি এই শিল্পপতির নাম।
১৮৯৯ সালে কলকাতায় জন্ম হয় বীরেন্দ্রনাথবাবুর। শিবপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার পরে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ব্রিটেন যান। ১৯২৪ সালে দেশে ফিরে বাবা রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও অ্যাকুইন মার্টিন-এর যৌথ উদ্যোগে তৈরি বার্নপুরের মার্টিন কোম্পানিতে যোগ দেন। দেশে উন্নত ইস্পাতের বিপুল চাহিদা আছে বুঝতে পেরে ১৯৩৭ সালে বার্নপুরে তৈরি করেন স্টিল কর্পোরেশন অফ বেঙ্গল (স্কব) নামে একটি ইস্পাত কারখানা। |
বাঁ দিকে, সস্ত্রীক বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (মাঝে)। ফাইল চিত্র। ডান দিকে, উন্মোচন হবে এই মূর্তির।-শৈলেন সরকার। |
১৯৩৯-এ সেখানে উৎপাদন শুরু হয়। ঠিক ১৩ বছর সেই কারখানা সফল ভাবে চলার পরে ১৯৫৩ সালে ১ জানুয়ারি ইস্কোর সঙ্গে নিজের কারখানাকে মিলিয়ে দেন তিনি। এর পরে ইস্কোর পরিচালন সমিতির নির্ভরযোগ্য সদস্য হিসেবে কারখানাকে ক্রমশ উন্নতির পথে নিয়ে যান তিনি। একাধিক কয়লা খনি, লৌহ আকরিক খনি গড়া ও কুলটি-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একাধিক শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি ইস্কো গোষ্ঠীর প্রথম চেয়ারম্যান পদের দায়িত্ব দেন। ১৯৭২-এর ১৪ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকার ইস্কো কারখানা অধিগ্রহণ করে। সে দিন পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ইস্কোর চেয়ারম্যান। ১৯৮২ সালের ৪ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
বর্তমানে ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে নব কলেবরে গড়ে তোলা হচ্ছে এই কারখানা। ইস্কোর শ্রমিক-কর্মীদের বিশ্বাস, বীরেন্দ্রনাথবাবুর নিরলস পরিশ্রমেই এই কারখানা মহীরুহে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কর্মী ও বাসিন্দাদের আক্ষেপ ছিল, কারখানায় চাকরি করতে আসা এখনকার প্রজন্ম এ সব জানেন না। দাবি ছিল, বীরেন্দ্রনাথবাবুর কীর্তি তুলে ধরতে একটি আবক্ষ মূর্তি শহরে বসানো হোক। অবশেষে ইস্কোর শ্রমিক-কর্মীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ভারতীভবন এ ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে। বীরেন্দ্রনাথবাবুর ১১৪তম জন্মদিন উপলক্ষে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতীভবন কায্যালয়ের সামনের উদ্যানে এই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করবেন ইস্কোর মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক নরেন্দ্র কোঠারি। ভারতীভবনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই সংগঠনটি বীরেন্দ্রনাথবাবুর হাত ধরেই গড়ে উঠেছে। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এর ভাল-মন্দ খোঁজ নিয়েছেন। তাই এটি আমাদের একটি ছোট শ্রদ্ধার্ঘ্য মাত্র।” সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ সম্পদ বসু বলেন, “অনেক আগেই হয়তো এটা করা উচিত ছিল। হয়ে ওঠেনি। এখন করতে পেরে ভারমুক্ত লাগছে।” দেরিতে হলেও ইস্কোর রূপকারকে যে মর্যাদা দেওয়া গিয়েছে, তাতে খুশি শহরবাসীও। |