এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে মারধর করে লুঠপাট চালাল ডাকাত দল। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে উত্তর দিনাজপুরে ইসলামপুর শহরের শান্তিনগর এলাকায়। এক দুষ্কৃতীকে ধরে ফেললে অন্য আর এক দুষ্কৃতীর হামলায় জখম হন ব্যবসায়ী কান্তি কুণ্ডু। তাঁকে ইসলামপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ব্যবসায়ীর মাথা ফেটেছে। তাঁর বুকে আঘাত লেগেছে। দুষ্কৃতীরা কান্তিবাবুর ছেলেকেও বেঁধে মারধর করে। লুঠ করে কয়েক লক্ষ টাকা, কয়েক ভরি গয়না। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে শুরু হয় গুলির লড়াই। গুলি ও বোমা ছুঁড়ে পালানোর সময় এক জন দুষ্কৃতীকে পুলিশ ধরে ফেলে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম মহম্মদ আকালু। বাড়ি বিহারের ঠাকুরগঞ্জ এলাকায়। ওই দুষ্কৃতীর কাছ থেকে লুঠ করা প্রায় দেড় লক্ষ টাকাও উদ্ধার হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে পুলিশ ১২ রাউন্ড গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে ৬টি কার্তুজ, একটি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং কয়েকটি বোমাও উদ্ধার হয়েছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাত দেড়টা নাগাদ অন্তত ২১ জনের ডাকাত দল ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয়। ওই সময় বাড়ির প্রত্যেকে ঘুমিয়ে ছিলেন। দুষ্কৃতীরা প্রথমে বাড়ির দুটি লোহার গেট এবং পরে ঘরের দরজা ভাঙে। ছুঁড়ে ফেলতে শুরু করে ঘরের আসবাব। প্রত্যেকের মুখে গামছা বাঁধা থাকায় বাড়ির লোকজন চিনতে পারেননি। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুঠপাট চালাতে শুরু করে। ওই সময় কান্তিবাবু এক দুষ্কৃতীকে জাপটে ধরলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। পিছন থেকে অন্য এক দুষ্কৃতী শাবল দিয়ে মাথায় আঘাত করলে ব্যবসায়ী মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কান্তিবাবুকে বাঁচাতে গিয়ে স্ত্রী বেলাদেবী জখম হন। এর পরে ব্যবসায়ীর এক ছেলে অমলেশকে বেঁধে পেটায় দুষ্কৃতীরা। ওই সময় ব্যবসায়ীর অন্য এক ছেলে কমলেশ একটি ঘরে লুকিয়ে মোবাইল ফোনে পুলিশকে খবর দেন। কান্তিবাবু অবসরপ্রাপ্ত সামরিক জওয়ান। তাঁর মুড়ি তৈরির মিল রয়েছে। হাসপাতালে শয্যায় শুয়ে তিনি বলেন, “রবিবার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে টাকা দিতে হয়। ওই কারণে বাড়িতে টাকা রেখেছিলাম। মেয়ের কিছু গয়নাও ছিল বাড়িতে। দুষ্কৃতীরা নাতনির দিকে বন্দুক তাক করলে মেয়ে তার গয়না দিয়ে দেয়।” পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ডাকাত দলটি ঘরে ঢুকে সিন্দুক ভেঙে তিন লক্ষ টাকা এবং আলমারি ভেঙে প্রায় ১৫ ভরি সোনার গয়না এবং প্রায় ৮ লক্ষ টাকা লুঠ করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শব্দ পেয়ে পাড়ার অনেকে জেগে উঠলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে যেতে পারেনি। দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। শুরু হয় গুলির লড়াই। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছুঁড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা। আইসি সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী সামান্য জখম হন। ওই সময় একজনকে ধরা সম্ভব হলেও অন্য দুষ্কৃতীরা বিহারের দিকে পালিয়ে যায়। ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, দুষ্কৃতীরা বিহার ও বাংলা দুই এলাকার বাসিন্দা। বেশ কিছুদিন থেকে দলটি ব্যবসায়ীর গতিবিধির উপরে নজর রেখেছিল। বাড়িতে কোনদিন বেশি টাকা থাকে সেই সম্পর্কে খবর নিয়ে এ দিন ডাকাতির ছক কষে। এ ছাড়াও ঘটনার সঙ্গে ব্যবসায়ীর ঘনিষ্ট কেউ জড়িত থাকার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। এসডিপিও জানান, সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। |