সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। জরিমানার ১ লক্ষ টাকাও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলের বাইরে পা রাখতে পারেনি দুই শিশু, চারজন মহিলা সহ ১২ জন মায়ানমারের নাগরিক। একই ভাবে হোমে পড়ে আছে ওই দেশেরই তিন নাবালক। জেলে ও হোমে বন্দিদের দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মালদহের একটি মানবাধিকার সংস্থা দিল্লিতে ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজির (ইউ এন এইচ সি আর) প্রধানের পাশাপাশি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে। ওই ঘটনার জন্য জেল কতৃপর্ক্ষকে দায়ী করে মালদহের গৌড়বাংলা হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারন্যাস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন, “বিদেশী নাগরিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ৬ ফেব্রুয়ারি সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর পরেও ১৫ জন মায়ানমারের নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে জেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হচ্ছে না।” জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ওই বিষয়ে পুলিশের কিছই করার নেই। আদালতের নির্দেশ সরাসরি জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।” সাজা শেষ হওয়ার পরেও কেন বন্দিদের ছাড়া হয়নি? মালদহ জেলা সংশোধনাগারে সুপার দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, “মায়ানমারের নাগরিকরা এই জেলে ছিল। আদালতের রায় বের হওয়ার পরে ওদের বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলে পাঠানো হয়েছে। আদালত থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার নির্দেশ ও জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার কাগজ হাতে পৌঁছনোর পরে ফ্যাক্স করে সেটা বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।” যদিও বহরমপুর সেন্ট্রাল জেলের সুপার রবীন চক্রবর্তী বলেন, “মায়ানমার নাগরিকদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়েছে এমন নির্দেশ হাতে পাইনি।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে মালদহ টাউন স্টেশন চত্বর থেকে দুই শিশু, ৪ মহিলা সহ ১৫ মায়ানমারের নাগরিককে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পরে তিন নাবালককে মালদহের সরকারি হোমে এবং বাকিদের মালদহ জেলা সংশোধনাগারে পাঠানো হয়। গৌড়বাংলা হিউম্যান রাইটস অ্যাওয়ারন্যস সেন্টার সম্পাদক জানান, ধৃতরা প্রত্যেকে নিজের দেশে গোলমালে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ হয়ে দিল্লিতে ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর রিফিউজি শিবিরে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিল। এটা জানা সত্বেও ইংরেজবাজার থানার পুলিশ তাঁদের বাংলাদেশি হিসাবে চিহ্নিত করে আদালতকে ভুল তথ্য দেয়। পরে ধৃতরা মায়ানমারের নাগরিকের প্রমানপত্র আদালতে দাখিল করে। মালদহ আদালতের ফাস্ট ট্র্যাকের ষষ্ঠ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রবীর কুমার মিশ্র ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর অভিযুক্তদের মায়ানমারের বাসিন্দা উল্লেখ করে দুবছর জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা দেন। জরিমানা অনাদায়ে আরও দেড় বছর জেলের সাজা দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিচারক তাঁর রায়ে উল্লেখ করেন সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ধৃতদের উপযুক্ত স্থানে পাঠানো যেতে পারে। মানবাধিকার সংগঠনের কর্তাদের দাবি, আদালত মায়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়নি। ৬ ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের নাগরিকদের সাজার মেয়াদ শেষ হয়। ৩০ জানুয়ারি দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জরিমানার টাকা আদালতে জমা দিয়ে দিয়েছে। |