নির্যাতিতা বা ধর্ষিতা অনেক সময়ে সরাসরি থানায় যাওয়ার সাহস পান না বা থানায় গেলেও যথাযথ সহযোগিতা মেলে না বলে অভিযোগ ওঠে। দিল্লির ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভের ঝড় ওঠার পরে কেন্দ্র এ বার ঠিক করেছে নির্যাতিতা নারী সাহায্যের জন্য থানার বদলে সরাসরি সরকারি হাসপাতালে যেতে পারবেন। এর জন্য প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় একটি সরকারি হাসপাতালে খোলা হচ্ছে ২৪ ঘণ্টার নারী সহায়তা কেন্দ্র, যার সরকারি নাম ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার ফর উইমেন।’ দেশের মধ্যে কলকাতাতেই প্রথম এই ব্যবস্থা চালু হবে।
সমাজকল্যাণ দফতর ও স্বাস্থ্য দফতর সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতাল ও আরজিকর হাসপাতালে এই কেন্দ্র চালু হবে বলে ঠিক হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালগুলি যেখানে এমনিতেই রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম, জায়গার সঙ্কটও প্রবল, সেখানে নারী সহায়তা কেন্দ্র কতটা চালানো যাবে।
সমাজকল্যাণসচিব রোশনী সেন বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, একটি বা দু’টি ঘর ছেড়ে দিতে সমস্যা হবে না। প্রতি কেন্দ্রের জন্য ৩৫ লক্ষ করে টাকা এবং একজন কাউন্সেলরের ব্যবস্থা করবে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যের দায়িত্ব জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি এক জন চিকিৎসক (বিশেষত গাইনোকলজিস্ট) এবং এক জন পুলিশ অফিসারের ব্যবস্থা করা।” স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দোপাধ্যায়ও জানান, এত জরুরি একটা বিষয় থেকে পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই। হাসপাতালের চিকিৎসকদের এই কেন্দ্রে বসার জন্য শিফ্ট করে দেওয়া হবে। তা ছাড়া, বড় হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ি থেকেও এক জন করে কর্মীকে এই কেন্দ্রে বসানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে।
কী ভাবে কাজ হবে এই সহায়তা কেন্দ্রে?
সমাজকল্যাণ দফতর ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ঘরে-বাইরে যে কোনও ভাবে নির্যাতিতা নারী সোজা এই কেন্দ্রে যেতে পারবেন। সেখানে তৎক্ষণাৎ তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা হবে। ধর্ষণের অভিযোগে দ্রুত শারীরিক পরীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। সহায়তা কেন্দ্রের পুলিশ সরাসরি নিকটবর্তী থানায় যোগাযোগ করে অভিযোগ দায়েরে সাহায্য করবেন। পাশাপাশি ওই নির্যাতিতাকে মানসিক জোর দেওয়া ও অভিযোগ দায়েরে সাহায্য করবেন কাউন্সেলর। সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রে খবর, এপ্রিল থেকেই কলকাতার অন্তত দু’টি হাসপাতালে এই কেন্দ্র খোলা হবে। শুধু তা-ই নয়, রাজ্য সরকারের প্রতিটি দফতর যাতে ‘জেন্ডার বাজেটিং’ অর্থাৎ শুধু নারী সংক্রান্ত কাজর্মে বাজেট বরাদ্দ আলাদা ভাবে করে সে বিষয়েও নির্দেশ চলে গিয়েছে।
অন্য দিকে, নারী নির্যাতনের ঘটনা ক্রমশ অনেক বেশি হারে সামনে আসায় অনেক বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিতে চাইছে রাজ্য মহিলা কমিশন। কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “আমরা নখদন্তহীন হয়ে রয়েছি। মানবাধিকার কমিশনের মতো কোনও ঘটনার পৃথক তদন্ত বা সরকারি অফিসারদের সমন পাঠানোর অধিকার আমাদের নেই। এটা বদলানো হচ্ছে।”
মহিলা কমিশন সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কেরলের মহিলা কমিশনের মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। কেরলে মহিলা কমিশনে আলাদা এক জন উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার থাকেন। যাঁর নেতৃত্বে প্রয়োজনে কমিশন নিজস্ব তদন্ত চালিয়ে রিপোর্ট দেয়। পুলিশের তদন্তে কোনও গাফিলতি বা ভুল থাকলে সেটা তখন প্রকাশিত হয়ে যায়। সুনন্দাদেবী জানিয়েছেন, এ রাজ্যেও মহিলা কমিশনে এক জন ডিএসপি স্তরের পুলিশকর্তা, একজন ল’ অফিসার ও একজন রেজিস্ট্রার রাখা হবে। প্রয়োজনে নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের পাশাপাশি আলাদা তদন্ত চালাবে কমিশন। প্রস্তাবটি আপাতত অনুমোদনের জন্য অর্থ দফতরে গিয়েছে।
|