অতি চেনা ওষুধেই কি শেষমেশ কাবু হবে মারণ ক্যানসার, জল্পনা
হু দিনের চেনা একটা সস্তার ওষুধ। ক্যানসারের মতো মারণ রোগকে ঠেকাতে এ বার সেটাই মস্ত সহায় হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে তামাম বিশ্বের চিকিৎসক মহলে। মানবশরীরে প্রয়োগ না-হলেও গবেষণাগারে ইতিমধ্যে এর কার্যকারিতার ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি। যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-পত্রিকাগুলিও সরগরম।
ওষুধটি হল অ্যাসিটাইল সেলিসাইলিক অ্যাসিড, বা অ্যাসপিরিন। যন্ত্রণানাশক হিসেবে বিশ্ব জুড়ে ঘরে-ঘরে যার প্রভূত কদর। সম্প্রতি ‘নেচার’ পত্রিকায় এক নিবন্ধে এক দল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, এই অ্যাসপিরিনই রোজ খুব কম ডোজে দু’থেকে পাঁচ বছর টানা খেলে ক্যানসার ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। এমনকী, ক্যানসার ধরা পড়ার ঠিক পরে অ্যাসপিরিন খাওয়া শুরু করলেও রোগের বৃদ্ধি অনেকটা প্রতিহত করা যায় বলে তাঁদের দাবি।
ব্যথা ও ফোলা উপশমের পাশাপাশি অ্যাসপিরিন যে হেতু রক্তকে বেশি পাতলা রাখে, তাই হার্টের ক্ষেত্রে তার সুফল আছে। হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে অ্যাসপিরিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে দ্বিমত নেই। কিন্তু ক্যানসার প্রতিরোধের মতো ‘অসাধ্য সাধন’ কী ভাবে করতে পারে?
আশা অ্যাসপিরিন
কোথায় সম্ভাবনা: মূলত কোলোন ক্যানসারে। মলদ্বার, খাদ্যনালী, ফুসফুস, ডিম্বাশয় ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে কার্যকারিতা নিয়েও গবেষণা।
• কাদের পক্ষে ক্ষতিকর: হাঁপানি, আলসার ও ডায়াবেটিসের রোগী, গর্ভবতী মহিলা
• পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ, পেটে ঘা, বমি, কানে তালা
বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। তবে তাঁরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধিই হল ক্যানসার, এবং অ্যাসপিরিন যে ভাবেই হোক, সেই কোষবৃদ্ধিকে কিছুটা রুখে দিতে সক্ষম। সম্প্রতি ইঁদুরের উপরে গবেষণায় এর প্রমাণ মিলেছে বলে গবেষকদের দাবি। গবেষণাপত্রটি ‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ ক্যানসার’-এও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে উদাহরণ হিসেবে ১৩ হাজার ৯৯৪ জন কোলোরেক্টাল ক্যানসার রোগীর ‘কেস’ তুলে ধরা হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যাঁরা রোগনির্ণয়ের ঠিক পরেই অ্যাসপিরিন খাওয়া শুরু করেছেন, প্রচলিত অন্যান্য পদ্ধতির চিকিৎসাধীন রোগীদের তুলনায় তাঁদের শরীরে রোগের বৃদ্ধি কম।
বাজারচলতি, বহুল পরিচিত ওষুধটির মধ্যে এ হেন ‘জাদু’র আভাস পেয়ে কলকাতার চিকিৎসকদের অনেকে উৎসাহিত। ক্যানসার-সার্জন গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “গবেষণা বলছে, কোলোন ও রেক্টামের ক্যানসারকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে অ্যাসপিরিন। ইদানীং শোনা যাচ্ছে, খাদ্যনালীর ক্যানসারেও এটি উপযোগী। অভাবনীয় আবিষ্কার!” এক বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা অর্ণব গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “ওষুধটা পলিপ হওয়া ঠেকায়। আর পলিপ না-হলে কোলোন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা কমে।” চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, “মেটাস্টেসিস, অর্থাৎ এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে ক্যানসার ছড়ানোও ঠেকাতে পারে অ্যাসপিরিন।” আরজিকরের রেডিওথেরাপি’র প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও একমত। “ক্যানসার ছড়ানো রোখাটা বড় কাজ। গবেষণাগারে দেখা গিয়েছে, অ্যাসপিরিন কোষের বৃদ্ধি ঠেকাচ্ছে। আশা করা যায়, অল্প কিছু দিনে মানুষের শরীরেও এর প্রয়োগ হবে।” বলছেন তিনি।
তা হলে কি মারণ রোগ এড়াতে যে কেউ অ্যাসপিরিন ধরতে পারে?
ডাক্তারেরা একবাক্যে বলছেন, না। তাঁদের হুঁশিয়ারি: হাঁপানি বা আলসার থাকলে অ্যাসপিরিন অমৃতের বদলে বিষ হয়ে উঠতে পারে। শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণেরও সম্ভাবনা। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, সত্তরোর্ধ্বেরা নিয়মিত অ্যাসপিরিন খেলে নানা জটিলতার আশঙ্কা থাকলেও অল্পবয়সীদের ক্ষেত্রে তা মোটামুটি নিরাপদ। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দাবি: সুস্থ মানুষপঁয়তাল্লিশ বছর বয়স থেকে নিয়মিত অ্যাসপিরিন খেতে পারেন, কারণ ক্যানসারে মৃত্যুর আশঙ্কা পঞ্চাশের পরে বাড়তে থাকে।
চিকিৎসক মহলের একাংশ অবশ্য এখনই উৎসাহিত হওয়ার কারণ দেখছেন না। মানবশরীরে সফল প্রয়োগের আগে তাঁরা ক্যানসার রোধে অ্যাসপিরিনের কার্যকারিতা মানতে নারাজ। যেমন ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সৈকত গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “প্রাথমিক গবেষণায় কিছু কিছু ক্যানসারে অ্যাসপিরিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা নজরে এলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ঢের দেরি।” গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীও বিশেষ আশাবাদী নন। তাঁর কথায়, “অ্যাসপিরিন খুব কম ডোজে খেলে লিভারে বড় ক্ষতির আশঙ্কা নেই ঠিকই। কিন্তু এর প্রয়োজনীয়তাটাই আমার কাছে স্পষ্ট নয়।” কেন?
অভিজিৎবাবুর ব্যাখ্যা: পশ্চিমের দেশগুলোয় কোলোন ক্যানসার দ্রুত বাড়ছে। ওখানে যাঁদের পরিবারে কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত, অর্থাৎ যাঁরা হাই রিস্ক গ্রুপে, তাঁদের বছরে এক বার এন্ডোস্কোপি-কোলোনোস্কোপি হয়। আশঙ্কা থাকলে ডাক্তার টানা ক’বছর অ্যাসপিরিন খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। এখানে তেমন রেওয়াজ বা পরিকাঠামো কোনওটাই সে ভাবে নেই বলে তাঁর দাবি। “এখানে সময়মতো ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে পারেন ক’জন? আচমকা বিদেশ থেকে কিছু ভাবনা আমদানি করে সেটা অনুসরণ করার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।” মন্তব্য অভিজিৎবাবুর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.